সুবিধা থেকে বঞ্চিত চাষিরা, কর্মীসঙ্কটে বীজ নিগম
দুই মেদিনীপুরের কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে তৈরি হয়েছিল বীজ নিগম। কম খরচে কৃষকদের প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা ও উন্নতমানের বীজ তৈরি ছিল লক্ষ্য। কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করে পরিকাঠামো গড়া হলেও কর্মীসঙ্কট এবং প্রশাসনিক উদাসীনতায় কার্যত এই নিগম এখন ধুঁকছে বলে অভিযোগ। কিন্তু কেন্দ্রটি সচল করতে সরকারি পদক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন? নিগমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মনতোষ বিশ্বাস বলেন, “তীব্র কর্মী সঙ্কটই এর কারণ। বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বারেবারেই জানিয়েছি। তবু কর্মী না মেলায় সমস্যা থেকেই গিয়েছে।”
রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বীজ নিগমের দফতর রয়েছে। ১৯৮৩ সাল থেকে মেদিনীপুরেও এই কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু তখন উন্নত পরিকাঠামো ছিল না। ১৯৯৪ সালে মেদিনীপুর শহরের আবাসে বিরাট অফিস ঘর, দু’টি গুদাম ও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। ১৯৯৫ সালে ধুমধাম করে উদ্বোধনও করা হয়েছিল। তখন নিগমের কর্মী ছিল ১৬ জন। এক জন ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার, প্রোডাকশন অফিসার, মার্কেটিং ম্যানেজার, টেকনিক্যাল অফিসার, তিন জন ফিল্ড স্টাফ, দু’জন সিনিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ও এক জন জুনিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট। কিন্তু বর্তমানে নিগমের কর্মী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ছ’জন। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নিগমের কাজ বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের বীজ সরবরাহ করা। যেগুলি ডিলারের মাধ্যমে সরকারি দামে চাষিদের দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে নিজস্ব উদ্যোগে বীজ তৈরিও করবে নিগম। চাষিদের মাধ্যমেই ওই বীজ তৈরি করা হবে। এর জন্য নিগমের নথিভুক্ত চাষিও ছিল। আগে বছরে প্রায় ৫০০ টন ধান বীজ তৈরি হত। তার সঙ্গে তৈলবীজ, বাদাম-সহ বিভিন্ন বীজও তৈরি হত। কিন্তু এখন সামান্য পরিমাণ শুধু ধানের বীজই তৈরি হয়। নিগমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর মাত্র ৪০ টন বীজ তৈরি করা গিয়েছে।
১৯৯৫ সাল থেকে এই নিগমের উদ্দেশ্য ছিল ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়ানো হবে। কিন্তু ২০১২ সালে দেখা যাচ্ছে উৎপাদন বাড়ার পরিবর্তে কয়েকগুন কমে গিয়েছে। ফলে বাদাম বা তৈলবীজ তো তৈরি হচ্ছেই না, পাশাপাশি সার, অনুখাদ্যও যা সরকারি দামে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা তাও পৌঁছচ্ছে না। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, আগে এসব কাজের জন্য নিগমের নথিভুক্ত ডিলার ছিল ৫০ জন। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তারা ছড়িয়ে থাকতেন। চাষিরা সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিলারের কাছ থেকে সরকারি মূল্যে বীজ, সার ও অনুখাদ্য কিনতেন। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের ডিলারও নেই বললেই চলে। ফলে চাষিদের নির্ভর করতে হয় খোলাবাজারের ব্যবসায়ীদের উপরেই। ফলে প্রায়ই সার ও অনুখাদ্যের দাম বেশি নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। এছাড়া অনেক সময়েই উন্নত বীজের মোড়কে সাধারণ বীজ বেশি দামে বিক্রি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফা করে বলেও অভিযোগ। সেই বীজে চাষ করে ফলন কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। কিন্তু এ অবস্থা কেন? মনতোষবাবু বলেন, “আমি প্রোডাকশন অফিসার হিসাবে নিযুক্ত। আমারই দায়িত্ব ছিল বীজ উৎপাদনের। কিন্তু ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজারের পদ শূন্য থাকায় সেই দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে। কর্মীসংখ্যা কমে যাওয়ায়, প্রায় প্রত্যেককেই একাধিক দায়িত্ব সামলাতে হয়। কর্মী পেলে ফের বীজ তৈরির কাজ হবে।”
তা হলে নিগমের এখন কাজ কী? নিগম সূত্রে খবর, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা, ন্যাশনাল ফুড সিকিওরিটি মিশন প্রভৃতি সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার ও অনুখাদ্য বাজার থেকে কিনছে নিগম। দুই জেলার এই কাজেই সময় চলে যাচ্ছে কর্মীদের। ফলে চাষিদের নিশ্চিত উন্নত বীজ, সরকারি দামে সার ও অনুখাদ্য দেওয়ার লক্ষ্য থেকে নিগম লক্ষ্যভ্রষ্ট। যদিও বর্তমানে সরকারি প্রকল্পে বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করে বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয় নিগম থেকে। নিগমটি লাভে চলছে বলেও সংস্থারই এক সূত্রে খবর। তবু কেন ধীরে ধীরে কেন্দ্রটিকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, বঞ্চনা করা হচ্ছে চাষিদের সে ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.