শনিবারের সন্ধ্যা। দিল্লির ধর্ষিতা তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে গোটা দেশের সঙ্গে পা মিলিয়ে তখন ধর্মতলার শোকমিছিলে হাতে হাতে জ্বলছে মোমবাতি। প্রায় একই সময়ে কলকাতার উপকণ্ঠে বারাসতের জগন্নাথপুরে ইটভাটার কাজ থেকে ফেরার সময় দুষ্কৃতীদের আক্রমণের মুখে পড়লেন মাঝবয়সী এক দম্পতি। স্বামীকে গুরুতর জখম করে মহিলাকে গণধর্ষণের পরে খুন করার অভিযোগ উঠল।
পুলিশ জানায়, ইটভাটার কাজ সেরে ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ ওই দম্পতির উপরে হামলা হয়। অভিযোগ, তাঁর স্বামীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলাকে তুলে নিয়ে যায় জনা ছয়েক যুবক। এর কিছু ক্ষণ বাদে ইটভাটার ভিতরে একটি পরিত্যক্ত পুকুরের পাড়ে মহিলার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই মহিলার স্বামীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে বারাসত হাসপাতাল ও পরে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে আর জি কর হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তির অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। |
মহিলার পরিজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে বারাসত থানায় ধর্ষণ ও খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বছর পাঁচেক আগে এই ইটভাটাতেই একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে খবর, ইটভাটা সংক্রান্ত কোনও গোলমালের জেরে এমনটা হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকায় তল্লাশি চলছে।”
বারাসতে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০১১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বারাসতের কাছারি ময়দানে দিদি রিঙ্কুর সম্মান বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেও বারাসতের ছবিটা বদলায়নি। শ্লীলতাহানির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। টিউশন সেরে ফেরার পথে এক স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার পরে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক, চিরঞ্জিত এই ধরনের ঘটনার জন্য মেয়েদের পোশাককেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন! স্থানীয় সাংসদ তথা তৃণমূল নেত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদার গত কালই পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে অভিযোগকারিনীর দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, “ওটি ধর্ষণের ঘটনাই নয়! পেশাদার কাজকর্ম নিয়ে ওই মহিলা এবং তাঁর খদ্দেরদের মধ্যে গোলমাল!” এ দিন অবশ্য জগন্নাথপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “খুবই মর্মান্তিক। আমি শীঘ্রই ঘটনাস্থলে যাব।”
খুন হওয়া মহিলার ছেলে জানান, বাড়ি থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বের ওই ইটভাটায় তাঁর বাবা-মা শ্রমিকদের টোকেন দেওয়ার কাজ করতেন। সন্ধ্যায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে জনা ছয়েক যুবক পথ আটকে মহিলাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্বামী বাধা দিলে তাঁকে মারধর করে মুখে অ্যাসিড ঢেলে মহিলাকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। নিহতের ছেলে বলেন, “বাবা কোনও মতে বাড়ি ফিরে খবর দেন।”
পুলিশ সূত্রের খবর, নিহত মহিলার মাথায় তিন-চারটে কাটারির কোপ ছিল। তাঁর স্বামীর গলায় অ্যাসিড
ঢেলে দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। এই ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ জানিয়েছে, এখনও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতেই এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। শুরু হয়েছে টহলদারিও। |