মোহনবাগান আড়াই বছর নির্বাসিত! আনন্দবাজারের কাছে প্রথম খবরটা শুনে চমকে উঠেছিলেন টোলগে ওজবে! সতীর্থ স্ট্রাইকারের মতো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মোহনবাগান অধিনায়ক ওকোলি ওডাফাও! ফুটবলারদের মতোই মানতে পারছিলেন না সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা।
শনিবার সকাল থেকেই বাগান তাঁবু ছিল থমথমে। আর্মি একাদশের বিরুদ্ধে অনুশীলন ম্যাচেও ঠিক করে মনোযোগ দিতে পারছিলেন না নির্মল, রাকেশ, অরিন্দমরা। করিম বেঞ্চারিফার টিমের সবার মন যে তখন ময়দান থেকে অনেক দূরে দিল্লির ফুটবল হাউসে। অসুস্থ শরীর নিয়েই সকাল সকাল ক্লাবে হাজির রহিম নবিও। প্রত্যেকেরই জিজ্ঞাসা ছিল একটাই। “দিল্লিতে কী হল কিছু জানা গেল?”
হাজার চাপান উতোরের মাধ্যেও কোথাও যেন একটা বিশ্বাস ছিল যে, অন্তত নির্বাসিত হতে হবে না মোহনবাগানকে। সকালেও অনুশীলন সেরে ক্লাব থেকে বেরনোর আগে ওডাফা বলছিলেন, “ভগবানের ওপর বিশ্বাস আছে। মোহনবাগানের কিছু হবে না।” অন্য দিকে কিছুটা উৎকন্ঠা নিয়ে নিজেকেই হয়তো আশ্বস্ত করছিলেন টোলগে। “কর্তারা আছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।” |
কিন্তু সকালের আশার আলো দুপুরের পরেই অন্ধকার। আই লিগ থেকে নজিরবিহীন নির্বাসনের খবরে। আর তখন থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ক্লাব-তাঁবুতে সদস্য, সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। উত্তপ্ত হতে থাকে ক্লাবের পরিবেশ। এরই মধ্যে ওডাফাকে ফোনে তাঁর ক্লাবের নির্বাসনের খবর দেওয়া হলে রীতিমতো চমকে ওঠেন। ডার্বি ম্যাচে লালকার্ড দেখা ফুটবলারটি প্রথমে তো বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না। পরে হতাশ গলায় বললেন, “আমি এখনও এটা মানতে পারছি না। ভারতীয় ফুটবলে এটা বড় ধাক্কা।” টোলগে তো প্রথমে খবরটা শুনে কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তার পর বললেন, “এটা আমার কাছে অত্যম্ত দুঃখের। আলাদা করে কী আর বলব!”
অন্য দিকে চিন্তিত নবি যেমন বারবার জানতে চাইছিলেন, “শাস্তি মকুব হওয়ার কি কোনও পথ নেই? আই লিগ খেলতে না পারলে তো এই মরসুমে ফুটবল খেলাটাই বৃথা!” নিমর্ল ছেত্রী অবশ্য আশা ছাড়ছেন না। বললেন, “ক্লাব-কর্তারা নিশ্চয়ই কোনও পথ বার করবেন। আর মোহনবাগানের হয়ে যখন খেলতে এসেছি তখন খারাপ সময়ে ক্লাবের পাশে থাকতেই হবে।” নির্মলের মতোই আশাবাদী কোচ করিম বেঞ্চারিফাও। বললেন, “এই শাস্তি থেকে রেহাইয়ের জন্য ক্লাব-কর্তারা নিশ্চয়ই কোনও পথ খুঁজে বের করবেন।”
ফুটবলারদের এই হতাশার রেশ ধরেই ক্লাবের এক প্রবীণ সমর্থক বলছিলেন, “সব দিক থেকে আমরা শেষ হয়ে গেলাম। এর দায় কার জানা নেই। তবে, আই লিগই যদি খেলতে না পারলাম, তা হলে কি আর ক্লাব হিসেবে মোহনবাগানের ফুটবল খেলার কোনও গুরুত্ব থাকবে?” তাঁবুর ভেতর যখন গুরুগম্ভীর কর্তাদের অনেকের মধ্যে জোর আলোচনা তখন বাইরে দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্লোগান আর পোস্টারে ছয়লাপ গোটা মোহনবাগান চত্বর। কেউ কেউ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তো, কেউ আবার ক্লাব-কর্তাদের বিরুদ্ধে রাগ উগড়ে নিজের মনের জ্বালা মেটাচ্ছেন। অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত ক্লাবে ঢোকার মুখে এক সমর্থক তো কাঁদতে কাঁদতে তাঁর পা ধরে অনুরোধ করছিলেন, “আমাদের মোহনবাগানকে বাঁচান!” গোষ্ঠ পাল সরণী অবরোধ করে প্রতিবাদ জানালেন কয়েকশো সমর্থক। রাস্তায় শুয়ে পড়ে। বিকেলে সচিব অঞ্জন মিত্র যখন ক্লাবে ঢুকছেন তখন পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। কর্তাদের পদত্যাগের দাবি তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন সমর্থকরা।
চোখের জল আর ক্ষোভে যখন মোহন-সমর্থকরা ডুবে তখন ভবানীপুরের হয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত হোসে ব্যারেটো। মোহনবাগানের নির্বাসনের খবর শুনে প্রথমে মুখটা যেন একটু ফ্যাকাশেই দেখাল। আসলে ছেড়ে আসা ক্লাবের বহু উত্থান-পতনের যে সাক্ষ্মী তিনি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “আমার খুব খারাপ লাগছে। এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা। বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের বড় ক্ষতি।” |