|
|
|
|
বিতর্ক এড়াতে নগদ বাদ নামে |
সরাসরি ভর্তুকি হস্তান্তর শুরু আজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা নির্বাচনের সব থেকে বড় হাতিয়ারে শান দিতে নামছে মনমোহন সরকার তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব।
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই দেশের ২০টি জেলায় সরাসরি নগদ হস্তান্তরের প্রকল্প চালু হচ্ছে। স্কলারশিপ থেকে বার্ধক্য ভাতার মতো ৭টি প্রকল্পে সরকারের দেয় অর্থ সরাসরি সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হবে।
লোকসভা ভোটে মনমোহন সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্যে এই নগদ ভর্তুকির প্রকল্পকেই যে সব থেকে বড় হাতিয়ার করা হবে, রাহুল গাঁধীও তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, সরাসরি অর্থ হস্তান্তরের সুবিধাগুলি নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার করতে হবে। যার মূল মন্ত্র হবে ‘আপকা প্যায়সা, আপকে হাত।’ এ ব্যাপারে গোড়া থেকেই বেশ সতর্ক ভাবে এগোচ্ছে সরকার। যাতে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি কোনও ভাবেই নেতিবাচক প্রচারে যেতে না পারে। এবং সে কারণেই সরকারি ভাবে এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হচ্ছে, সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর, ইংরেজিতে ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার। প্রথমে কিন্তু ঠিক ছিল, প্রকল্পের নাম হবে সরাসরি নগদ হস্তান্তর (ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফার)। কিন্তু বিজেপি অভিযোগ তোলে, এ হল ভোটারদের ঘুষ দেওয়ার সমান। টাকা দিয়ে ভোট কিনতে সরকার নগদ অর্থ হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।
সেই কারণেই কি শেষ মুহূর্তে প্রকল্পের নাম বদল?
এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ব্যাখ্যা, “আসলে সব সুবিধা অর্থ দিয়ে মাপা যায় না। সে জন্যই এই নামকরণ।” তবে গ্রামে গ্রামে যে একে ‘আপকা প্যায়সা, আপকে হাত’ স্লোগানেই প্রচার হবে, তা জানিয়ে দিয়েছেন চিদম্বরম। তাঁর কথায়, “এতেই সাধারণ মানুষ সহজে প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝতে পারবেন।” এ ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যা, এখন বার্ধক্য ভাতা বা স্কলারশিপ অর্থ মন্ত্রক থেকে মঞ্জুর হয়ে গেলেও সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। তার জন্য সরকারি দফতরে-দফতরে ঘুরতে হয়। থাকতে হয় অপেক্ষায়। হকের টাকা পেতেও সরকারি কর্মীদের হাতে গুঁজে দিতে হয় ঘুষ। নতুন ব্যবস্থায় এই সব কোনও অসুবিধা থাকবে না। নির্দিষ্ট দিনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পুরো টাকা পৌঁছে যাবে।
এই প্রকল্পে কোথাও কোনও গাফিলতি ধরা পড়লেই বিজেপি যে খড়্গহস্ত হবে এবং এই প্রকল্প নিয়ে জোরদার নেতিবাচক প্রচারে ঝাঁপাবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটে এই প্রকল্পকে হাতিয়ার করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে দলকে। সরকার সে কারণেই সতর্কতার সঙ্গে ধাপে ধাপে এগোতে চাইছে। প্রথমে ঠিক ছিল, ২০১৩-র প্রথম দিন থেকেই ৪৩টি জেলায় এই প্রকল্প চালু হবে। কিন্তু সব জেলায় এখনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায়, অর্থ মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রথমে ২০টি জেলায় এবং তার পরে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ধাপে ধাপে আরও ২৩টি জেলায় এই প্রকল্প চালু করা হবে। মোট ২৬টি প্রকল্পে সাধারণ মানুষকে যে সব ভাতা, ভর্তুকি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তা এই প্রকল্পে সামিল করা হচ্ছে। চিদম্বরম বলেন, “এর পরেও ছোটখাটো কোনও অসুবিধা দেখা দিতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এই প্রকল্পকে আগেভাগেই দোহাই সফল বা ব্যর্থ বলে দেবেন না।” আধার-কার্ড সবাই পাননি। তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই অবস্থায় আধার-কার্ড না থাকলেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়বে। এবং বিনা আধার-কার্ডে সে টাকা তুলতেও অসুবিধা হবে না। তবে চিদম্বরম এ দিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, এখনই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে খাদ্য, সার বা রান্নার গ্যাস, ডিজেল, কেরোসিন বাবদ ভর্তুকির টাকা সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্পের আওতায় আনার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই। তাঁর যুক্তি, এই সব ভর্তুকি অনেক মানুষের কাছে পৌঁছয়। তাই এই সব ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থা চালু করার জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। |
|
|
|
|
|