|
|
|
|
নিরপরাধ ছেলেকে দেখতে উদ্গ্রীব বাবা |
সাবির ইবন ইউসুফ • শ্রীনগর |
ষোলো বছর। পাক্কা ষোলো বছর কাছে ছিল না ছেলেটা। সময় অবশ্য বৃদ্ধ বাবার স্মৃতি থেকে নিজের ‘নির্দোষ’ ছেলেকে মুছে দিতে পারেনি। আর তাই ষোলো বছর পরে দিল্লি হাইকোর্ট যখন লাজপত নগর বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত মহম্মদ আলিকে মুক্তি দিল, বাবার স্নেহ আর বাঁধ মানেনি। এত দিন তিনি জানতেন, এখন তামাম ভারত জানে, তাঁর ছেলে নিরপরাধ। আনন্দে চকচক করে ওঠে ৭৬ বছরের হাজি শের আলি ভাটের চোখ।
কিন্তু পর মুহূর্তেই কালো মেঘের ছায়া। হাজারো প্রশ্ন, অভিমান, অভিযোগ ফুটে ওঠে বৃদ্ধের মুখে। ষোলো বছর? এত দিন সময় লাগল সুবিচার পেতে? যে আইনব্যবস্থার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন শ্রীনগরের রাইনাওয়ারির এই প্রবীণ বাসিন্দা, সেই ব্যবস্থা শেষমেশ সুবিচার দিল। কিন্তু পরিবর্তে কেড়ে নিল তাঁর ছেলের জীবনের ষোলোটা বছর। প্রশ্ন করেন হাজি, “ফিরিয়ে দিতে পারবেন সময়টা?” নিজের মনে হিসেব কষে চলেন বৃদ্ধ যখন পুলিশ জেলে পুরেছিল তখন মহম্মদের বয়স ছিল ২৮। তা হলে এখন ৪৪ হবে। অর্থাৎ প্রায় প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাঁর আদরের ছেলে জেলের বাইরে নতুন জীবন শুরু করতে চলেছে।
এই ষোলো বছরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজির পরিবারের উপর দিয়েও বয়ে গিয়েছে ঝড়। আগে মহম্মদই ছিল গোটা পরিবারের মেরুদণ্ড। ১৯৯৬ সালে কাঠমাণ্ডু থেকে তাঁকে গ্রেফতার করার পরে ভাট পরিবারের কার্পেটের ব্যবসা লাটে ওঠে। শুরু হয় চূড়ান্ত অর্থকষ্ট। অভিমানে বলে ওঠেন বৃদ্ধ, “কেউ আমাদের দেখতে আসেনি। আমরাও কারও কাছে যাইনি।” একই সঙ্গে শুরু হয় সামাজিক ‘নির্যাতন’। প্রশ্ন, সন্দেহ এক সন্ত্রাসবাদীর বাবা হওয়ার অপরাধে যা যা পাওনা ছিল, সবই পান তিনি। কাতরোক্তি করে ওঠেন বৃদ্ধ, “ছেলে জঙ্গি। তাই আমাকে হজে যাওয়ার পাসপোর্টও দেয়নি সরকার।”
তবে এত নির্যাতন সত্ত্বেও ছেলেকে বরাবর নিরপরাধ বলেই বিশ্বাস করে এসেছেন হাজি। সেই বিশ্বাস গেঁথে দিয়েছেন নাতি-নাতনিদের মনেও। না মহম্মদের ছেলেমেয়ে নয়, এরা মহম্মদের ভাইয়ের সন্তান। বৃদ্ধ দাদু যাদের গল্প শুনিয়েছেন, বিমানবন্দরে কাজ করেন তাদের ‘মহম্মদ চাচা’। সত্য গোপন করেছেন হাজি। ভয়, পাছে তার নিরপরাধ ছেলেকে ভুল বোঝে নাতি-নাতনিরা।
তবে সব পেরিয়ে এখন তাঁর একটাই আবেদন, মুক্তির পরের জীবনটা সহজ করে দিতে সরকার যেন তাঁর ছেলেকে সাহায্য করে। অর্থাৎ উপযুক্ত ‘পুনর্বাসন’-এর আবেদন বৃদ্ধের।
এর সঙ্গে অবশ্য আরও একটা ছোট্ট আশা আছে তাঁর। বলেও ফেললেন সেটা “আমাকে হজে যাওয়ার অনুমতি দিন।” ষোলো বছরের বিশ্বাসের জয় হয়েছে। কিংবা বিশ্বাসের বুনিয়াদটা হয়তো আরও পুরনো। সেই বিশ্বাসের জয়ের জন্য ‘আল্লা’কে এ বার ধন্যবাদ জানাতে চান হাজি।
আল্লার দুয়ারে যেতে জঙ্গির বাবা বলে এ বার আর কেউ তাঁকে রুখতে পারবে না সেই বিশ্বাসেই বিশ্বাস রাখছেন তিনি। |
|
|
|
|
|