ক্ষমতায় এলে শিক্ষা থেকে রাজনীতি দূর করা যাদের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল, সরকারে আসার পরে সেই তৃণমূলের দলীয় ভবনে উদ্বোধন হল দলের অনুমোদনপ্রাপ্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুপা) ওয়েবসাইটের। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে ওই ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান ব্রাত্য বসু ও সাংসদ তথা দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
এই অগস্টেই তৈরি হয় তৃণমূলপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’। শিক্ষক সংগঠনের গায়ে রাজনৈতিক দলের তকমা লাগানো যায় কি না, প্রশ্ন ওঠে। শুক্রবার ‘ওয়েবকুপা’র সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু জানান, রাজ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবথেকে বড় সংগঠন ‘ওয়েবকুটা’র পাল্টা হিসেবেই এই সংগঠন তৈরি করেছেন তাঁরা। সংগঠনের নেতারা জানান, তাঁরা তৃণমূলের অনুগামী। তাঁদের ওয়েবসাইটেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রয়েছে। কৃষ্ণকলি বসু বলেন, “মুখে সর্বদলীয় সংগঠন বলা হলেও বহু বছর ধরে ওয়েবকুটা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অঙ্গুলি হেলনেই চলে। তাই বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওয়েবকুটা ত্যাগ করেছি। ইতিমধ্যেই সংগঠনে যোগ দিয়েছেন আড়াই হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা।” ব্রাত্যবাবু জানান, ওয়েবকুপা-র সদস্য হলে অন্য কোনও সংগঠনের সদস্য হওয়া যাবে না। যদিও এর কারণ কী, সে সম্বন্ধে কিছু জানাননি তিনি। সংগঠনের নেতাদের এই মনোভাব নিয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেরই। ওয়েবসাইট উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েক জন শিক্ষকের বক্তব্য “এত দিন ওয়েবকুটা করেছি। চাঁদা দিয়েছি। এখন সব ছেড়ে অন্য সংগঠন করতে হবে কেন? ওয়েবকুটায় থেকেই তো বিরোধিতা করা যেত!” ওয়েবকুটায় এখনও বামপন্থী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রভাবই বেশি। শেষ ভোটেও বাম-সমর্থক শিক্ষকেরাই জয়ী হয়েছেন। সিপিএম পরিচালিত হলেও ঘোষিত ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের অনুমোদনের কথা বলেনি ওয়েবকুটা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তরুণ পাত্র বলেন, “ওয়েবকুটায় সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে অ-বাম শিক্ষকেরা রয়েছেন। এগজিকিউটিভ বডিতে ওঁরা রয়েছেন। কী করে একে সিপিএমের সংগঠন বলা যায়?” তাঁর দাবি, এখনও ওয়েবকুটার কোনও সদস্যই সংগঠন থেকে ইস্তফা দেননি। তা হলে কী করে ওয়েবকুপা-র সদস্য সংখ্যা আড়াই হাজার হল, প্রশ্ন তুলেছেন তরুণবাবু।
বাম আমলে শিক্ষায় সর্বক্ষেত্রে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের হস্তক্ষেপে কার্যত দমবন্ধ অবস্থা হয় শিক্ষকদের একটা বড় অংশের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তাঁরা আশা করেন, রাজনৈতিক ফাঁস থেকে কিছুটা মুক্তি মিলতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, উল্টো ছবি। কোথাও কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য হওয়ার জোরে তৃণমূল নেতারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করছেন, কোথাও তৃণমূল সমর্থক ছাত্রছাত্রীদের হাতে হেনস্থা হচ্ছেন অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষারা। এ বার তৃণমূল ভবনে দলীয় শিক্ষক সংগঠনের ওয়েবসাইট উদ্বোধন হওয়ায় এবং সেই সংগঠনের অফিস ও তৃণমূল ভবনের ঠিকানা একই হওয়ায় শিক্ষাক্ষেত্রকে রাজনীতিমুক্ত করার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ব্রাত্যবাবু বলেন, “তৃণমূল শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান হিসেবে ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করেছি। আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে, রাজনীতি করার বিরুদ্ধে নয়। রাজনীতি করার অধিকার অধ্যাপকদেরও আছে। ভারতবর্ষের সংবিধান তা-ই বলে।” কিন্তু শিক্ষক সংগঠনের অনুষ্ঠান তৃণমূল ভবনে কেন? মন্ত্রীর জবাব, “কারণ এটি তৃণমূলের অনুমোদিত সংগঠন।” |