মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোর করে জমি নেওয়ার বিরোধিতা এখন বুমেরাং হয়ে উঠেছে ইন্দাসের পরীক্ষাপাড়া গ্রামে। ছোট গ্রাম্য রাস্তা তৈরির জন্যও কয়েক জন চাষি সেখানে জমি দিতে চাইছেন না। আর সেই জমি নেওয়ার জন্য সিপিএমের পঞ্চায়েতের সঙ্গে চাষিদের উপর জোর জবরদস্তি করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার মঙ্গলপুর পঞ্চায়েতের পরীক্ষাপাড়ার পাঁচ বর্গা চাষি ইন্দাসের বিডিও-র কাছে এই মর্মে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইন্দাসের বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায়।
সিপিএম পরিচালিত মঙ্গলপুর পঞ্চায়েত ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে পরীক্ষাপাড়া গ্রামে ২০০ মিটার রাস্তা করার কাজ শুরু করেছে। এলাকার কিছু চাষের জমির উপর দিয়েই ওই রাস্তা তৈরি হচ্ছে। আগে এলাকার লোকেরা বেতানল যাওয়ার বড় রাস্তায় পৌঁছতে জমির আলপথ ধরে যেতেন। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই আলপথের উপরেই মাটি ফেলে আট ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। মাটি ফেলার কাজ শেষ। এ বার মোরামের কাজ বাকি। কিন্তু ওই পাঁচ বর্গাচাষি জমি দেবে না বলে আপত্তি তোলায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। |
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মাটি ফেলা নতুন রাস্তার দু’পাশে টম্যাটো ও শশার খেত। ওই পাঁচ চাষি কৃষ্ণপদ মাঝি, দেবলাল মাঝি, শ্রীকান্ত মাঝি, গৌতম মাঝি ও উত্তম মাঝিরা নতুন রাস্তা দেখিয়ে বলেন, “ওখানে কোনও রাস্তাই ছিল না। সরু আলপথ ধরে আমরা যাতায়াত করতাম। রাস্তার জন্য জমির এক পাশ ছাড়তে রাজি হয়েছিলাম।” তাঁদের অভিযোগ, “পঞ্চায়েতের কাছে সেই অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তারা জোর করে আমাদের জমির মাঝখানেই রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করে। রাস্তার অর্ধেক আমাদের জমির উপর দিয়েই হচ্ছে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামের শ্যামল মাঝি, লক্ষ্মীকান্ত পালের নেতৃত্বে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা আমাদের গ্রামছাড়া করার হুমকি দেয়।” ওই দুই ব্যক্তি এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয়া কর্মী বলে পরিচিত। তাঁদের দাবি, “গ্রামের মানুষের সুবিধার জন্যই ওই রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। প্রত্যেককেই এক-দু’হাত জমি ছাড়তে হয়েছে। এই সামান্য ত্যাগ না করলে রাস্তা তৈরি হবে কী করে? তবে আমাদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।” মঙ্গলপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সিপিএমের সুষমা ঘোষও দাবি করেন, “জোর করে জমি নিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে না। ওখানকার পায়ে চলার রাস্তাই কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য অনেকেই স্বেচ্ছায় জমি ছেড়েছেন। শুধু কয়েকজন গণ্ডগোল পাকানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ করে উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছেন।”
ওই চাষিদের নিজেদের দলের সমর্থক দাবি করে জমি নেওয়ার বিরোধিতা করেছেন সিপিএমের ইন্দাস জোনাল সম্পাদক অসীম দাস। তিনি বলেন, “তৃণমূলের চাপে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। এখন উপপ্রধানকে দিয়ে তৃণমূল বর্গাচাষিদের জমিতে জোর করে রাস্তা তৈরি করাচ্ছে।” তৃণমূলের ইন্দাস ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক গুরুপদ মেটের দাবি, “সিপিএমের পঞ্চায়েতই ওই গ্রামে রাস্তা তৈরি করছে। তবে আমরা জোর করে জমি নেওয়ার বিরোধী। বিশদে খোঁজ নেব।” ইন্দাসের বিডিও বলেন, “রাস্তা তৈরি করা নিয়ে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, যুগ্ম বিডিও তা দেখছেন।” |