ডাকাতির পরে আতঙ্কে এখনও থমথমে সিঙ্গুরে কসমিক গোষ্ঠীর নির্মীয়মাণ কারখানা।
শুক্রবারের মতো শনিবারও কারখানায় কোনও কাজ হল না। উল্টে ডাকাতির দেড় দিনের মাথায় কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেলেন অন্তত ৫০ জন নির্মাণ-কর্মী। হাতে গোনা আর যে ক’জন নির্মাণ-কর্মী রয়েছেন, তাঁরাও কাজ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দোটানায়। ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষও নির্মাণ-কর্মীদের উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কর্মীদের আতঙ্ক কাটছে না। বরং তা সিঙ্গুরে শিল্পের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্নটাকেই ফের উস্কে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী ওই কারখানায় ঢুকে নিরাপত্তারক্ষী ও নির্মাণ-কর্মীদের বেঁধে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে শাটার নামিয়ে দেয়। তাঁদের মোবাইল, টাকাপয়সা লুঠ করে। তার পরে ঘণ্টা চারেক ধরে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকার লোহার সামগ্রী লুঠ করে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। |
শনিবার কারখানায় এসে সংস্থার ডিরেক্টর আদিত্য বিক্রম বিড়লা বলেন, “যে নির্মাণ-কর্মীরা ফিরে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। কর্মীদের মনোবল বাড়াতে পিকনিকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” তাঁর অনুমান, “কর্মীদের মনে ভয় ধরানোর জন্য কেউ ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। স্থানীয় কেউ এর মধ্যে থাকতে পারে। দু’-এক জনের নাম ধরেও দুষ্কৃতীরা ডেকেছিল বলে শুনেছি। পুলিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে।” কারখানার মুখপাত্র কুলদীপ শর্মা বলেন, “যে ভাবে দুষ্কৃতীরা হামলা এবং লুঠপাট চালিয়েছে, তাতে আতঙ্কিত হয়েই প্রায় ৫০ জন ফিরে গিয়েছেন। কবে কাজ শুরু করতে পারব, বুঝতে পারছি না।” এই পরিস্থিতিতে আদৌ নির্দিষ্ট সময়ে (মাস তিনেকের মধ্যে) উৎপাদন শুরু সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত কারখানা কর্তৃপক্ষ।
টাটাদের পরিত্যক্ত কারখানার অদূরে সিঙ্গুরের আজবনগরে ১৩ বিঘা জমিতে রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য ‘কসমিক ফেরো অ্যালয়েজ লিমিটেড’ নামে ওই কারখানা তৈরি করছে কসমিক গোষ্ঠী। চলতি বছরের গোড়া থেকে কাজ শুরু হয়। ডাকাতির পরে এই প্রথম সেখানে কাজ স্তব্ধ হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার রাতে কারখানায় যেখানে অন্তত ৬০ জন নির্মাণ-কর্মী ছিলেন, সেখানে শনিবার গিয়ে দেখা যায় মাত্র জনা দশেক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রাহুল প্রসাদ বলেন, “এখানে থাকতে আর ভরসা পাচ্ছি না। মালিকের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করব কাজ করব কি না।’’ স্বপন দাস একটি সংস্থার হয়ে ঠিকাদারের কাজ করেন। বাঁকুড়ার মেজিয়ার বাসিন্দা ওই যুবক বলেন, “দুষ্কৃতীরা আমার কপালে রিভলভার, কানে ভোজালি ধরে। ভাবছি বাড়ি ফিরে যাব। বেঁচে থাকলে আরও কাজ করতে পারব।” প্রায় একই বক্তব্য ঠিকাদার সংস্থার সুপারভাইজার মনসারাম দে’রও।
জেলার অতিরিক্ত এসপি (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা বলেন, “ওই এলাকায় পুলিশ নজর রাখছে। নিরাপত্তায় খামতি নেই। দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে।” এই আশ্বাসের প্রভাব যে নির্মাণ-কর্মীদের মধ্যে খুব একটা পড়েনি, তা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট। |