স্কুল ভোটে প্রার্থী দিতে না পারার কারণ হিসেবে কাটোয়ায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। শনিবার ও সোমবার কাটোয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে তাই শহর জুড়ে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার আয়োজন ছিল। কলেজ চত্বরে ছিলেন কাটোয়া, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ৪২টি আসনের ১৪টিতে প্রার্থী দিতে পারল না টিএমসিপি। সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এসএফআই-ও এই কলেজে প্রার্থী দেয়নি।
পূর্বস্থলী কলেজে অবশ্য একমাত্র টিএমসিপি-ই মনোনয়ন তুলেছে। সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়ালের অভিযোগ, “এসএফআই কর্মীদের কয়েক দিন ধরেই প্রার্থী না হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, গত বছর এই কলেজে মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে ছাত্র সংঘর্ষ হয়। মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় ১২ এসএফআই কর্মীকে। এ সবের জন্যই প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।” পূর্বস্থলীর তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা বলেন, ‘‘সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ায় ওরা প্রার্থী দিতে পারেনি।” |
কাটোয়া কলেজ সূত্রে জানা যায়, তিনটি বিভাগে মোট সাড়ে চার হাজার পড়ুয়া। ১০ জানুয়ারি ছাত্র সংসদ ভোট। সে জন্য শনি ও সোমবার মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়। ২ ও ৩ জানুয়ারি যথাক্রমে মনোনয়ন পরীক্ষা ও প্রত্যাহারের দিন। এ দিন জানা যায়, টিএমসিপি ২৮টি আসনে ৩৫টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। প্রাতঃ ও দিবা বিভাগে সব আসনে প্রার্থী দিলেও কর্মাসে কোনও আসনেই দিতে পারেনি। কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কমার্সের শ্রেণিগুলিতে একটি মাত্র সংগঠনই প্রার্থী দিয়েছে। তাই সেখানে কোনও নির্বাচন হবে না।” ছাত্র পরিষদ ৪২টি আসনের জন্য ৪৮টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। কমার্সের ৬টি আসন ছাড়াও বিজ্ঞানের তিনটি বর্ষেরই দু’টি করে আসেন এবং প্রাতঃ বিভাগের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের দু’টি আসনে ছাত্র পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের বর্ধমান জেলার নেতাদের বৈঠকে কাটোয়ার পাঁচটি স্কুলে প্রার্থী দিতে না পারা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কাটোয়ার নেতারা কংগ্রেসের সন্ত্রাসকেই এ জন্য দায়ী করেন। এর পরে দলের জেলা নেতারা এসপি-র সঙ্গে দেখা করেন। এসপি কাটোয়া কলেজে মনোনয়ন জমার দিন পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থার নির্দেশ দেন এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাসকে। শনি ও সোমবার তাই শহরে টহল দেয় পুলিশ ও র্যাফ। নানা মোড়েও পুলিশ ছিল।
সব আসনে প্রার্থী দেওয়া গেল না কেন, এ ব্যাপারে অবশ্য তৃণমূল নেতারা নানা যুক্তি দিয়েছেন। যুব তৃণমূল নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শেষ মুহূর্তে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সাংগঠনিক কাজকর্ম গুছিয়ে উঠতে না পারার জন্যই প্রার্থী দেওয়া যায়নি।” তবে তৃণমূল নেতা মণ্ডল আজিজুল ফের সন্ত্রাসের অভিযোগই তুলেছেন। প্রার্থী দিতে না পারার জন্য সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম-ও। দলের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এসএফআই মনোনয়ন পত্র পূরণ করে রেখেছিল। সোমবার জমাও দিত। কিন্তু সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় পড়ুয়াদের বিপদের মুখে ফেলতে চাইনি।”
স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ তুলে তৃণমূল এবং সিপিএম অশান্তি ছড়াতে চাইছে।” ছাত্র পরিষদ নেতা শেখ সোলেমানের বক্তব্য, “ত্রিশ বছর ধরে আমরা ছাত্র সংসদে রয়েছি। পড়ুয়াদের পাশে থাকি বলে তারাও আমাদের পক্ষে থাকে।” এসডিপিও ধ্রুব দাস বলেন, “শান্তিতে মনোনয়ন জমা হয়েছে। কেউ সন্ত্রাসের অভিযোগ জানায়ানি।” |