দৃশ্য ১: বালতি নিয়ে জলের সন্ধান করছিলেন কয়েক জন যুবক। বাড়ি থেকে আনা কয়েক বোতল জল, চাল ও মাংস ধুতে গিয়ে ফুরিয়ে গিয়েছে। জলের অভাবে তাঁরা রান্না বসাতে পারছেন না। স্থানীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে ক্যানেলে জল আনতে নামলেন তাঁরা।
দৃশ্য ২: রাস্তায় সারি দিয়ে আটকে রয়েছে গাড়ি। তিতিবিরক্ত হয়ে অনেক গাড়ি চালক হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এগোবে কী করে? রাস্তার দু’পাশেই যে গাড়ি রেখে লোকজন পিকনিক করতে গিয়েছেন।
বড়জোড়া সংলগ্ন দুর্গাপুর ব্যারাজের পাশে পিকনিক করতে গেলে এমন নানা অব্যবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। শুধু এ বারই নয়, বছরের পর বছর এ ভাবেই এখানে পিকনিক হয়ে আসছে। প্রশাসনের আধিকারিক থেকে জনপ্রতিনিধিরা সমস্যার কথা জেনেও চুপ করে রয়েছেন।
এ বারও বড়দিনের ছুটিতে একইরকম সমস্যা চলছে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের সিএমইআরআই কলোনির বাসিন্দা অপূর্ব মাঝি এবং এ জোনের বাসিন্দা দেবদীপ দাসরা এ বার পিকনিক করতে এখানে এসেছিলেন। তাঁরা বলেন, “প্রায় প্রতি বছরই আমরা এখানে পিকনিক করতে আসি। শীতকালে বিশেষ দিনগুলোতে পিকনিক করার জন্য ভিড় উপচে পড়ে। কিন্তু এখানকার অবব্যস্থার ছবিটা বদলায়নি।”
তাঁদের ক্ষোভ, জল নেই, গাড়ি রাখার জায়গা নেই, আলোও নেই। এমনকী শৌচাগারও নেই। অথচ শীতকালে পিকনিক করতে মানুষের ঢল নামে এখানে। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়েও পিকনিকে আসা মানুষদের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরা জানান, পিকনিক করতে আসা উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের দৌরাত্ম্যে পরিবার নিয়ে আনন্দ করা যায় না। পিকনিকের সময় এখানে অস্থায়ী পুলিশ শিবির গড়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও। বড়জোড়ার বাসিন্দা জয়দেব সাহা, গৌতম চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, “এমনিতে সারা বছরই ব্যারাজে যানজট থাকে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে যানজট আরও মারাত্মক চেহারা নেয়।” এখানে রাস্তা একেই সরু। তার উপর রাস্তার দু’পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে লোকজন পিকনিক করতে যান। তাই যানজট এড়াতে বেগ পেতে হয় পুলিশ কর্মীদের। শুধু তাই নয়। রাজ্য সেচ দফতরের গড়া দু’টি উদ্যান রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সংস্কারের অভাবে উদ্যানগুলিও এখন নোংরা হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি উত্তর বাঁকুড়ার অন্যতম এই পিকনিক স্পটটিতে সঠিক পরিকাঠামো গড়ার দাবি তুলে বড়জোড়ার বিডিও-কে স্মারকলিপি দিয়েছে দিশারী নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। ওই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, “উত্তর বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ছাড়াও দুর্গাপুর বা ওই শহর সংলগ্ন বহু মানুষ এখানে পিকনিক করতে আসেন। অথচ পিকনিক করার মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি প্রশাসনের কাছে।”
বড়জোড়ার বিডিও ইস্তেয়াক আহমেদ খান বলেন, “ওঁদের স্মারকলিপি পেয়েছি। গাড়ি রাখার জায়গা করে দেওয়া-সহ ওখানে পিকনিক করার পরিকাঠামো গড়ার যে দাবি জানানো হয়েছে তা আমি জেলা প্রশাসনকে জানাব।” তাঁর আশ্বাস, পিকনিকের সময় পুলিশের টহল বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। |