দুর্ঘটনার জেরে হাতির মৃত্যু বাড়ছে ওড়িশার গঞ্জাম জেলায়। কখনও ট্রেনে কাটা পড়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অথবা চোরাশিকারিদের ফাঁদে পড়ে মারা যাচ্ছে এই অঞ্চলের হাতিরা। ২০১২ সালে মোট ১৭টি হাতি মৃত্যু হয়েছে এই জেলাতেই। পশুপ্রেমীরা এখন প্রশ্ন করতেই পারেন, তা হলে কি গঞ্জাম হাতিদের মৃত্যু-উপত্যকায় পরিণত হল?
২০১২-র পরিসংখ্যান বলছে, ১৭টি হাতির মধ্যে ৯টি হস্তিনী, তিনটি দাঁতাল এবং পাঁচটি হস্তি শাবক মারা গিয়েছে। এর মধ্যে ৭টি হাতির মৃত্যু হয়েছে রেল দুর্ঘটনায়।
পূর্ব ভারত থেকে দক্ষিণে চিকিৎসা করতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান ট্রেন হাওড়া-চেন্নাই করমন্ডল এক্সপ্রেস। গত কাল রাতে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল গঞ্জামের খাল্লিকোট জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। ব্রহ্মপুরের ৪০ কিলোমিটার দূরে সুবালয়ের কাছে আসতেই চেন্নাইগামী ওই এক্সপ্রেসে কাটা পড়ে ছ’টি হাতি। ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাতিগুলি। একই সঙ্গে মারা যান এক রেলকর্মীও। |
মৃত হাতির দেহ ঘিরে ভিড়। রম্ভায়। ছবি: পি টি আই। |
বন দফতর সূত্রের খবর, মৃত হাতিগুলির মধ্যে দুটি দাঁতাল ছিল। যাদের বয়স ২৫-৩০-এর মধ্যে। তিনটি হস্তিনী। যাদের ৪৫-৫০ এর মধ্যে বয়স। একটি হস্তিশাবক। একটি হস্তিনী অন্তঃসত্ত্বা ছিল। দুর্ঘটনায় গর্ভস্থ শাবকটিও বেরিয়ে এসেছে। রেল সূত্রের খবর, মৃত ব্যক্তির নাম রণজিৎ জেনা। বয়স ২৪ বছর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা বি-ওয়ান ও বি-টু-এর অ্যাটেনড্যান্ট ছিলেন তিনি। রণজিৎ জেনা কী ভাবে মারা গিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশের অনুমান, বাইরে কী ঘটছে তা চলন্ত ট্রেন থেকেই ঝুঁকে দেখতে গিয়ে ছিটকে পড়ে মারা যান রণজিৎবাবু।
খাল্লিকোট ফরেস্ট রেঞ্জের অন্তর্গত সুবালয়। খুরদা রোড ও ব্রহ্মপুরের মাঝে অবস্থিত। এই এলাকা দিয়েই প্রায়শই হাতির দল যাতায়াত করে। বন দফতর সেই কারণে সুবালয়কে ‘মাইগ্রেশন করিডর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু ‘মাইগ্রেশন করিডর’ হওয়া সত্ত্বেও এই দুর্ঘটনা কী ভাবে ঘটল? রেল দফতরের ব্যাখ্যা, কুয়াশার জন্য এমনিতেই দৃশ্যমান্যতা কম ছিল। তা ছাড়া হাতির দল যে আসতে পারে এমন খবরও পাওয়া যায়নি। এই প্রসঙ্গে বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন,“ এই এলাকা বন্য প্রাণীদের যাতায়াতের জন্য পরিচিত। সতর্ক করার জন্য আমরা রেল লাইনের ধারে ধারে সাইন বোর্ডও লাগিয়েছি। এই এলাকায় এমনিতেই তো ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারের বেশি জোরে ট্রেন চালানোর কথা নয়। সেখানে করমন্ডল এক্সপ্রেস ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে কী ভাবে চলছিল?” ওই দফতরের আর এক আধিকারিকের মন্তব্য, “ কামরায় বসে থাকা যাত্রীরাও প্রবল ঝাঁকুনির মুখে পড়েন। পর পর ছ’টি হাতির উপর দিয়ে যাওয়ায়, ট্রেনটির বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনও যাত্রীর কিছু হয়নি যদিও। তবে এ ক্ষেত্রে ট্রেনের কামরাগুলি লাইনচ্যুতও হতে পারত।”
ব্রহ্মপুর ডিভিশনের বন কর্তা সুধাংশু মিশ্র এই সূত্রে বলেন, “চিলিকা বন দফতরের রেঞ্জার পি গুরু রেলের নিয়ন্ত্রণ দফতরে জানিয়েছিলেন যে শনিবার রাতে হাতির দল নেমেছে। সব ট্রেন চালককে জানিয়ে দিতেও অনুরোধ করেছিলেন তিনি।” কিন্তু পূর্ব উপকূল রেলের মুখপাত্র আর.এন মহাপাত্র জানান,“ হাতির দল যে নেমেছে তার খবর আমরা পেয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু তখন ঘড়িতে রাত ১২টা ৪৩ বাজে। ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।” |