|
|
|
|
অবসরের আগে স্কুলে অর্থসাহায্য
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
যেখানে ’৭৫ সাল থেকে পড়াচ্ছেন, অবসরের আগে তারই জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন মেদিনীপুরের তেল্যা বিদ্যাসাগর বিদ্যামন্দিরের সহ-শিক্ষক মণীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। স্কুলে স্থায়ী সাংস্কৃতিক মঞ্চ নির্মাণের ইচ্ছের কথা জানান তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে। পরিচালন সমিতির সম্মতি পেতেই শুরু হয় কাজ। ‘রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চ’ নামের ওই সাংস্কৃতিক মঞ্চ নির্মাণের কাজ আজ সম্পূর্ণ। মঞ্চ নির্মাণের সম্পূর্ণ খরচ নিজের সঞ্চিত অর্থ থেকে দান করেছেন মণীন্দ্রবাবু। আজ, শনিবার ওই সাংস্কৃতিক মঞ্চের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন রামকৃষ্ণ আশ্রম ঠাকুরবাড়ির মহারাজ স্বামী জয়ানন্দ। রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাচরায় অবস্থিত তেল্যা বিদ্যাসাগর বিদ্যামন্দির। এই পাচরাতেই দেশের বাড়ি মণীন্দ্রবাবুর। যদিও তিনি এখন মেদিনীপুরে থাকেন। মণীন্দ্রবাবু স্কুলে যোগ দেন ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি। সেই কথা উঠতেই নানা স্মৃতি ঘুরপাক খায় মনের মধ্যে । মণীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “শুরুতে মাসে ৩০ টাকা মাইনে পেতাম। ৯ বছর ধরে ওই মাইনেতেই স্কুলে পড়িয়েছি। তখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১২৫ জন।” দিন বদলেছে। বদলেছে স্কুলের পরিবেশ। শুরুতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হত। পরে এই স্কুল মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত হয়েছে। আর আজ পড়ুয়া সংখ্যা ১০৬৫ জন। |
উদ্বোধনের অপেক্ষায় রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চ।—নিজস্ব চিত্র। |
স্কুল ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কোনও স্থায়ী মঞ্চ ছিল না। ফলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান করতে গেলে মাঠে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করতে হত। না-হলে ভরসা ছিল ক্লাসঘর। অবসরের আগে নিজের সঞ্চিত অর্থে স্কুল ক্যাম্পাসে একটি স্থায়ী মঞ্চের স্বপ্ন দেখেছিলেন মণীন্দ্রবাবু। পরিচালন সমিতির অনুমতি পেতেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরির কাজ। কী ভাবে এই মঞ্চ তৈরি হবে, মঞ্চের কারুকাজ কেমন হবে, সেই সব পরিকল্পনাই মণীন্দ্রবাবুর। খরচের প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পুরোটাই দেন মণীন্দ্রবাবু নিজের সঞ্চিত অর্থ থেকে। আগামী সোমবার অবসর নেবেন মণীন্দ্রবাবু। তার আগে এই মঞ্চের উদ্বোধন হওয়ায় খুশি তিনি।
কিন্তু হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগ? মণীন্দ্রবাবু বলেন, “স্কুলে কোনও সাংস্কৃতিক মঞ্চ ছিল না। ফলে, কোনও অনুষ্ঠান করতে হলে সমস্যা হত। অবসরের আগে স্কুলের জন্য কিছু করতে চাইতাম। তা থেকেই এই মঞ্চ তৈরির ভাবনা। পরিচালন সমিতি অনুমতি দিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ। সকলের সহযোগিতা না পেলে এ কাজ করতে পারতাম না।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিতাইচাঁদ ভৌমিকের কথায়, “কৃতজ্ঞতা আমাদের নয়, ওঁনার প্রাপ্য। স্কুল ক্যাম্পাসে এমন মঞ্চ দেখে খুব ভালো লাগছে।” তিনি আরও বলেন, “উনি নিজে সংস্কৃতিমনস্ক। ছাত্রছাত্রীদেরও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ দেন। শুরুতে উনিই নিজের ইচ্ছের কথা আমাদের জানিয়েছিলেন। আমাদের সকলেরই উচিত, এ ভাবে স্কুলের জন্য কিছু করা। মণীন্দ্রনাথবাবুর এই উদ্যোগ আমরা কখনও ভুলব না। নিজের সঞ্চয় করা অর্থ থেকে স্কুলের জন্য সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি করে উনি একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন।” |
|
|
|
|
|