চালু শিবির, তবু অভাবী বিক্রি
হায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে দু’বার জেলায় এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তারপরেও ধান কেনায় গতি এল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। ফলে খোলাবাজারে কম দামে অভাবী বিক্রি চলছেই। সরকারের কাছে সাড়ে ১২০০ টাকা কুইন্টালের পরিবর্তে ১০৫০ টাকায় ফড়েদের ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা।
মেদিনীপুর সদর, শালবনি, ডেবরা, খড়্গপুর ২, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি-সহ যে ব্লকগুলিতে ইতিমধ্যেই শিবির করে ধান কেনা শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে অভাবী বিক্রি তুলনায় কম। কিন্তু যেখানে শিবির হয়নি, সেখানে আর চাষিরা কষ্ট করে চালকলে না গিয়ে স্থানীয় ফড়েদেরই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন।
ঘাটালের চাষি রাজেশ চক্রবর্তী বলেন, “প্রথম দিকে ধানের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। কুইন্টাল প্রতি ১১০০ থেকে সাড়ে ১১০০ টাকা পর্যন্ত খোলাবাজারেই দাম উঠেছিল। কিন্তু সরকারি ভাবে ধান কেনার গতি মন্থর হয়ে যাওয়ায় ব্যবায়ীরা সুবিধে পেয়ে গিয়েছে। দিন পনেরো হল দাম অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। টাকার প্রয়োজন থাকায় বাধ্য হয়েই কম দামে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।” আলু চাষ করতে গিয়ে সব টাকা খরচ করে ফেলেছেন চন্দ্রকোনার চাষি সুমন্ত হালদার। উল্টে বীজ ও সারের দোকানে ধার রয়েছে। তিনি বলেন, “কবে সরকার ধান কিনবে, সেই আশায় বসে থাকলে তো সংসার চলবে না। তাই বাধ্য হয়েই খোলাবাজারে যা দাম পাচ্ছি, তাতেই বিক্রি করে দিচ্ছি।”
সরকারি ধান কেনায় গড়িমসি
কিনবে লক্ষ্যমাত্রা কেনা হয়েছে
রাজ্য ৪০ হাজার ২ হাজার ৪৬৬
এফসিআই ৫২ হাজার ৮ হাজার ৬৩৪
ইসিএসসি ৭৫ হাজার ১ হাজার ৯২৬
বেনফেড ৩০ হাজার ১৫০
* (হিসাব মেট্রিক টনে)
এই পরিস্থিতিতে ধান কেনা নিয়ে শুক্রবারই বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। কেন ধান কেনায় এমন মন্থর গতি, তা খতিয়ে দেখা হয়। ৫ জানুয়ারি জেলায় মুখ্যমন্ত্রী আসার কথা। তার আগেই ধান কেনার কাজে গতি আনতে চায় প্রশাসন। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “এফসিআইয়ের কারণে মাঝে কিছু দিন সমস্যা হয়েছিল। তবে এ বার ধান কেনার কাজে দ্রুততা এসেছে। সমস্ত এজেন্সিও এ বার দ্রুত গতিতে ধান কেনা শুরু করবে।”
জেলাশাসকের দাবি কতটা সফল হবেতা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য রয়েই যাচ্ছে। কারণ, রাজ্য সরকার প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চালকলগুলি চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার পর চাল তৈরি করে সেই চাল বিক্রি করবে এফসিআইকে। এখনও এফসিআই গুদাম গমে ভরে রয়েছে। তাই এফসিআই চালকল থেকে চাল নিতে পারছে না। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে চলতি মাসের ২৩ তারিখে জেলাশাসক নির্দেশ দেন, রাজ্য সরকারের খাতেই চাল কেনা শুরু হবে। কিন্তু চালকল মালিকেরা রাজ্য সরকারকে চাল বিক্রি করতে নারাজ। কারণ, রাজ্য সরকারকে চাল দিলে তার টাকা পেতে কম করে ৬ মাস লাগাবে। তাই নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে ধান কিনতে রাজি হচ্ছে না চালকলগুলি। অধিকাংশ এজেন্সিই এখনও ধান কিনতে মাঠে নামেনি। ফলে জেলায় যেখানে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার কথা সেখানে ১ মাস পেরিয়ে গেলেও চাল কেনা হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন। কনফেড, এনসিসিএফের মতো এজেন্সি এখনও ধান কেনা শুরু করেনি।
জেলা রাইস মিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপস রায় বলেন, “আমরা তো ধান কিনেছি। কিন্তু তার থেকে তৈরি চাল এফসিআই বা রাজ্য সরকার না কিনলে আমরা উপর্যুপরি কিনব কী ভাবে? আমাদের তো গুদামও নেই। আবার প্রচুর ধান কেনার অর্থও সকলের নেই। তাই ধান কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ধান থেকে চাল তৈরির পর সেই চাল এফসিআই বা রাজ্য সরকারকে বিক্রি করে টাকা পেলেই আমরা আরও ধান কিনতে পারব।”
চাষিরা এত বোঝেন না। এই সময়টা হাতে টাকা থাকা তাঁদের কাছে খুবই জরুরি। আলু চাষের খরচ আছে। সঙ্গে রয়েছে পৌষপার্বণ। ধান বিক্রি করেই চাষিরা এই টাকার ব্যবস্থা করেন। সরকারেরও তা অজানা নয়। সেই জন্যই এ বার নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার কাজ শুরু করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু লাভ হয়েছে কতটা?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬৭টি শিবির করা গিয়েছে। ২ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চাল কিনতে গিয়ে চাল কিনতে পেরেছে মাত্র ১৩ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন। স্বাভাবিক ভাবেই ফড়েদের কাছে চলে যাচ্ছে চাষির ধান। পরে যখন সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় গতি আসবে, তখন আর চাষিদের কাছে ধান থাকবে না। সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে ধান কেনা শুরু করলেও শেষে দেখা যাবে মুনাফা লুঠছে ফড়েরাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.