ফিরে দেখা
ছেলের খুনির সাজার অপেক্ষায় দিন কাটে
জও যেন বাড়ির গেটের সামনে ঘাসের উপর রক্তের ফোঁটাগুলো স্পষ্ট দেখতে পান সুলেখা দেবী। আচমকা গুলির শব্দে চমকে ওঠেন তিনি। সেই গুলির শব্দযার আঘাতে লুটিয়ে পড়েছিল তাঁর জোয়ান ছেলে বাবু। না, কোনও রকম পুরোনো শত্রুতা নয়। নয় তাৎক্ষণিক আক্রোশ। বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে কোনও কারণ ছাড়াই কৃষ্ণনগরের উত্তর কালীনগরের বাসিন্দা অনুপ ঘোষের (২৫) বুকে গুলি চালিয়ে দিয়েছিল প্রতিবেশী খোকন বিশ্বাস। ব্যস, সব শেষ! হাসপাতালে যাওয়ার পথেই সব শেষ! কিন্তু কেন? দিবানিশি সেই প্রশ্নেরই উত্তর হাতড়ে চলেছেন সুলেখা দেবী। উত্তর মেলে না। শুধু বুকের ভেতরটা হু-হু করে। একটানা কেঁদে কেঁদে চোখের জলও যেন শুকিয়ে গেছে। ছেলের কথা উঠলে এখন শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। দু’চোখে একটাই জিজ্ঞাসা, “আমার বাবুর হত্যাকারী খোকন কবে ধরা পড়বে? ওর কি কোনও শাস্তি হবে না? পুলিশ তো এত কিছু পারে। তা হলে খোকনকে কেন ধরতে পারছে না? না কি সে-ভাবে চেষ্টাই করছে না?” এ ভাবেই একের পর এক প্রশ্ন তিনি ছুড়ে দেন। উত্তর আশা করেন না। কারণ, এই ক’মাসের অভিজ্ঞতায় তিনি বুঝতে পেরেছেন, সুবিচার পেতে গেলে শুধু মায়ের চোখের জলই যথেষ্ট নয়তার জন্য আরও ‘অন্য কিছু’রও প্রয়োজন! আইসি অলোক মুন্সি অবশ্য আশ্বাস দেন, “খুব শিগগিরই ধরা পড়বে খোকন।”
একটি আমানত সংস্থায় কাজ করতেন বছর পঁচিশের অনুপ ঘোষ। বিশ্বকর্মা পুজোর পরের দিন রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ এক বন্ধুর ডাকে বাড়ির গেটের সামনে এসে গল্প করছিলেন দু’জনে। আর তখনই আচমকা তার সামনে এসে দাঁড়ায় খোকন বিশ্বাস। অনুপের বাবা সত্যরঞ্জনবাবু বলেন, “মাঠে একটা ছেলে মদ খেয়ে বমি করেছিল। সেই বমি ধোওয়ার জন্য বাবুর কাছে একটা বালতি চায় খোকন। কিন্তু বাবু খোকনের কথায় গুরুত্ব না দেওয়ায় খোকন পিস্তল বের করে নাচাতে থাকে।” তিনি বলেন, “বাবু স্বপ্নেও ভাবেনি যে, এমনটা হতে পারে। পিস্তলটা যখন নাচাচ্ছিল, তখনও বাবু হাসতে হাসতে বলছিল, ‘গুলি চালা তো দেখি, কেমন পারিস’! খোকন কিন্তু সত্যিই গুলিটা চালিয়ে দিল! এখনও যেন বিশ্বাস হয় না।”
সময় চলে যায় স্রোতের মতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাকি ফিকে হয়ে যায় স্মৃতি। সুলেখা দেবী কিন্তু তা বিশ্বাস করেন না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বুকের ভেতর পাথরের মতোই আরও চেপে বসছে স্মৃতিগুলো। তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। সন্তানের ছবি আঁকড়ে থেকেই কেটে যায় দিনের অনেকটা সময়। বাবুর ব্যবহার করা জিনিসগুলো কারা যেন একে একে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়েছে। নিজের মাইনের টাকায় কেনা মোটর বাইকটা শুধু রূঢ় বাস্তবের মতো দাঁড়িয়ে আছে ঘরের এক কোণে। মাঝেমধ্যে কারা যেন এসে মোটর বাইকটাতে স্টার্ট দিয়ে যায়। বাইকের শব্দের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বাবুর আর্তনাদ!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.