আদালত হতভম্ব। বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে হো হো করে হাসছেন প্রবাসী বাঙালি সুনন্দ সেন-হত্যায় অভিযুক্ত বছর একত্রিশের তরুণী।
হাসতে হাসতে এরিকা মেনেনডেজ বলছেন, “কোনও প্রশ্নই নেই। আমার মনে হয়েছিল এটা একটা দারুণ ব্যাপার, তাই ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলাম ট্রেনের সামনে।” ধমক দিলেন বিচারপতি। এরিকার আইনজীবীকে ডেকে বললেন, “আপনার মক্কেলকে হাসি থামাতে বলুন।”
পরে এরিকা ফের বলেন, “ওকে মুসলিম ভেবেই ট্রেন লাইনে ফেলে দিয়েছিলাম। আমি হিন্দু-মুসলিমদের ঘৃণা করি। ২০০১-য় ওরা টুইন টাওয়ার ধ্বংস করে দেওয়ার পর থেকেই আমি ওদের মেরে যাচ্ছি।” এরিকা এ-ও বলে, “আমার মনে হয় না অনুতপ্ত হওয়ার মতো কিছু আছে। আমি যা করেছি, সেটা করেছি।” সে জানায়, ঘটনার দিন সে তার প্রেমিকের সঙ্গে বেশ খানিক ক্ষণ সময় কাটায়। এর পর টাইম স্কোয়ারে যায়। এ সময় সে মাদকও নেয়।
এরিকার আইনজীবী ইপারসনের বক্তব্য, এরিকার সঙ্গে তিনি যখন আলাদা ভাবে কথা বলেছিলেন, তখনও তার হাবভাব, অঙ্গভঙ্গি একই রকম ছিল। এরিকার অতীত অবশ্য অন্য কথা বলছে। গত বারো বছর ধরে সে বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছে। তার মধ্যে একই সঙ্গে দু’ধরনের সত্তা কাজ করে। |
পুলিশি প্রহরায় ধৃত তরুণী এরিকা মেনেনডেজ। ছবি: এপি। |
অন্তত ১৪ বার পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে সে। সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে এর আগেও তিন বার তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এবং তাঁরা হিন্দু-মুসলিমও ছিলেন না। বহু বছর নিউ ইয়র্কের মানসিক হাসপাতালে ভর্তি ছিল এরিকা। শহরের দু-দু’টো হাসপাতালের মনোবিদেরা দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা করেছিলেন। সতর্ক করে দিয়েছিলেন বাড়ির লোকেদেরও।
২০০৩ সালেও সে ড্যানিয়েল কনলিস্ক নামে এক বয়স্ক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে। সুনন্দর ঘটনা শুনে ড্যানিয়েল আজ বলেন, “সে দিন রক্তে ভেসে যাচ্ছিল আমার সারা শরীর। কী বীভৎস চিৎকার করছিল মেয়েটা।” এর কয়েক মাস পরেই অন্য একটি লোককে পাথর ছুড়ে মারে সে। কোকেন রাখা, ক্রেডিট কার্ড চুরির মতো অপরাধেও গ্রেফতার করা হয় তাকে।
মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত সে। ফের ফিরে আসত। ২০০৫ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এরিকার বাড়ি থেকে অন্তত পাঁচ বার পুলিশের কাছে ফোন যায়। এরিকাকে সামলানো যাচ্ছে না, সাহায্য চাই।
এখন প্রশ্ন উঠছে, মানসিক ভারসাম্যহীন, মাঝেমধ্যেই হিংস্র হয়ে ওঠে, এমন এক জন রোগিণী কী ভাবে খোলা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে? দেশের মানসিক হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থা এবং নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে ওবামা প্রশাসন।
আমেরিকার ‘মেন্টাল ইলনেস পলিসি অর্গানাইজেশন’-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ডি জে জ্যাফের দাবি, এমন হাজার হাজার রোগী রয়েছেন, যাঁদের ভয়াবহ অতীত আছে, অথচ মানসিক হাসপাতাল থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী এর পর তাঁরা কেমন আছেন, আদৌ বাড়িতে রয়েছেন কি না, তা-ও খোঁজ নেওয়া হয় না।
এ দিন বিচারপতি জিয়া মরিস জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করেছেন। ১৪ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত এরিকার চিকিৎসা চলবে। সে নিজেও বিচারপতির কাছে কোনও আবেদন জানায়নি। তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে এরিকার। |