নিজস্ব সংবাদদাতা • মাড়গ্রাম |
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের পর এ বার রামপুরহাট ২। ছাত্র-যুব উৎসবকে ঘিরে ‘আমরা-ওরা’। নিজের এলাকার ওই উৎসবে আমন্ত্রণই পেলেন না খোদ বিধায়ক!
আগেই উৎসব কমিটিতেও ঠাঁই পাননি স্থানীয় হাঁসন বিধায়ক অসিত মাল। উদ্বোধনেও আমন্ত্রণ পেলেন না তিনি। পরিবর্তে কমিটির পৃষ্ঠপোষক পাশের রামপুরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধকও তিনিই! আমন্ত্রণ না জানানোর কথা স্বীকার করেও ব্লক প্রশাসনের অবশ্য যুক্তি, ছাত্র-যুব উৎসবকে ঘিরে যা কিছু হয়েছে, সরকারি ‘গাইড লাইন’ মেনেই। জেলায় গত শনিবারই ‘আমরা-ওরা’র অভিযোগ এনে নলহাটি ২ ব্লকের ছাত্র-যুব উৎসব বয়কট করেছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। তার পরে একই উৎসব ঘিরে ফের বিতর্ক।
সোমবার ওই উৎসবের উদ্বোধনে অবশ্য পৌঁছননি আশিসবাবু। কেন এলেন না জানতে চাইলে কোনও মন্তব্যও করতে চাননি। তবে নিজের ক্ষোভ গোপন রাখেননি অসিতবাবু। হাঁসনের কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, “এমন ঘটনা একেবারেই অভিপ্রেত নয়। যাঁরা ‘দলতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র চাই’ বলে ক্ষমতায় এলেন তাঁরাই এখন এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানোর সৌজন্যটুকুও দেখাচ্ছেন না! এটা এক ধরনের দ্বিচারিতার সামিল।” তাঁর দাবি, রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই এমন নজির দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে দলের পক্ষে বিধানসভার আগামী বাজেট অধিবেশনে জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয় বিধায়কই কেন ডাক পেলেন না?
রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকারের নির্দেশ মেনেই সব কিছু করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “বিডিও-র কাছে উৎসবের খরচ বাবদ বরাদ্দ টাকা এসেছিল। সেই অনুযায়ী আমার মাধ্যমেই টাকা খরচ হচ্ছে। এই উৎসব কমিটির তালিকার ব্যাপারে ব্লকের যুব আধিকারিকই বলতে পারবেন।” ওই ব্লকের ওই পদে আছেন পাশের ব্লকের (রামপুরহাট ২) ব্লক যুব আধিকারিক মিহিরকুমার দাস। তিনি বলেন, “গত বছরও ওই ব্লকের ছাত্র-যুব উৎসবের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্থানীয় বিধায়কই। এ বারে রাজ্য যুবকল্যাণ দফতর থেকে পাঠানো গাইড লাইন অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনেই সংশ্লিষ্ট দফতরের (যুব কল্যাণ) মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কেই উৎসবের পৃষ্ঠপোষক ও উদ্বোধক করা হয়েছে। আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। উৎসব কমিটিতে কেন থাকবেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিই? এ বিষয়ে মুখে খোলেননি জেলার কোনও সরকারি আধিকারিকই। শুধু বিধায়কই নন, দফতরের উৎসব থেকে বাদ রাখা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিকেও। তা নিয়ে মুখ খুলেছেন রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের সুপর্ণা কোনাইও। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল প্রকাশ্যেই দলতন্ত্রের রাজনীতি করছে। আমরা পঞ্চায়েত সমিতির ২১ জন সদস্য ওই উৎসব বয়কট করছি।”
বীরভূম জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি ফরওয়ার্ড ব্লকের নিতাই মাল ওই এলাকারই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এলাকার উৎসবে আমন্ত্রণ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, “নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে তৃণমূল সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করছে। সরকারি অনুষ্ঠানকেও তারা নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে।” সমগ্র বিষয় নিয়ে আশিসবাবু অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলের রামপুরহাট ২ ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “আমি বিষয়টি জানি না। তবে যদি এ রকম হয়ে থাকে তা হলে ঠিকই হয়েছে। সিপিএম-কংগ্রেস পরস্পরের পরিপূরক। তাদের না ডাকাই উচিত।” |