সৌমিত্র কুন্ডু • শিলিগুড়ি |
শহরের রাস্তা যেন ক্রমশ চলে যাচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে। দিনের বেলায় ৮-১০টি কুকুর রাস্তা জুড়ে ঘুরছে এমন নিয়মিত দেখা যায়। রাত নামলে সংখ্যা বেড়ে হয়ে যায় ২৫-৩০টি। বিশেষত, মাংসের দোকান বা খাবারের হোটেলের সামনে কুকুরের জটলায় পথ চলা দায়। একটু বেশি রাতে বেশি বিপাকে পড়েন বাইক, সাইকেল আরোহীরা। কুকুরের তাড়ায় দুর্ঘটনাও কম ঘটছে না। অন্তত হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পরিসংখ্যান তেমনই বলছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গড়ে রোজ কুকুরের তাড়ায় দু’তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে। ক’দিন আগেই কংগ্রেসের এক যুব নেতা কুকুরের তাড়ায় বাইক উল্টে পড়ে গুরুতর জখম হন। পাশাপাশি, কুকুরের কামড়ে জখমের সংখ্যা যেন দিন দিন বাড়ছে।
পথ-কুকুরের দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ শহরবাসী তাই পুরসভার ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা পরিস্থিতিকে অসহনীয় করেছে। অথচ পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত ছ’বছরে শহরে পথ কুকুরের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়ে বর্তমানে প্রায় ন’হাজারের কাছে। কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ছ’বছর আগে বাম পুর বোর্ডের আমলে পথ কুকুরের নির্বীজকরণ কর্মসূচি শুরু হয়। তা অনিয়মিত হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। বর্তমান পুরবোর্ডও গত তিন বছর ধরে সে ভাবে কিছু করে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ।
কুকুরে সংখ্যা যে দিনে দিনে মাত্রা ছাড়াচ্ছে সে ব্যাপারে একমত কাউন্সিলর থেকে আমজনতা, পশুপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠনও। কুকুরের সংখ্যা বাড়ায় সমস্যার কথা স্বীকার করেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “কুকুরের জন্য বিভিন্ন এলাকায় সমস্যার কথা অনেকেই জানান। শীঘ্রই কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নির্বীজকরণ কর্মসূচি শুরু করতে চলেছি।” পুরসভার সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত জানিয়েছেন আগামী জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে থেকে কুকুরের নির্বীজকরণ কর্মসূচি শুরু হবে।
বাম জমানায় পুরসভার মেয়র ছিলেন বর্তমানে বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, তাঁরাই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। তবে সে সময় সরকারি ভাবে এর জন্য অর্থ সাহায্য পাওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে মেলেনি। পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকেই ওই কাজ করা হত। নুরুলবাবুর অভিযোগ, “এখন যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন তারা লোক দেখানো কাজ করতে চাইছেন। সেটাও দু’দিন পর বন্ধ হয়ে যাবে।”
২০১০ সালের জুলাই মাসে বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ নির্বীজকরণ কর্মসূচি নেয়। সে বার চার দফায় ২৮০টি কুকুরকে নির্বীজকরণ করা হয়। সেই থেকে এখনও কোনও নির্বীজকরণ কর্মসূচি করতে পারেননি পুর কর্তৃপক্ষ। নিজেদের পরিকাঠামো না থাকায় পশুপ্রেমী সংস্থাকে দিয়েই ওই কাজ করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পুরসভারই একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৬ সালে শুরুতে যে পশুপ্রেমী সংস্থাকে দিয়ে ওই কাজ করানো হত তাদের বাদ দিয়ে অন্য একটি সংস্থাকে দিয়ে নির্বীজকরণের কাজ করানো হয়। তাতে প্রথম সংস্থাটি কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করে। তাঁরা আর কাজ করতে চায়নি। শুরু থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৬ দফায় ৪৫০ টি কুকুর নির্বীজকরণ করা হয়। এর পর তা বন্ধ ছিল।
বাসিন্দাদের একাংশ নির্বীজকরণ কর্মসূচি অনিয়মিত হওয়ার জন্য পুরসভার উদাসীনতা কেউ দায়ী করেছেন। পুরসভার সাফাই বিভাগের তরফেই ওই কাজ দেখভাল করা হয়। ওই বিভাগের দায়িত্বে থাকা দুলালবাবু জানান, দীর্ঘ আড়াই বছর ওই কর্মসূচি বন্ধ ছিল। শুরুতে কংগ্রেস একাই পুর বোর্ড গঠন করেছিল। বছর দেড়েক তৃণমূল তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে জোটের পুর বোর্ড গঠন করেছে। এ বার থেকে তাঁরা ওই কাজ নিয়মিত করবেন। যে পশুপ্রেমী সংস্থা নির্বীজকরণের কাজ করবে তার অন্যতম কর্মকর্তা শ্যামা চৌধুরী জানান, কুকুরের সংখ্যা শহরে লাফিয়ে বাড়ছে। তা নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়ম মেনে নিয়মিত নির্বীজকরণ কর্মসূচি হওয়া দরকার।
|
পরিবেশ মেলা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান কেন্দ্রের উদ্যোগে ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউটের মাঠে শুরু হবে ‘পরিবেশ মেলা ২০১২’। মেলা চলবে রবি ও সোমবার। মেলায় থাকবে নানা প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। |