বিকল্প চাষে পেঁয়াজ ফলিয়ে লাভের কড়ি গুনছে বলাগড়
নাসিকের ‘ডার্ক রেড’-কে এ বার হারিয়ে দিতে কোমর বেঁধে নামছে বলাগড়ের সুখসাগর।
এ রাজ্য পেঁয়াজের জন্য হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে থাকে নাসিকের দিকে। বস্তুত, নাসিকের ‘এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড’ পেঁয়াজ না থাকলে বাঙালির রসনা মাঠে মারা যেত। আলুর পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের তালিকায় পেঁয়াজ আবশ্যিক হিসেবে বিবেচিত হয় গিন্নিদের কাছে। আর, মেনুতে একটু গরগরে কিছু থাকলে পেঁয়াজ ছাড়া ভাবাই যায় না। অথচ, আমদানি নির্ভর এই সব্জির দাম এ রাজ্যে বরাবরই বেশি। বর্ষায় আমদানি কম। তার উপর এ রাজ্যে সব্জির হিমঘর বাড়ন্ত থাকায় ফি-বছর বর্ষায় জলে পেঁয়াজ পচে যায়। খিচুরির সঙ্গে ডিমভাজা আর পেঁয়াজির বাঙালিয়ানায় জিভ পুড়ে যায় দামের ঠেলায়।
চাষের প্রস্তুতি। বলাগড়ে তোলা নিজস্ব চিত্র।
এ রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের বিশেষজ্ঞরা বিলক্ষণ ঠাওর করেছিলেন, এই প্রতিবন্ধকতা। আর, তাই গত জুন-জুলাইয়ে বর্ষার সময় থেকেই কাজে নেমে পড়েছেন ওই দফতরের কর্তারা। বাম আমলে বিকল্প চাষের সন্ধানে সূর্যমুখী বড় ধাক্কা দিয়েছিল এ রাজ্যের চাষিদের। সেই থেকেই বিকল্প ভাবনা চাষিদের কাছে নিয়ে গেলেই চাষিদের তরফে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেই কথা মাথায় রেখেই অতি সাবধানে গত বর্ষায় পদক্ষেপ করেছেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা।
শুধু মুম্বইয়ের পুণে থেকে আনা পেঁয়াজের বিশেষ ধরনের বীজ চাষিদের মধ্যে বিনা পয়সায় বিলি করা নয়, স্লাইড শো-র মাধ্যমে দেশের অন্যান্য জায়গায় কী পদ্ধতিতে এই চাষ হয়, তা-ও প্রত্যক্ষ করেছেন চাষিরা। আর তার সুফল হাতেনাতে ফলেছে বলাগড়ের বাকুলিয়া গ্রামে।
ওই গ্রামের চাষি বুদ্ধদেব ঘোষ বলেন, “দেখুন, জেলা উদ্যানপালন দফতরের স্যারেরা উৎসাহ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তব কী আমি জানি। তাই আমার মোট জমির মাত্র ১৫ কাঠাতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে চাষ করেছিলাম। ফলনের পর দেখলাম ভুল করেছি। আমার উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে অন্তত ৩০ হাজার টাকা পাব বলে আশা করছি। আরও বেশি জমিতে চাষ করলে অনেক বেশি টাকা লাভ করতে পারতাম। এ বার আর এই ভুল করব না।” তাঁর সংযোজন, উদ্যানপালন দফতর থেকে চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ ছাড়াও সাড়ে সাত হাজার টাকা অনুদান পেয়েছি।
রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে এবং গত বার হুগলিকে জুড়ে আমরা অসময়ে বিকল্প চাষে চাষিদের উৎসাহী করেছিলাম। এ রাজ্যে মোট চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। বেশিরভাগ পেঁয়াজ-ই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজ চাষ যথেষ্ট লাভজনক সেটাই আমরা চাষিদের বোঝাতে চাইছি।”
শুধু বলাগড় নয়, জেলা সদর মহকুমার চুঁচুড়া-মগরা ব্লকেও বিকল্প এবং অর্থকরী চাষের সন্ধানে এ বার বর্ষায় পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যানপালন দফতরের জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে এই চাষ করা হয়েছে। বর্ষায় বিকল্প চাষের এই ফলনে হাতে হাতে ফল পাচ্ছেন চাষিরা।
বলাগড়ের একতারপুরের চাষি সুব্রত কর্মকার রীতিমতো উচ্ছ্বসিত পেঁয়াজ চাষ করে। তিনি বলেন,“ চাষ করে অনেক সময় চাষিরা দাম পান না। আসলে কী চাষ করছি তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এখন কী ভাবে এবং কোন সময় চাষ করছি। পেঁয়াজ আমাদের রাজ্যে ফলন সে ভাবে হয় না। তাই ভাল ফলন হলে দাম পাওয়া যাবেই।” জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক দীপক ঘোষ বলেন, “বলাগড়ের চাষিদের নতুন কিছু গ্রহণের ক্ষমতা আশ্চর্যজনক ভাবে বেশি। আমরা চাইছি শীতে আরও মানুষ যেন পেঁয়াজ চাষ করেন। তা হলে বাজারে জোগানের যে সমস্যা হয়, তা হবে না। ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানিও করতে হবে না। বলাগড়ের সুখসাগরের পেঁয়াজই রাজ্যে দাপিয়ে বেড়াবে।”
গুপ্তিপাড়ার তরুণ চাষি পিন্টু ঘোষও এ বার পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “বাজার যা পড়েছে, চাষ করে লাভের কড়ি ঘরে তুলতে বিকল্প চাষ ছাড়া পথ নেই। আর চাষে নতুন প্রযুক্তিও আনতে হবে। এই পথে হেঁটেই এ বার লাভ পেয়েছি। বন্ধুদেরও বলেছি, নতুন এই চাষের জন্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.