যাহা বাহান্ন তাহাই তিপান্ন। যাহা ২০১২, তাহাই ২০১৩।
নতুন বছরে পড়েও ভারতীয় টেনিসে নক্ক্যরতম সেই যুদ্ধ থেকেই গেল। লি বনাম হেশ, বরং তীব্রতা আরও বাড়ল। মনে করা হয়েছিল অলিম্পিকের সঙ্গে সঙ্গেই বুঝি এই দ্বৈরথ শেষ হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় টেনিস কর্তারা এখন টের পাচ্ছেন যে শেকড় এত গভীরে যে, বিরোধ মেটা দূরে থাক, তীব্রতা আরও বেড়েছে।
রবিবার চেন্নাইয়ে ভারতীয় টেনিসকর্তারা এক বৈঠকে প্লেয়ারদের ডেকেছিলেন তাঁদের মন বোঝার জন্য। সেখানে মহেশ ভূপতি-সোমদেব দেববর্মনরাও ছিলেন। চেন্নাই ওপেন খেলার জন্য লিয়েন্ডার পেজও এখন চেন্নাইয়ে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও কর্তারা তাঁকে আনতে পারেননি। লিয়েন্ডার বৈঠকে না বসায় তাঁর পক্ষে বলার কেউ ছিল না। পুরোটাই বলতে গেলে মহেশ ভূপতি গোষ্ঠীর বক্তব্য শুনতে হয় কর্তাদের।
মহেশ সম্পর্কে কর্তারা বহু দিনই চটে রয়েছেন। অলিম্পিকে দল গঠনের সময় মহেশের কার্যত ব্ল্যাকমেলিং করা দেখে,তাঁরা তাঁকে সাসপেন্ডও করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু মহেশ কর্নাটক আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ আদায় করে নেন। কিন্তু এ বার তিনি কর্তাদের আরও আশ্চর্য করে দিয়েছেন এই বলে যে, দেশের হয়ে ফের ডেভিস কাপ খেলতে চান। অনিল খন্নাদের ধারণা ছিল মহেশ বুঝি ভারতের হয়ে আর খেলতে উৎসাহী নন। সেইমতো তাঁরা লিয়েন্ডারকে প্রাথমিক ভাবে অধিনায়ক বেছে কোরিয়ার বিরুদ্ধে দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ম্যাচের পরিকল্পনা করছিলেন। শুধু অধিনায়ক নির্বাচনটা সরকারি ভাবে করেননি। |
সোমদেবের ভলি এ বার লিয়েন্ডারকে। |
চেন্নাইয়ে গত কাল মাঝরাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে ভূপতি লবির প্লেয়াররা আবার লিয়েন্ডারের বিরুদ্ধে কাযর্ত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এ বার বিদ্রোহের মুখ ছিলেন সোমদেব দেববর্মন। সোমদেবও জানিয়ে দেন, লিয়েন্ডারের অধীনে খেলতে তিনি উৎসাহী নন। একই সঙ্গে তাঁরা কোচ নন্দন বালের পরিবর্তন চান। টেনিস কর্তারা তখন হতবাক হয়ে বলেন, তোমরা কী করে একই সঙ্গে প্লেয়ার, নির্বাচক এবং টেনিস কর্তা হতে পারো? কে ক্যাপ্টেন হবে সেটা বলে দিচ্ছো। নিজেদের নিতে হবে বলে দিচ্ছো। এমনকী কোচও ঠিক করে দিচ্ছো। সোমদেব দেববর্মন কিছু দিন আগে মহেশের কোম্পানি গ্লোবোস্পোর্টের সঙ্গে সই করেছেন। তবু তাঁর মনোভাব এত কঠোর হবে কর্তারা বোঝেননি।
নতুন এই বিদ্রোহে কিছুটা হতবাক কর্তাদের এখন মনে হচ্ছে লিয়েন্ডারকে বোধহয় ক্যাপ্টেন করা যাবে না। লিয়েন্ডারের পছন্দের ফিজিও সঞ্জয়কেও হয়তো সরিয়ে দেওয়া হবে। সম্ভবত টিমের সঙ্গে ডাক্তার হিসেবে আর বহাল রাখা হবে না লিয়েন্ডারের বাবা ভেস পেজকে। এই সব সিদ্ধান্ত যদি মহেশ শিবিরের জন্য সমঝোতা হয়, তা হলে আর একটা দিক হল টেনিস কর্তারা লিয়েন্ডারকে প্রথমে চান। মহেশকে নয়।
নির্বাচকরা আগামী ১১ জানুয়ারি দল বাছবেন। একটা সম্ভাবনা হতে পারে সেখানে লিয়েন্ডার-বিষ্ণু বর্ধন, য়ুকি ভামব্রি, এই তিন জনকে নিয়ে দল হল। নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন রইলেন সুমন মিশ্রই। কোচ রইলেন নন্দন বাল।
|
...নতুন এই বিদ্রোহে কিছুটা হতবাক কর্তাদের এখন মনে হচ্ছে লিয়েন্ডারকে বোধহয় ক্যাপ্টেন করা যাবে না... |
...মহেশ যে ভাবে জাল বিস্তৃত করেছেন, দেখে কর্তারা বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছেন। আগামী দশ দিনে মহেশ-রোহন বোপান্নারা হয়তো চাপ আরও বাড়াবেন। নতুন বছরে কী হয়, সেটা এখন দেখার। তবে কর্তারা মনস্থির করে ফেলেছেন, কোচ কিছুতেই প্লেয়ারদের কথায় বদলাবেন না... |
|
লিয়েন্ডারকে সরাসরি অধিনায়ক বাছা হল না, কিন্তু তিনিই বকলমে থাকলেন এই টিমের তেন্ডুলকর হয়ে। তবে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে তাঁর বাবাকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হল। আর একটা বিকল্প হল মহেশদের চাপের কাছে মাথা নত করা। মহেশ যে ভাবে জাল বিস্তৃত করেছেন, দেখে কর্তারা বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছেন। আগামী দশ দিনে মহেশ-রোহন বোপান্নারা হয়তো চাপ আরও বাড়াবেন। নতুন বছরে কী হয়, সেটা এখন দেখার। তবে কর্তারা মনস্থির করে ফেলেছেন, কোচ কিছুতেই প্লেয়ারদের কথায় বদলাবেন না। ভারতীয় টেনিস সংস্থার নিয়ম হল, কোচকে ডেভিস কাপার হতে হবে। য়ুকি ভামব্রির কোচ ডেভিস কাপ খেলেননি।
চেন্নাইয়ে যে দিন এই বৈঠক হচ্ছিল, সে দিনই রাতে ধোনির ভারত ম্যাচ হারে পাকিস্তানের কাছে। তারও ঘণ্টাচারেক বাদে প্লেয়ারদের সঙ্গে টেনিস কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হয়। সোমবার দুপুরে এক কর্তা বলছিলেন, “ধোনির টিমে টিম স্পিরিটের অভাব নিয়ে আপনারা এত লেখালেখি করেন। ভারতীয় টেনিস দলের কাছে ধোনিরা শিশু উপন্যাস।” |