শ্যামপুর ২ ব্লকের আমড়দহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বছর দুই আগে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে ঝাঁ-চকচকে নতুন ভবন। উদ্দেশ্য, ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করা। ভবনটি তৈরি করেছে হাওড়া জেলা পরিষদ। স্বাস্থ্য দফতরকে তা হস্তান্তরও করে দেওয়া হয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রের খবর। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ হয়নি। ফলে চালু হয়নি অন্তর্বিভাগ। স্বাস্থ্য দফতরের গড়িমসিতে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাসিন্দারা।
জগৎবল্লভপুরের মাজু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বছর দুই আগে তৈরি হয়েছে নতুন ভবন। এটিকেও ১০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার কথা। ভবনটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। তৈরির পরে এটিকেও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের হাতে। কিন্তু এখানে দেখা মিলবে না চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর।
শুধু আমড়দহ বা মাজু নয়, হাওড়া জেলা জুড়ে ২৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই হাল। এই ২৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করার কথা।
তিনটি বাদ দিয়ে প্রতিটির ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে। একমাত্র শ্যামপুর ১ ব্লকের নবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালু হয়েছে অন্তর্বিভাগ। বাকিগুলিতে চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়নি। ফলে এই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অন্তর্বিভাগ চালু করা যায়নি।
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে ২০০২ সালের গোড়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাছাই করা কয়েকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করা হবে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক সময়ে অন্তর্বিভাগ চালু থাকলেও পরে সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। এগুলি তো বটেই আরও নতুন কিছু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে অন্তর্বিভাগ চালুর জন্য নির্বাচিত করা হয়। একেকটি ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ করা হয় গড়ে ৬০ লক্ষ টাকা করে। শুধু ভবন তৈরি নয়, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য আবাসন তৈরিরও কথা হয়।
প্রথম পর্যায়ে মোট ১৪টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে আমতা ২ ব্লকের ভাটোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া বাকি ভবনগুলি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এগুলি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য দফতরকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে সংখ্যালঘু এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে আরও ১৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে বাছাই করা হয়। সেগুলির ভবন তৈরির কাজ শেষ। দু’টি বাদ দিয়ে বাকিগুলি স্বাস্থ্য দফতরকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দু’টি পর্যায়ে মোট ২৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন তৈরির দায়িত্ব আমরা পাই। তিনটি বাদ দিয়ে বাকি ভবনগুলির কাজ শেষ করে তা স্বাস্থ্য দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিকে, অন্তর্বিভাগ চালু না-হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা যেমন পরিষেবা পাচ্ছেন না। আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনগুলির ক্ষতিও হচ্ছে। কয়েকটি জায়গা সমাজবিরোধীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। শ্যামপুরের কংগ্রেস নেতা আতিয়ার খান বলেন, “আমড়দহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য দফতর-সহ বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ভবনটি কেন তৈরি হল বুঝতে পারছি না।”
সমস্যাটির কথা স্বীকার করে সিএমওএইচ দেবাশিস রায় বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অন্তর্বিভাগ চালু করতে হলে কত জন চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী লাগবে তার তালিকা তৈরি করে ওই সব পদে নিয়োগের জন্য আমরা স্বাস্থ্যভবনে আবেদন জানিয়েছি। নিয়োগ হলে ওই সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করে দেওয়া হবে।” |