|
|
|
|
ফের ক্ষমা চাইলেন মন্ত্রী |
ধার করেই বিনিয়োগ, দাবি করলেন হুমায়ুন |
শুভাশিস সৈয়দ • বহরমপুর |
নিজের মোট ঘোষিত সম্পত্তির প্রায় সমপরিমাণ টাকা তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে পান বলে দাবি করলেন প্রাণিসম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। রেজিনগরের বিধায়ক হুমায়ুন গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তি ১ কোটি চার লক্ষ ৬৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। এখন তাঁর দাবি, ওই বেসরকারি সংস্থার কাজে তিনি মোট ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন।
কী করে তা সম্ভব? হুমায়ুনের যুক্তি, “ওই বেসরকারি সংস্থার কাজে নিজের থেকে দিয়েছিলাম ৪৩ লক্ষ টাকা। ছেলের কাছ থেকে নিয়ে দিয়েছিলাম আরও ১৯ লক্ষ। বাকিটা ধার করেছিলাম। ছেলের সম্পত্তির পরিমাণ আমার ঘোষিত সম্পত্তির মধ্যে দেওয়া ছিল না।” হুমায়ুনের দাবি, ওই ১ কোটি ৩ লক্ষের মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা ফেরত পেলেও এখনও তাঁর প্রাপ্য ৮৩ লক্ষ টাকা। মন্ত্রীর কথায়, “আমি যে টাকা ধার করেছিলাম, তার জন্য পাওনাদারেরা নিয়মিত তাগাদা দিচ্ছে। সে কারণেই ওই সংস্থার কর্মী সন্তু সিংহকে ফোন করে টাকা ফেরত দিতে বলেছিলাম।” সন্তু সিংহের পাল্টা দাবি, “হুমায়ুন ঠিক কত টাকা এই সংস্থা থেকে পান, তার হিসেব তিনি দেননি। বরং তাঁর কথায় কিছু গরমিল রয়েছে।” জবাবে হুমায়ুন বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয় করার চেষ্টা হচ্ছে। রাজনৈতিক ভাবেই তার মোকাবিলা করব।” সন্তুবাবু এ দিনই বহরমপুর থানায় হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ফোনে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। |
বহরমপুরে হুমায়ুন।—নিজস্ব চিত্র |
তাঁর মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে হইচই শুরু হওয়ার পরেই ক্ষমা চান হুমায়ুন। এ দিন ফের বহরমপুর সার্কিট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ফোন করে হুমকি দিয়ে ঠিক কাজ করিনি।” হুমায়ুনের অভিযোগ, সন্তু বারবার তাঁকে ফোনে অপমানজনক কথাবার্তা বলতেন। সন্তু মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ। কংগ্রেসে থাকাকালীন বিষয়টি অধীরকে জানান হুমায়ুন। কিন্তু অধীর পদক্ষেপ না করায় তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি হুমায়ুনের।
ক্ষমা চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে হুমায়ন বলেন, “দিনের পর দিন অপমানিত হওয়ায় মাথার ঠিক রাখতে পারিনি। আমিও পাল্টা বলেছি। পরে বুঝেছি, এটা ঠিক হয়নি। আমার বক্তব্যে যাঁরা ব্যথিত হয়েছেন, তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” তিনি ক্ষমা চেয়েছেন দলের কাছেও। হুমায়ুনের কথায়, “২ জানুয়ারি ক্যাবিনেট বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানাব।” সেই সঙ্গেই
তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমায় যে নির্দেশ দেবেন, তা মাথা পেতে নেব। তিনি আমায় পদত্যাগ করতে বললে তাই করব।”
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ এখনও হুমায়ুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তৃণমূলের অন্দরের খবর, হুমায়ুনের এই আচরণ মুখ্যমন্ত্রী ও দলীয় নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখেননি। মুর্শিদাবাদের জেলা তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, “হুমায়ুনের মন্তব্য দল অনুমোদন করে না। তবে গোটা ব্যাপারটিই ওঁর ব্যক্তিগত। আগে উনি যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, শুনেছি সেখানে দেনা-পাওনা নিয়ে গোলমাল হয়েছিল।”
হুমায়ুন দাবি করেন, “বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর কাছ থেকে আমি আরও ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পাই। তাঁর নির্দেশ মেনে আমি দু’জনকে ১০ লক্ষ টাকা করে ২০ লক্ষ এবং এক জনকে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পৌঁছে দিয়েছিলাম। সেই টাকা এখনও পাইনি।” তাঁর সাফ কথা, “যতই উনি রেলমন্ত্রী হোন, ওই অর্থ আদায় করেই ছাড়ব। অধীরবাবু নিজেকে চালাক মনে করেন। কিন্তু আমিও বোকা নই। সব নথিপত্র আমার রয়েছে।”
অধীরবাবুর পাল্টা উত্তর, “চাপের মুখে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে এখন নিজের কুকীর্তি ঢাকতে, ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে আমাকে আক্রমণ করা হচ্ছে।” অধীরবাবু মনে করেন, এর পিছনে তৃণমূল নেতৃত্বের মদত রয়েছে। অধীর বলেন, “পাওনা টাকা আদায়ের জন্য হুমায়ুনের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না! তিনি প্রতারণার মামলা করতে পারতেন। সেলস ট্যাক্স ও ইনকাম ট্যাক্সের দ্বারস্থ হতে পারতেন। তিনি তা করেননি।”
অধীর বলেন, “হুমায়ুন যে কোটি কোটি টাকার মালিক, আমার জানা ছিল না। তবে তাঁর কাছ থেকে
টাকা ধার করার মতো পরিস্থিতি আমার হয়নি।”
ক্ষমা চাইলেও হুমায়ুনের বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হবে প্রদেশ কংগ্রেস। এ দিন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ক্ষমা চাইলেও হুমায়ুন যে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন, তা আইনের বিচারে দণ্ডনীয়। হুমায়ুনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে জেলা পুলিশ সুপারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” এমন মন্ত্রীকে তাঁর মন্ত্রিসভায় রাখবেন কি না তা মুখ্যমন্ত্রীর ভেবে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন দীপা দাশমুন্সি। |
|
|
|
|
|