অবাধ কাঠপাচারে বনাঞ্চল এখন মাঠ
‘বনে থাকে বাঘ, গাছে থাকে পাখি...’ আছে? বন দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, “সে সব আমাদের বাল্যকালে থমকে গিয়েছে। এখন ‘আছে’ না বলে, ছিল বলাই শ্রেয়!” সেই সব বন-বাঘ-গাছগাছালি নিয়ে ছড়িয়ে থাকা দুই বঙ্গের বনানী হারিয়ে গিয়েছে।
দু-দশক আগে রাজ্যের সামগ্রিক আয়তনের ১৬ শতাংশ ছিল সংরক্ষিত জঙ্গল। পাচারকারী বা কাঠ-মাফিয়ার শাসনে জায়গা ছাড়তে ছাড়তে সেই বনাঞ্চল এখন সাকুল্যে ১৩ শতাংশের কিছু বেশি।
উত্তরবঙ্গের বক্সা থেকে চিলাপাতা বা দক্ষিণের শাল-মহুয়ার জঙ্গলে গত কয়েক বছর ধরে নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে তাদের চেনাই দায়। তার উপরে ক্ষমতা বদলের পরে, নতুন জমানায় রাজকোষে হাঁড়ির হাল হওয়ায় বন সংরক্ষণের ন্যূনতম উপায়গুলিও আর নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গল থেকে চুরি করা কাঠ নিশ্চুপে পাড়ি দিচ্ছে সীমান্ত উজিয়ে বাংলাদেশ, কখনও বা নেপাল, ভুটান। ছবিটা কম-বেশি একই দক্ষিণবঙ্গেও।
উত্তরে আন্তঃরাজ্য কাঠ পাচার চক্রের সক্রিয় বেশ কিছু দিন ধরে।সম্প্রতি বন দফতরের হাতে তার স্পষ্ট কিছু প্রমাণ এসেছে। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন তা মেনেও নিয়েছেন। বন দফতরের ‘হেড অফ ফরেস্ট’ সম্পদ সিংহ বিস্তকে বিশদে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দেন তিনি। বনমন্ত্রী বলেন, “চেষ্টা করলে কাঠ পাচার কমানো যায়। কিন্তু, ভিনদেশে পাচার রুখতে গেলে কেন্দ্রের সাহায্য দরকার। সীমান্তরক্ষী বাহিনী সজাগ হলে কাজ সহজ হবে।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের দিনহাটার বড়শোলমারির বাত্রীগছ নামে এক বাংলাদেশি ছিটমহলে গিয়ে বন কর্তারা দেখেছেন, সেখানে দু’টি করাতকল গড়ে উঠেছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে চোরাই কাঠ নিয়মিত সেখানে আসছে। পুলিশ নিয়ে সেই ছিটমহলে হানা দিলেও আইনি বাধায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেননি বনকর্মীরা। কেন? আইন বলছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকলে ছিটমহলে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। এমনকী বাজেয়াপ্তও করা যায় না কিছুই।

পাচারের রুট
ডুয়ার্স থেকে নদীপথে বাংলাদেশের ভুরুঙ্গামারি, কুড়িগ্রাম, লালমণিরহাট
তরাই থেকে মেচি পেরিয়ে নেপাল। ডুয়ার্স থেকে সড়ক পথে ভুটান।
দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে বন-পথে ঝাড়খণ্ডে।
কেন বাংলাদেশে?
উত্তরবঙ্গের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি দাম মেলে। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে
রংপুরের দূরত্ব প্রায় ৭০০ কিমি। মায়ানমার, মালয়েশিয়া থেকে কাঠ আনার খরচ বেশি।

কিন্তু প্রশ্ন হল, চোরাই কাঠ উত্তর বা দক্ষিণের বনাঞ্চল থেকে বের হয়ে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে কী করে? সংরক্ষিত জঙ্গলে দিবা-রাত্র প্রহরার থাকার কথা। বন দফতরের একটি সূত্র বলছে, অর্থাভাবে বন-প্রহরার ব্যবস্থাই করা যাচ্ছে না। বন দফতরের এমনিতেই কর্মী সংখ্যা কম। সাত বছর থমকে রয়েছে নিয়োগ। বন প্রহরার দায়িত্ব তাই সামাল দেওয়া হত বন সুরক্ষা কমিটি বা যৌথ বন সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের নিয়োগ করে। দৈনিক ১৩০ টাকায় এত দিন এ কাজ তারাই করে আসছিল। কিন্তু গত ছ’মাস ধরে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা ওই কর্মীদের মাইনে দিতে পারছে না বন দফতর। এক কর্তার কথায়, “বন প্রহরা তাই শিকেয়।” বনকর্মীদের একাংশের পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না বন দফতর।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলে কাঠচোরদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। তাদের দাপটে শিলিগুড়ির লাগোয়া বৈকুণ্ঠপুরের ঠাসবুনোট জঙ্গল এখন ফাঁকা। বক্সা, জলদাপাড়া, চিলাপাতার জঙ্গলেও থাবা বসিয়েছে তারা। ভুটান লাগোয়া বান্দাপানি এলাকার বাসিন্দারা জানান, দেড় দশকে ওই এলাকায় এত পরিমাণ কাঠ চুরি হয়েছে যে কিছু বনাঞ্চল মাঠের চেহারা নিয়েছে। নেপাল সীমান্তের নকশালবাড়ি জঙ্গলের কাঠ কেটে মেচি নদী পেরিয়ে নেপালে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিরন্তর ঘটছে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি, ঝালদার জঙ্গলের বেশ কয়েকটি এলাকায় কাঠ কেটে বন-পথেই তা পাচার হয়ে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডে।
আর বন দফতর? একটু ঘুরিয়ে ছড়াটাই আওড়াচ্ছে,
‘বনে ছিল বাঘ, গাছে ছিল পাখি...’

(তথ্য সহায়তা: রাজু সাহা ও অরিন্দম সাহা)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.