বাছাই বারো ২০১২ |
আলোর দিশারি |
|
ক্যালেন্ডারে নিজের ছবি। |
সম্প্রতি খড়্গপুরে হল প্যান আইআইটি-র অনুষ্ঠান। ক্ষুদ্র উদ্যোগপতি তৈরি করতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রতিষ্ঠিত আইআইটিয়ানরা। শিক্ষায় উজ্জ্বল মুখ ঝাড়গ্রাম শহরের ছাত্রী সুস্মিতা হালদারএ বারের উচ্চমাধ্যমিকে মেয়েদের মধ্যে রাজ্যে সম্ভাব্য প্রথম। এগিয়ে চলেছে খুদেরাও। নির্মল বিদ্যালয় অভিযানে রাজ্যে প্রথম হয়েছে জেলার তিন খুদে। দুবরাজপুর ১ প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র অরিত্রকুমার বর্মণ, অলিগঞ্জ প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা মাইতি আর রোহিণী সিআরডি হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সুমন ধাড়ার আঁকা সেই ছবি এ বার ঠাঁই পেয়েছে সর্বশিক্ষা মিশনের ক্যালেন্ডারে।
|
দিঘা সেই দিঘাতেই |
বছর ঘুরতে চলল। দিঘাকে গোয়া বানানোর স্বপ্ন পূরণ হল না মুখ্যমন্ত্রীর। থমকে রোপওয়ে, ডিয়ার পার্কের কাজ। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, একমুখী গাড়ি চলাচল, মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভের আদলে রাস্তা তৈরিপরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও কাজই হয়নি। ‘পরিবর্তনে’র সৈকতনগরীর দখল নিয়েছে সিন্ডিকেট আর ভুয়ো আর্থিক কারবারে পুষ্ট হোটেল মালিকেরা। যানজট সর্বক্ষণ। ময়ূরের পাখার মতো দাঁড়িয়ে থাকা ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ বড় বেমানান। জল-ক্রীড়ার মধ্যে চলছিল শুধু কয়েক রকমের বোট। সদ্যই মোটর চালিত প্যারাগ্লাইডিং-এর উদ্বোধন হয়েছে।
|
আপাতশান্ত জঙ্গলমহল |
|
কিষেণজি মৃত্যুর বছর পার। |
কিষেণজি অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে এক বছরেরও বেশি। গত বছরে একের পর এক শীর্ষ মাও নেতা-নেত্রী আত্মসমর্পণ করেছেন। বেশ কয়েকজন ধরা পড়েছেন। কেউ এনকাউন্টারে মৃত। তা সত্ত্বেও জঙ্গলমহলের রাজনীতি সেই মাওবাদীদের ঘিরেই আবর্তিত। মাওবাদী নেতা-কর্মীদের সিংহ ভাগ এখন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে শাসকদল তৃণমূল যোগ দিয়েছেন। আবার শাসকদলের বিরোধিতা করলে জুটছে ‘মাওবাদী’ তকমা। গত ৮ অগস্ট বেলপাহাড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় জেল হাজতে যেতে হয়েছিল বিনপুরের যুবক শিলাদিত্য চৌধুরীকে। এই প্রেক্ষিতে অনুন্নয়ন ও বঞ্চনাকে ঘিরে ফের ক্ষোভ দানা বাঁধছে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায়। মাওবাদীদের আনাগোনার খবরও আসছে টুকটাক।
|
ক্ষমতার ওঠা-পড়া |
তুমুল জয়োল্লাস থেকে তীব্র হতাশা। শিল্পশহর হলদিয়ায় তৃণমূলের উত্থান (বিধানসভা ভোট জয়) আর পতনের (পুরভোটে হার) মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৩৮৮ দিনের। বিধানসভা ভোটে জয়ের পর থেকেই সিপিএমের পার্টি অফিসে হামলা, নেতা-কর্মীদের মারধর, জরিমানা আদায়ের অভিযোগ উঠছিল নব্য শাসকদলের বিরুদ্ধে। পুরভোটে বুঝি তারই রায় দিলেন জনগণ। হলদিয়া পুরসভা রয়ে গেল সিপিএমের হাতেই। একই সময়ে পাঁশকুড়া পুরভোটে অবশ্য সংখ্যগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল।
দুই জেলাতেই তৃণমূলের এখন মূল গণ্ডগোল দলেরই বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে। কেশপুরে তৃণমূলের দুইয়েরও বেশি গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে নিত্য। চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, দাসপুরেও একই ছবি। শক্ত ঘাঁটিতেও স্কুল ও সমবায় ভোটে বিক্ষিপ্ত ভাবে হারছে তৃণমূল। সম্প্রতি কাঁথিতে দিব্যেন্দু অধিকারীর স্কুলে অভিভাবক প্রতিনিধির ছ’টি আসনেই জিতেছে বামেরা।
|
ভিতর-বাহিরে |
রাজ্যে পালা বদলের পরে দুই মেদিনীপুরে সিপিএমের হেভিওয়েট নেতাদের অনেকেই গিয়েছেন জেলে। পরে জামিনে ছাড়াও পেয়েছেন অধিকাংশ। পশ্চিমে দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ সিআইডি’র হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১১ সালের অগস্টে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আলিপুর জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। নিজের এলাকায় আসার ক্ষেত্রে বাধা নেই। তবে, এখনও গড়বেতায় আসার ঝুঁকি নেননি সুশান্তবাবু। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে জড়িয়ে আর এক হেভিওয়েট সিপিএম নেতাহলদিয়ার লক্ষ্মণ শেঠ এই বছরই গিয়েছিলেন জেলে। গত ১৭ মার্চ লক্ষ্মণবাবুর সঙ্গেই মুম্বই থেকে সিআইডি-র হাতে ধরা পড়েছিলেন অমিয় সাউ ও অশোক গুড়িয়া। হাইকোর্টে জামিন পেয়েছেন তিন জনেই। অমিয়বাবু ও অশোকবাবু জেলায় ফেরার অনুমতিও পেয়েছেন। লক্ষ্মণবাবু কবে ফিরবেনতা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে জেলায়।
|
জোর-কদমে |
|
চলছে কেলেঘাই প্রকল্পের কাজ। |
জমি অধিগ্রহণের সমস্যা আছে। আছে তোলাবাজির অভিযোগও। এই সমস্ত জটিলতার মাঝেই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই অববাহিকা নিকাশি প্রকল্পের কাজ। চলতি বছরেই পূর্ণাঙ্গ ভাবে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। শেষ না হলেও বাজকুল-এগরা, তমলুক-ময়না রাস্তার কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। উদ্বোধন না হলেও নন্দীগ্রাম-তেরপেখ্যিয়া রাস্তায় টেঙ্গুয়া সেতুর কাজ শেষ। শেষ পর্যায়ে কোলাঘাট সেতু নির্মাণের কাজও। পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড়, শালবনি, নয়াগ্রামে তিনটি কলেজ তৈরির কাজ চলছে। জঙ্গলমহলের বেশ কিছু স্কুলে হস্টেল নির্মাণের কাজও চলছে। সংস্কার হচ্ছে লালগড়-রামগড় ও পিড়াকাটা-চাঁদড়া রাস্তা। সেই সঙ্গে উন্নয়নের কাজ কার টাকায়তা নিয়ে নিত্য চাপানউতোর চলছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার তথা তৃণমূল বনাম কংগ্রেসে।
|
যেখানে পিছিয়ে |
নন্দীগ্রামে স্বাস্থ্য জেলার কাজ বিশ বাঁও জলে। শালবনি, ডেবরায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কাগজে-কলমে। জঙ্গলমহলেও ঘোষিত প্রকল্পের অধিকাংশই দিনের আলো দেখেনি। এখনও পিচের হল না নেতাই রাস্তা।
|
কালীঘাট-দর্শন |
চাকরির দাবিতে পুলিশি নজরদারি এড়িয়ে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হাজির হয়েছিলেন দুই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী—চিরঞ্জীব মাহাতো ও সুখদেব মাহাতো। এখন অবশ্য তাঁদের দাবি পূরণ হওয়ার পথে। হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
|
অগস্ত্য-যাত্রা |
হলদিয়া বন্দর ছেড়ে চলে গেল এবিজি২ ও ৮ নম্বর বার্থে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পণ্য খালাসকারী সংস্থা। ২০১০ সালে শুরু থেকেই শ্রমিক নিয়ে অসন্তোষ ছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে ওই সংস্থা ২৭৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করার পর অচলাবস্থা শুরু হয়। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন এবিজি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ, মিছিল-হুমকি চলছিল। তারই মধ্যে ২৭ অক্টোবর রাতে আবাসন থেকে এবিজি-র তিন কর্তাকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠে একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জঙ্গি আন্দোলন ও তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে দায়ী করে হলদিয়া ছেড়ে চলে যায় এবিজি।
|
এ কোন আঁধার-পথে |
দিনটা ছিল ৮ সেপ্টেম্বর। সন্ধে বেলায় এক বান্ধবীর বাড়ি থেকে সাইকেলে করে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। খড়্গপুর শহরের মথুরাকাটি এলাকায় কয়েকজন যুবক তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। একটি নয়, প্রতি দিনই ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটছে দুই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। কখনও পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পশহর হলদিয়ার রাস্তায় বধূকে ধর্ষণ করছে দুষ্কৃতীরা, কখনও কাঁথিতে বাড়িতে একা পেয়ে পাঁচ বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করছে প্রতিবেশী যুবক। বধূ নির্যাতন, অসহায় স্ত্রী-র আত্মহত্যা, খুন তো আছেই।
|
যারা পেল |
দোষীদের শাস্তি দিতে না-পারলেও নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন-পর্বে নিহতদের পরিবারকে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দিল। দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের কাজও সম্পূর্ণ হল চলতি বছর।
|
শান্ত সালুয়া |
এক কলেজ ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ঘিরেই উত্তেজনা ছড়িয়েছিল খড়্গপুরের সালুয়ায়। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। সামনে আসে সিআইএফ ও ইএফআরের বিরোধ। ছুটে আসেন দুই বাহিনীর পদস্থ কর্তারা। ছন্দে ফেরে সালুয়া। |