লাল পেড়ে কাপড় পরে মাটিতে পাত পেড়ে খেতে বসেছেন নতুন বৌ। পিছনে পিয়ানো। কোনও নিঝুম দুপুরে কিংবা সন্ধ্যায় সেই বাড়ি থেকে শোনা যেত বাখ বা মোৎসার্ট। মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম ইসলামপুরের মানুষ বুঝতেন, মজুমদার বাড়ির ‘মেম বৌ’ বসেছেন পিয়ানোয়।
সেই মেম বৌ আর নেই। তাঁদের পরিবারই ছেড়ে চলে গিয়েছে সেই বাড়িও। রয়ে গিয়েছে কেবল ইংল্যান্ডের জন ব্রডউড অ্যান্ড সন্সের তৈরি একশো বাইশ বছরের পুরনো সেই পিয়ানো।
|
শুধু বয়স নয়, এই পিয়ানোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক কাহিনিও। ওই ‘মেম বৌ’ কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা জানকীদেবী। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এই মজুমদার পরিবারের পুত্র বিখ্যাত ব্যারিস্টার প্রিয়কৃষ্ণের। প্রেসিডেন্সি কলেজের বাংলার প্রাক্তন শিক্ষক এই এলাকারই বাসিন্দা অমরেন্দ্রনাথ গনাই বলেন, “১৮৯০ সাল লন্ডনে বিয়ের পরে জানকীদেবী স্বামীর সঙ্গে চলে এসেছিলেন ইসলামপুরে প্রিয়কৃষ্ণের এই পৈতৃক বাড়িতে।” তাঁর কথায়, “জানকীদেবীকে পিয়ানোটি উমেশচন্দ্র কিনে দিয়েছিলেন লন্ডনেই। শ্বশুরবাড়িতে আসার সময় তিনি সেটি নিয়ে আসতে ভোলেননি।” জাহাজে করে লন্ডন থেকে কলকাতা, তার পর খিদিরপুর থেকে লঞ্চে করে ভাগীরথী ধরে ভৈরবে পড়ে ইসলামপুরে নিয়ে আসা হয়। তার পর থেকেই পিয়ানোটি ছিল এই বাড়িতেই। পিয়ানোটি এই পরিবারের পরিচয়ও হয়ে উঠতে শুরু করে।
|
জানকীদেবী এবং তাঁর স্বামী |
এখন সেই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে নদিয়ার কল্যাণী চলে গিয়েছেন মজুমদার পরিবার। কিন্তু রেখে গিয়েছেন পিয়ানোটি। কাজ করা পায়ার নীচে বেলজিয়াম কাচের পা-দানি এখনও ঝকঝক করে। দেওয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে সেটি রাখা ছিল বৈঠকখানা পেরিয়ে ডান দিকে লম্বা একটি ঘরের মধ্যে। এখন সেটি ওই বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রেখেছেন ইসলামপুর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি নারায়ণ দাস। তাঁর কথায়, “কংগ্রেসের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত এই পিয়ানো। তাই আমার বাড়িতেই রেখেছি।”
|
লন্ডন থেকে ইসলামপুরে আনা হয়েছিল এই পিয়ানো |
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি রেলপ্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেসের প্রথম সভাপতির কন্যার এই পিয়ানো কংগ্রেসই সংরক্ষণ করবে। সর্বতো ভাবে সেই চেষ্টা করছি।” প্রিয়কৃষ্ণের নাতি প্রবীরকৃষ্ণ বলেন, “উমেশচন্দ্রের কিনে দেওয়া পিয়ানো আমাদের পরিবার এত দিন সযত্নে রক্ষা করেছে। এ বার জাতীয় কংগ্রেস দায়িত্ব নিক।” তাঁর স্ত্রী কুমকুমদেবীর কথায়, “বাড়িটিই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। ওই পিয়ানোটি নিয়ে আসার সামর্থ্য আমাদের ছিল না।” অমরেন্দ্রনাথবাবু জানান, জানকীদেবী ও প্রিয়কৃষ্ণের দুই পুত্র ছিলেন। তাঁরা বায়ুসেনাতে কাজ করতেন। একদিন দিল্লিতে মহড়া দেওয়ার সময়ে দু’জনেই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। অমরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “তারপরেই জানকীদেবীরা লন্ডনে চলে যান। আর ফেরেননি। পিয়ানোটা পড়ে থাকে এখানেই।”
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ধীমান দাস বলেন, “কবি নজরুল ইসলাম এই বাড়িতে এসেছিলেন। শুনেছি, ওই পিয়ানোটি তিনি বাজিয়েওছিলেন।” পিয়ানো বিশেষজ্ঞ টোনি ব্রোগাঞ্জার বক্তব্য, “জন ব্রডউড অ্যান্ড সন্সের পিয়ানো খুবই বিখ্যাত। তবে এই পিয়ানোটি তার স্বর এখনও কতটা ধরে রেখেছে, তা নির্ভর করছে, সেটি কেমন অবস্থায় রয়েছে তার উপরে।”
|
জন ব্রডউড অ্যান্ড সন্স |
স্কটল্যান্ডের জন ব্রডউড লন্ডনে এসেছিলেন ১৭৬১ সালে। তাঁর তৈরি পিয়ানো জনপ্রিয়ও হয়। আদি পিয়ানোর বেশ কিছু সংস্কারও করেছিলেন তিনি। ১৭৭১ সালে তৈরি করেছিলেন স্কোয়ার পিয়ানো। তাঁর পুত্র জেমস এস ব্রডউডের আমলে ১৭৯৫ থেকে এই সংস্থা জন ব্রডউড অ্যান্ড সন নামে বিখ্যাত হয়। এখনও কলকাতার অনেকের কাছে এই পিয়ানো রয়েছে। |
|
জুয়ার ঠেকে হানা
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
লালগোলার উত্তর সুদর্শনগঞ্জের একটি জুয়ার ঠেকে হানা দিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই আসর থেকে লক্ষাধিক টাকা আটক হয়েছে। |