|
|
|
|
কাকভোরে চুপিসারে শেষকৃত্য |
রাতের বাসে ফের যৌন নিগ্রহ লজ্জার দিল্লিতে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
রবিবার ভোর সাড়ে ৬টা। দ্বারকা শ্মশানে গণধর্ষিতা তরুণীর মুখাগ্নি করলেন বাবা। শোকে জ্ঞান হারালেন মা। কান্নায় ভেঙে পড়লেন ভাই।
এর ঘণ্টা সাতেক আগেই আবার একটি ১৬ বছরের মেয়েকে যৌন নিগ্রহ করা হল। আবার রাতের বাসযাত্রায়। যা দেখিয়ে দিল, দিল্লির কোনও বদল নেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬ বছরের ওই নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করা হয় দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন বা ডিটিসি-র একটি বাসে। কী ঘটেছিল কাল রাতে? পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ন’টার সময় খেয়ালায় নিজের বাড়ি থেকে বেরোন তরুণীটি। তার আগে তাঁর সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্ভবত কথা কাটাকাটিও হয়েছে। কারও কারও ধারণা, সম্ভবত তিনি রাগ করেই বেরিয়ে যান। কিছু ক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও মেয়ে ফিরছে না দেখে উদ্বিগ্ন বাবা পুলিশে খবর দেন। স্থানীয় থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পরেই শুরু হয় খোঁজ।
পুলিশ জানিয়েছে, এর মধ্যেই রাত এগারোটা নাগাদ মেয়েটিকে মধ্য দিল্লির মান্ডি হাউসের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে খুঁজে পাওয়া যায়। |
|
নয়াদিল্লির বাড়ির বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে ওই তরুণীর দেহ। রবিবার। ছবি —এএফপি |
ওই বাসের চালক ও কন্ডাক্টরের কাছ থেকে জানা যায়, কী ঘটেছিল। তাঁরাই জানিয়েছেন, ওই বাসে অন্য একটি বাসের কন্ডাক্টর যাচ্ছিল। তার নাম রণজিৎ সিংহ। বাস যখন খালি হয়ে গিয়েছে, তখন সে-ই উঠে গিয়ে মেয়েটির উপরে হামলা চালায়। তাঁর যৌন নিগ্রহ করে। ওই চালক ও কন্ডাক্টরই পরে পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের কথার ভিত্তিতে রণজিৎ সিংহের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৫০৯ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। রণজিতের ১২ দিনের জেলহাজত হয়েছে।
কিন্তু তাতেও থামানো যাচ্ছে না প্রশ্ন। যেখানে দিল্লির সেই তরুণীর ধর্ষণ ঘিরে এত প্রতিবাদ, যা শুধু রাজধানীতেই নয় ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে, তাতে কি মানসিকতা আদৌ বদলাচ্ছে? শনিবারই পশ্চিমবঙ্গের বারাসতে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। একই দিনে মুম্বইয়ের জুহু বিচে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে হেনস্থা হতে হল এক মহিলাকে। সেই ঘটনায় কাউকে এখনও ধরাই সম্ভব হয়নি।
পাছে এই সব সূত্র ধরে আবার আছড়ে পড়ে বিক্ষোভের ঢেউ, তাই কাকভোরে চুপিসারে ওই তরুণীর শেষকৃত্য সেরে ফেলল সরকার। এবং সেটা দেশের ঘুম ভাঙার আগেই।
গোপনীয়তার ইঙ্গিত গত কাল সিঙ্গাপুরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রাঘবনের কথাতেই ছিল। তিনি বারবার বলেছিলেন, “মৃতার পরিবার চাইছেন গোপনীয়তা রক্ষা করতে। সেই আবেগকে মর্যাদা দেওয়া হোক।”
তার পর থেকে আজ শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সবটাই হয়েছে সুপরিকল্পিত ভাবে। সিঙ্গাপুর থেকে মৃতদেহ ও তরুণীর পরিবারের সদস্যদের বিশেষ বিমানে দিল্লি আনা হয় প্রায় শেষ রাতে। বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন, বিমানবন্দর থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা পিছু নেবেন না।
দেহ দিল্লি পৌঁছনোর পর আজ ওই শেষ রাতেই বিমানবন্দরে গিয়ে তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা জানান, দোষীদের যাতে দ্রুত শাস্তি হয়, সে জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেবে সরকার। এর পর বিমানবন্দর থেকে তরুণীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে তাঁর বাড়িতে। সেখান থেকে শ্মশানে। গোটা পথে ছিল ৩০-৪০টি গাড়ির কনভয়। এবং টানটান নিরাপত্তা বেষ্টনী।
শেষকৃত্য যে দ্বারকায় হবে, তা-ও গত কাল প্রায় মধ্যরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায় পুলিশ। সেই সঙ্গে এ-ও জানায়, আলো ফোটার আগেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা এবং পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে পৌঁছলে এই নিয়ে আপত্তি তোলেন শ্মশানের পুরোহিত। বলেন, সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করা হোক। শেষ পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
শুধু শেষকৃত্যে গোপনীয়তাই নয়, প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আশঙ্কা থেকে দিল্লিকে আজও অবরুদ্ধই রাখে প্রশাসন। সেই আশঙ্কা যে পুরোপুরি ভুল ছিল না, সেটা বোঝা যায় যখন ঘুম থেকে উঠে ফের প্রতিবাদে নেমে পড়ে দিল্লি। দুপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের কিছুটা ধাক্কাধাক্কিও হয়। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়ায়নি। |
|
|
|
|
|