ক্ষমা চেয়ে নিলেও সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানকে রেহাই দিতে রাজি নয় তৃণমূল।
ইতিমধ্যেই আনিসুরের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস বিধানসভার স্পিকারের কাছে জমা দিয়েছেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আনিসুরের ক্ষমা চাওয়ার পরেও ওই নোটিস প্রত্যাহার করা হচ্ছে না বলে শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “ওটা এখন বিধানসভার বিষয়। বিধানসভাতেই ফয়সালা হবে। বাংলার মানুষ ওই কুরুচিকর মন্তব্যকে সহজে ক্ষমা করবে না।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মহাকরণে জানান, আনিসুরের মতো মানুষদের ‘সামাজিক বয়কট’ করা উচিত। আনিসুরের কটূক্তি নিয়ে সুব্রতবাবু বৃহস্পতিবারই মহাকরণে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। একই ঘটনা নিয়ে এ দিন ফিরহাদকে সঙ্গে নিয়ে ফের সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি।
সুব্রতবাবুর কথায়, “৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আমাদের দেড় বছরের ক্ষমতাকে ওরা সহ্য করতে পারছে না। আনিসুরের মন্তব্য ধামাচাপা দিতে সিপিএমের শ্যামল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ড্যামেজ কন্ট্রোল বাহিনী নেমে পড়েছে। এটাই ওদের ট্র্যাডিশন। এর আগে অনিলবাবু (বসু) বলেছেন, দল তাঁকে ভর্ৎসনা করেছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে কি? সিপিএমের কাছে আমরা এ সব প্রত্যাশা করি না।”
ফিরহাদের অভিযোগ, কমিউনিস্টরা সংস্কৃতি নষ্ট করেছে। রাজ্যের মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের হুমকি প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, “হুমায়ুন কী বলেছেন, আমি জানি না। এর সঙ্গে গুলিয়ে দেবেন না। বাংলায় মা-বোনেদের সম্মান আগে। আমরা দুর্গা, কালীকে পুজে করি।” পুরমন্ত্রী আরও বলেন, “এই অপরাধের কোনও ক্ষমা হয় না। সমাজবিরোধী বললেও কম বলা হয়। বাংলায় নারীর সম্মান আগে। মা বোনেদের অপমান সহ্য করব না।” এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেসেরও সমালোচনা করেছেন তাঁরা। কংগ্রেস এখন নীরব কেন, তা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। আনিসুরের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে এ দিন কলকাতা পুরসভার কর্মীদের নিয়ে ধর্মতলা এলাকায় মিছিল করেন সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আনিসুরকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছেন তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ইদ্রিশ আলিও।
রাজনীতিতে শাসক-বিরোধী দলের নেতাদের একাংশ যে শালীনতা ও সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন করছেন, তা নিয়ে এ দিন সরব ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। প্রদীপবাবু বলেন, “আমরা কোন জায়গায় যাচ্ছি! মুখে যা আসে তা-ই বলব, এটা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছ থেকে মানুষ আশা করে না।” দীপার মন্তব্য, “এখন ভাষা-সন্ত্রাস চলছে। শাসক বা বিরোধী নেতারা হতাশা ও নিরাপত্তা বোধের অভাব থেকেই এমন সব কটূক্তি করছেন।”
ধর্ষণের বিরুদ্ধে দিল্লিতে প্রতিবাদ আন্দোলনকে রাষ্ট্রপতি-পুত্র সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষের প্রসঙ্গে দীপা বলেন, “আমাদের সাংসদের বক্তব্যের নিন্দা করা
হয়েছে এবং তিনি তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারও করেছেন।” আনিসুর ও অভিজিতের কটূক্তি নিয়ে এ দিন দিল্লিতে বিজেপি-র মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “উভয়ের মন্তব্যই দুর্ভাগ্যজনক। নিন্দনীয়। পচন ধরা মানসিকতার পরিচয়।” |
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের অশালীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের সরব প্রতিবাদের পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে উঠল রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও। প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুরের ওই মন্তব্যের ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছে তারা। কমিশনের যুগ্মসচিব সুজয়কুমার হালদার শুক্রবার জানিয়ে দেন, স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই তাঁরা এই নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আনিসুর তো বর্তমান সরকারের কেউ নন। সে-ক্ষেত্রে তাঁর কোনও মন্তব্যের ব্যাপারে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এমন নির্দেশ দিতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “বিধায়ক এক জন পাবলিক সার্ভেন্ট (জনগণের সেবক)। তাই কমিশন কোনও বিধায়কের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দিতেই পারে।” আনিসুরের উক্তি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কি না, জানতে চাওয়া হলে অশোকবাবু বলেন, “আইনে মানবাধিকারের যে-সংজ্ঞা দেওয়া আছে, সেই অনুযায়ী মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হলে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বিধায়কের উক্তিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মর্যাদাহানি হয়েছে বলেই মনে করি।” |