সম্পাদকীয় ২...
দ্বিপাক্ষিক
রাশিয়া ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এখন এক হাজার কোটি ডলার। তিন বছরের মধ্যে অঙ্কটিকে দুই হাজার কোটি ডলারে উত্তীর্ণ করিবার পরিকল্পনা চলিতেছে, যদিও এত দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব কি না তাহা লইয়া সংশয় আছে। এই অবধি শুনিয়া মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, দুই পুরাতন বন্ধুর অর্থনৈতিক লেনদেন চমৎকার বাড়িতেছে। কিন্তু আর দুইটি অঙ্ক প্রসঙ্গত লক্ষণীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ এখন মোটামুটি দশ হাজার কোটি ডলার, চিনের সহিত প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ বাণিজ্যিক সহযোগী হিসাবে রাশিয়া ভারতের নিতান্ত দ্বিতীয় সারির সঙ্গী। ইহা অস্বাভাবিক নহে। যে যুগে রুশ-ভারত বাণিজ্য এ দেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাহা হইতে ভারত সম্পূর্ণ সরিয়া আসিয়াছে, রাশিয়াও অনেকাংশে। দুই দেশই এখন বাজার অর্থনীতির দ্বারা চালিত। কিন্তু দুই রাষ্ট্রের চালকরা, বিশেষত মস্কোর অধিপতিরা এই পরিবর্তিত বাস্তবের সহিত আপন বাণিজ্য নীতির সামঞ্জস্য বিধান করেন নাই, বাজারচালিত বাণিজ্যের প্রসারে রাষ্ট্রের যে সহযোগীর ভূমিকা পালন করা দরকার, তাহা এখনও গড়িয়া ওঠে নাই। কিন্তু তাহা অপেক্ষাও বড় কথা, বাজার অর্থনীতির মাপকাঠিতে দুই দেশের বাণিজ্যিক প্রসারের সম্ভাবনাও সীমিত। প্রতিরক্ষা, পেট্রোলিয়ম এবং টেলিকমিউনিকেশনস-এর মতো কয়েকটি ক্ষেত্রেই সেই সুযোগ সীমিত। ২০১২ সালের শেষ লগ্নে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সংক্ষিপ্ত নয়াদিল্লি সফর যে প্রায় অলক্ষ্যেই সম্পন্ন হইল, তাহার প্রধান কারণ এই বাস্তবেই নিহিত।
তাহার অর্থ এই নয় যে, দিল্লির নিকট রাশিয়া আপন গুরুত্ব হারাইয়াছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে মস্কো এখনও ভারতের অন্যতম প্রধান আশ্রয়। পারমাণবিক বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও রাশিয়ার নিকট ভারতের অনেক কিছুই পাওয়ার রহিয়াছে, কুড়ানকুলামে দুইটি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে রাশিয়ার প্রস্তাবিত ভূমিকা এই প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেই কারণেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি লইয়া জমিয়া ওঠা অনিশ্চয়তা রাশিয়ার ক্ষোভ উৎপাদন করিয়াছে। একই ভাবে, পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত নীতির প্রশ্নেও দুই পক্ষের মনোমালিন্য আছে। টুজি স্পেকট্রাম সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে রুশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি সিস্টেমা যে সমস্যায় পড়িয়াছে, তাহাও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পথে একটি কণ্টকস্বরূপ। এই ধরনের সমস্যাগুলির সমাধান করিতে চাহিলে দুই দেশের রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন হয়, দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে তাহার অভাব আছে। পুরানো মিত্রতা এখন অতীত, কিন্তু বহুমেরু দুনিয়ার নূতন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সহিত সম্পর্কের প্রসার ভারতের নিজস্ব স্বার্থেই প্রয়োজনীয়। সেই সম্পর্ককে ক্রমশ অর্থনীতির ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে, কিন্তু সেই পর্বান্তরের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০০০ সালে দুই দেশের রণকৌশলগত চুক্তি সম্পন্ন হইয়াছিল, তেরো বছরে তেরোটি শীর্ষবৈঠক হইয়াছে, কিন্তু বৈঠকের সংখ্যা দিয়া সম্পর্কের উন্নতি সূচিত হয় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.