বর্ষশেষের উষ্ণতায় সন্ধ্যা থেকেই ভিড় জমল ঝলমলে পার্ক স্ট্রিটে। উঠে এল দিল্লি-বারাসত কাণ্ডের প্রতিবাদও। সব মিলিয়ে সুখ-দুঃখ মিলেমিশে নতুন বছরের পথে পা বাড়াল কলকাতা।
সদ্য ঘটে যাওয়া দিল্লি-কাণ্ড ও কনকনে ঠাণ্ডা, দুইয়ের দাপটে বড়দিনে মাঝরাতের পর সে ভাবে রাস্তায় ছিলেন না সাধারণ মানুষ। তবে, সোমবার বেশ রাত পর্যন্তও পথে ছিলেন বহু মানুষ। বেশি রাতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপত্তার হাল পরিদর্শনে বেরোন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা-সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা। কলকাতা পুলিশের হিসেবে, রাত ন’টা পর্যন্ত অন্তত
হাজার পাঁচেক লোক পার্ক স্ট্রিট
চত্বরে এসেছিলেন।
দিল্লি-বারাসত কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এ বার লোককে অতিরিক্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি, তাল দিয়েছে আবহাওয়াও। বাংলাদেশের ঘূর্ণাবর্ত ও সক্রিয় উত্তুরে হাওয়ার জোড়া ফলায় বড়দিনের হাড় কেঁপে গিয়েছিল মহানগরের। বড়দিনের পরপরই শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছিল দক্ষিণবঙ্গ। কিন্তু সেই ঘূর্ণাবর্তটি উধাও হয়েছে। দিন কয়েক আগে কাশ্মীরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ধার দাপটে গতি থমকেছে উত্তুরে হাওয়ারও। |
যার ফলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। যদিও হাওয়া অফিসের খবর, বর্ষশেষের দিন শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অবশ্য বড়দিনের চেয়ে কম ছিল। কিন্তু দিনের তাপমাত্রা বেশি থাকায় তা মালুম হয়নি। দাপট ছিল না উত্তুরে হাওয়ারও। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি কম। আলিপুরের এক আবহবিদ জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার বছরের প্রথম দিনেও আবহাওয়া একই রকম থাকবে।
ঝলমলে রোদের দেখা মেলায় সকাল থেকেই ভিড় জমছে দ্রষ্টব্য জায়গাগুলিতে। চিড়িয়াখানা, নিকো পার্ক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ছিল ঠাসাঠাসি ভিড়। বিকেল থেকে ভিড় জমে মিলেনিয়াম পার্ক, প্রিন্সেপ ঘাট-সহ গঙ্গার তীরে। সন্ধ্যা থেকেই সেই ভিড় সরে আসে পার্ক স্ট্রিটের দিকে। এক দিকে আনন্দে মানুষ পার্ক স্ট্রিটের দু’দিক থেকে ঘুরে বেড়িয়েছেন। অন্য দিকে এক দল তরুণী জড়ো হয়েছিলেন দিল্লি-বারাসত কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে। |
মোমবাতি হাতে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবিও তোলেন তাঁরা। ধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিল হয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ শহরের অন্যান্য জায়গাতে। দিল্লি কাণ্ডের কথা মাথায় রেখে বর্ষবরণের উৎসব বাতিল করেছে বিভিন্ন সরকারি দফতরও।
লালবাজারের কর্তাদের দাবি, এ বছর প্রায় তিন হাজার পুলিশ পার্ক স্ট্রিটে মোতায়েন করা হয়েছে। হাজির ছিলেন আইপিএস কর্তারাও। পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু পার্ক স্ট্রিট নয়, কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল। বেহালা ও পর্ণশ্রী এলাকায় বিভিন্ন পার্কিং লটে আলো লাগানো হয়েছে। অলিগলিতে ছিল সাদা পোশাকের পুলিশও। মহিলাদের উপরে অপরাধের ঘটনা রুখতে সম্প্রতি লালবাজারের ক্রাইম কনফারেন্সে প্রত্যেক ডিভিশনে দু’টি করে বিশেষ দল গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। এ দিন সন্ধ্যা থেকেই ওই দলগুলিকে রাস্তায় নামানো হয়। পার্ক স্ট্রিট ও নিউ মার্কেট চত্বরের পানশালাগুলির উপরে নজরদারি চালিয়েছেন গুণ্ডাদমন শাখার অফিসারেরা। পানশালার ভিতরে ও ভিড়ের মধ্যেও সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীরা মিশে ছিলেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর। |