বাদ সাধল ইলেকট্রো মেডিক্যাল
চার সরকারি সংস্থা গোটানোর প্রক্রিয়া থমকে গেল রাজ্যে
প্রায় বন্ধ চার সরকারি সংস্থা গোটাতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেও পিছিয়ে আসছে রাজ্য।
রুগ্ণ সংস্থার পিছনে সরকারি খরচ বন্ধের ওই সিদ্ধান্তে বাদ সাধছে নামমাত্র ব্যবসা করা ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে আগামী অর্থবর্ষে ১৪ কোটি টাকার ব্যবসা করার গাজর ঝুলিয়েছে তারা। কিন্তু আদৌ কী ভাবে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সংস্থার পক্ষে সম্ভব, তার কোনও হদিস এখনও নেই বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (নিসকো), লিলি বিস্কুট, নিও পাইপস এবং ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ওই চার সংস্থাকে প্রথমে একটি পরিচালন কর্তৃপক্ষের আওতায় আনার কথা ছিল। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে যে ৪২০ জন কর্মী রয়েছেন, তাঁদের বিভিন্ন সরকারি দফতরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা হচ্ছিল। যাঁরা রাজি হবেন না, তাঁদের আগাম অবসরের সুযোগ দেওয়ার কথা। রাজ্যের ধারণা ছিল, এতে সরকারি ভাঁড়ার থেকে ব্যয়সঙ্কোচ যেমন সম্ভব, তেমনই মোটা আয়ের পথ খুলবে চার সংস্থার জমি (সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ একর) ও সম্পত্তি থেকে।
কিন্তু আপাতত পরিকল্পনা রূপায়ণের পথে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে ইলেকট্রো মেডিক্যাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, গোটানোর প্রক্রিয়া ঠেকাতে একটি নয়া ব্যবসায়িক প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সেখানে ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে তারা ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৪ কোটি টাকা। ২০১৪-’১৫ সালে ১৫ কোটি ও ২০১৫-’১৬-তে ২০ কোটি ব্যবসা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থা। সংস্থার এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে রাজ্যও।
গত সপ্তাহে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন সংস্থার তিনটি শ্রমিক সংগঠনের সদস্য। ইউনিয়নের দাবি, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ ও এক্স-রে ফিল্ম সরবরাহ বাবদ রাজ্যের কাছে ৬ কোটি টাকা পাওনা সংস্থার। তার মধ্যে তিন কোটি টাকা শীঘ্রই মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। বকেয়া টাকা ও সরকারি সহায়তা পেলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে বলেই দাবি করছেন সংস্থার কর্মীরা।
কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা আদৌ কতটা বাস্তবসম্মত বা কী ভাবে তা পূরণ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। কারণ, ইলেকট্রো মেডিক্যালের দু’টি কারখানাতেই উৎপাদন প্রায় বন্ধ। বি টি রোডে এক্স-রে ফিল্ম ও মেশিন তৈরি করত সংস্থা। কিন্তু ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পারায় সেই কারখানা এখন কার্যত বন্ধ। যদিও সংস্থার দাবি, সরকারি সহায়তা পেলে এখনই মেশিন উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে তাদের। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে এই প্রতিযোগিতা যে কতটা অসম, তা স্পষ্ট কোডাক-এর ভবিতব্য থেকেই। এখন ছবি তোলার ফিল্ম তৈরি বন্ধই করে দিয়েছে এক সময়ে এ ক্ষেত্রে পয়লা নম্বর এই সংস্থা। এক্স-রেও প্রযুক্তি হিসেবে ক্রমশ সেই ডিজিটাল-কেই আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরছে। কমে আসছে ফিল্মের ব্যবহার।
শুধু প্রযুক্তি নয়। এক্স-রে ফিল্ম সরবরাহের ব্যবসায় সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তার বেহাল আর্থিক দশাও। ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে সব মিলিয়ে ৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ইলেকট্রো মেডিক্যাল। যার মধ্যে ৪ কোটিই এসেছে কোডাক ও ফুজির কাছে কেনা ফিল্ম হাসপাতালে সরবরাহ করে। কিন্তু টাকা বকেয়া থাকায় ধারে আর মাল দিতে নারাজ ওই দুই সংস্থাই। ফলে এক্স-রে ফিল্ম কেনাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাকি রয়েছে ছোট ‘ভেন্ডর’দের টাকাও। সব মিলিয়ে বকেয়ার অঙ্ক ৩ কোটিরও বেশি। তাই এই অবস্থায় কী ভাবে তারা ফিল্ম বেচে ঘুরে দাঁড়ানোর দিশা খুঁজে পাবে, তা স্পষ্ট নয় অনেকের কাছেই।
তথৈবচ অবস্থা সল্টলেক সেক্টর ফাইভে ইলেকট্রো মেডিক্যালের ‘ব্লাড ব্যাগ’ তৈরির ইউনিটেও। কর্মীদের অভিযোগ, আড়াই কোটি টাকা দিয়ে কেনা বিদেশি যন্ত্র খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ তা মেরামতের জন্য বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই রাজ্য-সহ সারা দেশে ব্লাড ব্যাগের চাহিদা সত্ত্বেও ব্যবসা বন্ধ।
যে-সংস্থার দু’টি কারখানা ও আর্থিক অবস্থার এই হাল, কোন জাদুতে তারা এক বছরের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি ব্যবসা করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল। প্রশ্ন উঠছে, ফি-মাসে ৩০ লক্ষ টাকার বেতন মিটিয়ে সংস্থা আদৌ কতটা মুনাফার মুখ দেখতে পারবে, তা নিয়েও। সমস্যা মেটাতে আপাতত ইলেকট্রো মেডিক্যালকে বাদ দিয়ে অন্য তিন সংস্থা গুটিয়ে নেওয়ার জন্য পৃথক পরিকল্পনা করা হবে কি না, তা-ও এখনও চূড়ান্ত নয় বলে শিল্প পুনর্গঠন দফতর সূত্রে খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.