অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার ধাক্কায় পাতাল রেলের সামনে পড়ে গিয়ে নিহত হন এক ব্যক্তি। নিউ ইয়র্কের কুইনস স্টেশনে বৃহস্পতিবারের ঘটনা। ১১ কামরার ট্রেনের তলায় তালগোল পাকিয়ে যায় তাঁর দেহ। ফলে তখন মৃতদেহ চিহ্নিত করা যায়নি। পরে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তাঁর পরিচয় উদ্ধার করল পুলিশ। জানা গিয়েছে, ৪৬ বছরের ওই মৃত ব্যক্তি প্রবাসী বাঙালি। নাম সুনন্দ সেন। ভারতে তাঁর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ মুখপাত্র পল ব্রাউন জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি অনুযায়ী, ওই অজ্ঞাতপরিচয় মহিলা
|
সুনন্দ সেন |
বেশ কিছু ক্ষণ ধরে সুনন্দর পিছু নেন এবং নিজের মনেই বিড়বিড় করতে থাকেন। ঘটনার সময় সুনন্দ প্ল্যাটফর্মে হাঁটছিলেন। ওই মহিলা বসেছিলেন প্ল্যাটফর্মের কাঠের বেঞ্চে। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকলে হঠাৎ বেঞ্চ থেকে উঠে সুনন্দ সেনকে পিছন থেকে ধাক্কা মারেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনের সামনে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই ওই মহিলা দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তার জনতার সঙ্গে মিশে যান।
স্টেশনের কাছে থাকা নজরদারি ক্যামেরায় ধরা পড়া একটি অস্পষ্ট, সাদা-কালো ভিডিও ফুটেজে ওই মহিলাকে দৌড়ে পালাতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বছর কুড়ি-পঁচিশের ওই মহিলা স্পেনীয়। তাঁর উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। ঘটনার সময় নীল-সাদা জ্যাকেট, লাল প্যান্ট ও পা ঢাকা জুতো পরেছিলেন।
অপরাধীর একটি সাদা-কালো ছবি কুইনস স্টেশন চত্বরের সর্বত্র লাগানো হয়েছে। ওই মহিলা সম্পর্কে কোনও তথ্য জানাতে পারলে বারো হাজার ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ ইয়র্কের এলমহার্স্ট অঞ্চলে আরও চার জনের সঙ্গে একটি ছোট বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সুনন্দ। তাঁর রুমমেটরা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন সুনন্দ। এক ভারতীয় রুমমেট এ আর সুমন জানিয়েছেন, সুনন্দ অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবা-মাও মারা গিয়েছেন। উচ্চ-শিক্ষিত এবং পরিশ্রমী সুনন্দ এই বছরেই ম্যানহাটনের পশ্চিমে একটি ছোট ছাপাখানার ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সপ্তাহের সাত দিনই উদয়াস্ত পরিশ্রম করতেন তিনি। কারও সঙ্গেই তাঁর কোনও বিবাদ ছিল না। ন’মাস আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। যদিও সেই কারণে তাঁর কাজের গতিতে ভাটা পড়েনি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এই মৃত্যু বলে জানিয়েছেন সুমন।
তবে এই ঘটনা নিউ ইয়র্কে নতুন নয়। চলতি মাসেই কি-সাক হান নামে ৫৮ বছরের এক ব্যক্তি একই ভাবে নিহত হয়েছেন। ৩০ বছরের এক ঘর ছাড়া যুবক নাইম দাভিস টাইমস স্কোয়ার স্টেশনে ট্রেনের সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তাঁকে।
নিউ ইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ জানিয়েছেন, “এ রকম ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এগুলি আটকানোও মুশকিল। পাতাল রেলের প্ল্যাটফর্মগুলি খোলা থাকে, সেগুলির কাঠামো বদল করা সম্ভব নয়। মানসিক ব্যধিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই এ রকম হত্যা করে থাকে।”
সুনন্দ সেনের মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশে স্টেশনগুলির দেওয়ালে পোস্টার সাঁটা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। |