ওয়েবেল-কে দিয়ে সেট টপ বক্স তৈরি সম্পর্কে মন্ত্রীর ঘোষণা শুনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন রাজ্য সরকারি শিল্পসংস্থাটির কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, সেট টপ বক্স তৈরির মতো আর্থিক ও প্রাযুক্তিক সামর্থ্য ওয়েবেলের নেই। পাশাপাশি এ বিষয়ে সংস্থাটির কোনও আইনি অধিকারও নেই বলে কেন্দ্রীয় সূত্রের দাবি।
রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বৃহস্পতিবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ওয়েবেল সেট টপ বক্স তৈরি করছে। তেমন একটি যন্ত্রও সাংবাদিকদের সামনে পেশ করেন তিনি। খোদ মন্ত্রীর মুখে এ হেন ঘোষণায় সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিরা কিন্তু যারপরনাই বিব্রত। তাঁরা জানাচ্ছেন, সেট টপ বক্স তৈরি করা এই মুহূর্তে ওয়েবেলের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন?
তাঁরা বলছেন, যে জিনিসটি ছাড়া সেট টপ বক্স অচল, সেই চিপ ওয়েবেল তৈরি করে না। “গোটা বিশ্বের মাত্র আটটি সংস্থা ওই চিপ বানায়। তাদের থেকে চিপ কেনার মতো আর্থিক সঙ্গতি আমাদের তো নেই-ই, উপরন্তু কয়েক লক্ষ সেট টপ বক্স তৈরি করার মতো যান্ত্রিক পরিকাঠামোও নেই। তাই প্রযুক্তিগত ভাবে ওয়েবেল এখন সেট টপ বক্স তৈরি করতে পারবে না।” বলেন সংস্থার এক সূত্র।
তা হলে নগরোন্নয়নমন্ত্রী কীসের ভিত্তিতে ও কথা বললেন?
ওয়েবেল মিডিয়াট্রনিক্সের (বর্তমানে ওয়েবেলের একমাত্র সক্রিয় ইউনিট) জেনারেল ম্যানেজার অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “মন্ত্রীর দেখানো যন্ত্রটা একটা মডেল। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হাতে পেতে আমরা একটা বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করব। যত দিন না চুক্তি হচ্ছে, তত দিন যন্ত্রটি সরাসরি আমদানি করে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
ওয়েবেল-কর্তা এই দাবি করলেও এমন চুক্তি করার কোনও এক্তিয়ারই তাঁদের নেই বলে মনে করছে ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস ইন্ডিয়া লিমিটেড (বেসিল)। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির এক সূত্র শুক্রবার দিল্লি থেকে জানিয়েছেন, বিদেশের যে আটটি সফ্টওয়্যার কোম্পানি সেট টপ বক্সের চিপ বানায়, তাদের সঙ্গে সেট টপ বক্স নির্মাতা চিনা ও কোরীয় তিনটি ইলেকট্রনিক্স সংস্থার মেধাস্বত্বের লিখিত চুক্তি রয়েছে, যার মেয়াদ আগামী দশ বছর। এর মধ্যে অন্য কেউ চিপ কিনলে চুক্তিভঙ্গের দায়ে পড়বে। বেসিল-সূত্রের মন্তব্য, “জার্মানি, আমেরিকা, ইজরায়েল, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসের সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলো চিন ও কোরিয়ার ওই তিন সংস্থা ছাড়া অন্য কাউকে চিপ বিক্রি করবে না। করলে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হয়ে যাবে। সে কারণেই ভারতে সেট টপ বক্স তৈরি হয় না।” ওয়েবেল মিডিয়াট্রনিক্সের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “ভারতে আর কোনও সংস্থা সেট টপ বক্স বানায় বলে আমাদের জানা নেই।” অর্থাৎ, আপাতত চিন-কোরিয়ার তিন সংস্থা ছাড়া সেট টপ বক্স তৈরির সুযোগ কারও নেই। এবং সে ক্ষেত্রে আমদানি-ই একমাত্র উপায়। কিন্তু ওয়েবেল-সূত্রের খবর: সেট টপ বক্স আমদানির ব্যাপারেও চিন-কোরিয়ার ওই তিন সংস্থার কারও সঙ্গে তাদের কোনও চুক্তি হয়নি। তা হলে কে আমদানি করবে?
এ প্রসঙ্গে মহাকরণ-সূত্রে একটি বিশেষ ব্যবসায়ী মহলের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অভিযোগ, ওয়েবেলকে সামনে রেখে কার্যত এমন এক জন ব্যবসায়ীকে সেট টপ বক্স আমদানির বরাত দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যিনি সরকারের একাংশের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সূত্রের দাবি, এমএসও-রা এখন চিন-কোরিয়া থেকে যে ভাবে সেট টপ বক্স আমদানি করে, সে ভাবে তিনিও যন্ত্র এনে ওয়েবেল মারফত এমএসও-দের বিক্রি করবেন। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। |