রাজ্যে শ্লীলতাহানি-সহ নানা ভাবে মেয়েদের লাঞ্ছনার ঘটনা বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় মহিলাদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা চায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের ১৩টি রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন মনে করে, শ্লীলতাহানির ঘটনা রুখতে আইনে আরও কঠোরতা প্রয়োজন। আর রাজ্যের মহিলা কমিশন মনে করে, এক বার শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেও পরে যাঁরা তার থেকে পিছিয়ে আসেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া আইনি ব্যবস্থার বিধান থাকা দরকার।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের গত পাঁচ বছরের তথ্য বলছে, শ্লীলতাহানি এবং অন্য ভাবে নারী-নিগ্রহের অভিযোগ বাড়ছে। ২০০৭-’০৮ সালে তাদের কাছে শ্লীলতাহানি-সহ নানা ভাবে নারী-নিগ্রহের ৭২টি অভিযোগ এসেছিল। পরের দু’বছরে অভিযোগ কিছু কমেছিল। ২০০৮-’০৯ সালে অভিযোগ আসে ৫৮টি এবং ২০০৯-’১০ সালে ৪৪টি। কিন্তু গত দু’বছরে কমিশনের কাছে এই ধরনের অভিযোগের সংখ্যা বেশ কিছুটা বেড়েছে। ২০১০-’১১ সালে ৯৩টি অভিযোগ পায় তারা এবং ২০১১-’১২ সালে আসে ১০৬টি অভিযোগ।
এর বাইরেও নারী-লাঞ্ছনার বহু ঘটনা ঘটে, যা মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত পৌঁছয়ই না। ওই কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, এখন কমিশনের উপরে মানুষের আস্থা বেড়েছে। আগের তুলনায় মানবাধিকার সম্বন্ধে সচেতনতা বেড়েছে আমজনতার মধ্যে। কিন্তু চেয়ারম্যানের আক্ষেপ, শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্তেরা সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন আরও কঠোর করা দরকার। অশোকবাবু বলেন, “আমরা মনে করি, শ্লীলতাহানিকে জামিন-অযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখলে এই ধরনের ঘটনা কম ঘটবে। তাই আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধন চেয়েছি।”
কমিশন সূত্রের খবর, গত জুলাইয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানেই অন্তত ১৩টি রাজ্যের প্রতিনিধিরা শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা চেয়েছেন।
এই সংক্রান্ত আইন কঠোর করার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য মহিলা কমিশন আর এক ধাপ এগিয়ে যেতে চায়। ওই কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, “শ্লীলতাহানিকে কেবল জামিন-অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করলেই হবে না। এমন কঠোর আইন চালু করা উচিত, যেখানে বলা থাকবে, কেউ এক বার এই ধরনের অভিযোগ করলে কোনও ভাবেই তা তুলে নেওয়া যাবে না। অভিযোগ তুলে নিলে তা-ও শাস্তিযোগ্য হবে।”
চেতলার সাম্প্রতিক একটি ঘটনার দৃষ্টান্ত দেন সুনন্দাদেবী। তিনি জানান, সম্প্রতি চেতলা থানায় এক মহিলা অভিযোগ করেন, এক ব্যক্তি তাঁকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু দিন দুয়েক পরে ওই মহিলা অভিযোগ তুলে নেন। অর্থাৎ অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে, তা হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি সাজা থেকে রেহাই পেয়ে গেল।
|