শেষ পর্যন্ত সন্তানকে কোলে ফিরে পেলেন মা। কিন্তু সে জন্য তাঁকে পেরোতে হল দীর্ঘ আট মাসের পথ। সৌজন্যে ‘সরকারি নিয়মের ফাঁস’। অবশেষে আদালতের হস্তক্ষেপে মিলন হল মা ও মেয়ের।
গত ১৭ এপ্রিল স্ট্র্যান্ড রোডের ফুটপাথে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ৩২ বছরের ববিতা দেবী। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় পোস্তা থানার পুলিশ তাঁকে স্থানীয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাকালীনই তাঁর ‘অসংলগ্ন’ কথাবার্তা শুনে চিকিৎসকেদের মনে সংশয় জাগে ববিতার মানসিক সুস্থতা নিয়ে। সেই সময়ে ববিতা নিজের নাম-ঠিকানাও বলতে পারেননি। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের পোস্তা থানায় যোগাযোগ করেন। ববিতাকে হাজির করা হয় ব্যাঙ্কশাল কোর্টে অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। পোস্তা থানার আবেদনের ভিত্তিতে আদালত সন্তান-সহ তাঁকে লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, জন্মের সময়ে ববিতার কন্যার ওজন ছিল মাত্র ১ কিলো ৭০০ গ্রাম। অত কম ওজনের রুগ্ণ শিশুর দায়িত্ব নিতে লুম্বিনী পার্ক দ্বিধায় থাকায় শিশুটির দায়িত্ব দেওয়া হয় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে। ব্যাঙ্কশাল কোর্টেও বিষয়টি জানানো হয়।
এর মাস খানেক পরে লুম্বিনী পার্কে সুস্থ হয়ে ওঠেন ববিতা। চিকিৎসকেরা তাঁকে সুস্থ হিসেবে সার্টিফিকেটও দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ববিতা জানান, তাঁর বাড়ি পটনার ভুয়াপুর গ্রামে। ভুল ট্রেনে চেপে কলকাতায় পৌঁছন তিনি। এর পরে আর কিছু তাঁর মনে নেই। হাসপাতালেরই এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক চিত্তেশ্বর সিংহের বাড়িও ভুয়াপুরে হওয়ায় তাঁর মারফত ববিতার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিজনেরা ববিতাকে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়া আর হয়নি ববিতার। |
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নজরে আসে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। তাঁরাই আইনজীবী ঠিক করে ববিতার বিষয়টি নিয়ে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন। হাজির হন ববিতার স্বামীও। আদালতে দাঁড়িয়ে স্বামীকে চিনে নেন ববিতা। পরে পোস্তা থানার মারফত চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে সন্তান ফেরত পাওয়ার আবেদন জানান ববিতা। আবেদন মেনে অবশেষ কমিটি মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় সন্তানকে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ববিতা সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও এই প্রক্রিয়ার জন্য তাঁকে আট মাস অপেক্ষা করতে হল কেন? সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে সুদেষ্ণা বসু বললেন, “এই বিলম্বের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। এক জন মহিলা এ ভাবে মাসের পর মাস হাসপাতালে আটকে থাকলেন, নিজের সন্তানকে কাছে পেলেন না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।” ববিতা জানান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা দায়িত্ব না নিলে তাঁর আর হয়তো বাড়ি ফেরা হত না। কেন? তাঁর কথায়, “আমার যে আইনি সাহায্য দরকার ছিল, তা ওই সংগঠনই দিয়েছে। আর পাশে ছিলেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক চিত্তেশ্বর সিংহ। হাসপাতাল কিছুই করেনি।”
কেন করেনি?
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, হাসপাতালের তরফে বিষয়টি আদালতে পেশ করা হলে প্রক্রিয়া মেনেই মেয়েটির ছাড়া পাওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে কেন দেরি হল, তা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।
হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত মৈত্র অবশ্য মেনে নিয়েছেন, সরকারি নিয়মের ফাঁসই বিলম্বের মূল কারণ। তিনি বলেন, “প্রতি পদে নিয়মের ফাঁস। সেগুলো মানতে গিয়ে দেরি হয়। ববিতা কোনও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নন। বহু ক্ষেত্রেই এমন হয়। আমাদের অ্যাম্বুল্যান্স চালক উদ্যোগী হয়ে পটনার বাড়িতে যোগাযোগ না করলে কবে যে ওই মহিলা বাড়ি ফিরতে পারতেন, কেউ জানে না। নিয়মকানুন শিথিল করার বিষয়ে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ জানিয়েছি।” |
রায়গঞ্জেই এইমসের জন্য দ্রুত জমি অধিগ্রহণের দাবিতে নকশালবাড়িতে মিছিল করল কংগ্রেস। রবিবার ব্লক কংগ্রেসের তরফে ওই মিছিল হয়। পাশাপাশি, ফুলবাড়ি অম্বিকানগরে তৃণমূলের তরফে প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমানের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে করা মন্তব্যের বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল হয়। |