আমার গুরু স্বর্গত বলাইদাস চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে প্রথম দিন মোহনবাগান ক্লাবে আসার পর থেকে এই ক্লাব আমার কাছে মন্দিরের সমতুল্য। নয় ডিসেম্বরের বড় ম্যাচের পর থেকে সংবাদমাধ্যমে যতবার শুনেছি মোহনবাগান ক্লাবকে আই লিগ থেকে নির্বাসিত করা হতে পারে, তত বারই আশঙ্কায় বুক ঢিপঢিপ করেছে। সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করেছি আমার প্রিয় মোহনবাগানের যেন কিছু না হয়।
শনিবার তাই সকাল থেকেই বসেছিলাম টিভির সামনে। কিন্তু দুপুর নাগাদ যখন জানতে পারলাম যে মোহনবাগান আড়াই বছরের জন্য আই লিগ থেকে নির্বাসিত হয়েছে তখন দুঃখে চোখে জল চলে এসেছিল। মর্মান্তিক এই খবরে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি মোহনবাগান সমর্থকের চোখেও জল। ৯ ডিসেম্বর আগামী দিনে মোহনবাগান অনুরাগীদের কাছে একটা ‘কালো দিন’ হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।” |
যে ব্যক্তির বিচারে মোহনবাগানের এই শাস্তি সেই শ্রদ্ধেয় বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় মোহনবাগানের আবহেই বড় হয়েছেন। তাঁর বাবা মনোহর গঙ্গোপাধ্যায় এই ক্লাবেরই ছিলেন। আমরা যখন খেলতাম তখন রোজ মাঠে হাজির থাকতেন। তাঁর ছেলে অশোকবাবু কিন্তু দৃঢ় মনোভাব বজায় রেখেই রায় জানিয়েছেন। হয়তো হৃদয়ে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু তিনি সত্যের পথ থেকে সরে আসেননি। বুঝতে পেরেছিলেন শাস্তি না দিলে ক্লাব প্রশাসকদের শিক্ষা হবে না।
সত্যি, গত কয়েক বছর ধরে আমার প্রিয় ক্লাবে যা হয়েছে তা দেখে মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হয়েছি। ধীরেন দে বলতেন মোহনবাগান খেলে ট্রফি জেতে। আর আজ? শিল্ড জয়ের শতবর্ষে আইএফএ শিল্ড থেকে নামই তুলে নিল মোহনবাগান। না খেলে এ বারের পুজোর পর ট্রফি ঢুকল ক্লাব তাঁবুতে। কলকাতা লিগে প্রথম কয়েকটা ম্যাচ খেলল না। কী আর বলব!
এখন আর বিলাপ করে লাভ নেই। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে কোর্ট-কাছারি নয়। শনিবার সারাটা দিন মোহনবাগান সমর্থকদের কান্না ভেজা গলায় আর্জি, “ক্লাবটাকে বাঁচান।” ক্লাব কর্তাদের কাছে আমার তাই বিনীত আবেদন, চেয়ার ছাড়ুন। ফুটবল ফেডারেশনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। বলুন, দোষ আমরা করেছি। ক্লাব নয়। ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগানের অবদান এবং জনপ্রিয়তার কথা মনে করে ক্লাবকে ছাড় দিন। আমাদের শাস্তি দিন। সেটাই হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ। |