|
|
|
|
ওয়াঘা-যুদ্ধ |
|
যুবরাজ-দিন্দা সঞ্জীবনীতে
জীবন পেল টিম ইন্ডিয়া
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • আমদাবাদ |
|
দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে জেটের গতিতে বাইশ গজের দিকে ছুটে আসছেন বিরাট কোহলি। সামনে পড়লেন ইশান্ত শর্মা, এবং কোমর জড়িয়ে কয়েক পাক নাচ!
যে পারছেন, বুকে জড়িয়ে ধরছেন বঙ্গসন্তানকে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার। হোক, আজ যত খুশি হোক। অশোক দিন্দা জীবনে কোনও দিন ভুলতে পারবেন ডিসেম্বরের শুক্রবার? দাদা আর নেই, বাইশ গজে বাংলার ‘দাদাগিরি’ও তো কত দিন দেখেনি বাঙালি! তা-ও আবার কাদের বিরুদ্ধে? না, হাফিজ-আফ্রিদিদের পাকিস্তান! তিন-তিনটে উইকেট, মুখের কথা?
হাজার-হাজার চোখ খুঁজছে তাঁকে। তাঁর শরীর। মোতেরা খুঁজছে, প্রেসবক্স খুঁজছে। নীল জার্সির ঢেউয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ ঠিক কোথায়? আরে, ওই তো যুবরাজ সিংহ...ঢাকা পড়েছেন, খোদ ভারত অধিনায়কের বুকে! আশ্চর্য! মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল না? তিনি ওখানে কী করছেন? |
|
বদলার উৎসব। |
ক্যাপ্টেন কুলের মুখে বহু দিন পর আবার হাসি। মেজাজ ফুরফুরে। একরাশ স্বস্তি, শান্তি মেশানো গলায় বলে চলেছেন, “বোলারদের কৃতিত্বটা বেশি দেব। ওরা এখন জানে কী ভাবে ডেথে বল করতে হয়। আর যুবি নিজের সেরা ফর্মে থাকলে কী হয়, সেটাও নিশ্চয়ই বোঝা গেল!” বলবেন না? দিনে দিনে তাঁর টি-টোয়েন্টির চেনা পৃথিবীও যে ভাবে কক্ষ্যচুত হয়ে পড়ছিল!
খুব সহজে, আইসিসিইউ থেকে বেরিয়ে এলেন ধোনি। পাকিস্তানের ১১ রানে জয় তাঁর সম্মানের হারানো মুকুট ফিরিয়ে দেবে না ঠিক, সিরিজ ১-১, কিন্তু কিছুটা হলেও অক্সিজেন দেবে। যা কাজে লাগবে আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজে। মোতেরার জয়কে স্বপ্নের জয় বলা যায় না। সহজে তা আসেনি। ১৯২ তুলেও বোলিংয়ে বিস্তর কাঁটার খোঁচা সহ্য করতে হয়েছে, পোড়াতে হয়েছে অনেক কাঠখড়, পাক অধিনায়ক মহম্মদ হাফিজ আর একটু থাকলে লম্ফঝম্ফটা আজও সবুজ জার্সিরই হত না, কে বলতে পারে?
কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কাছে দু’টো জীবনদায়ী ওষুধ ছিল। যা হাফিজ পাননি। একজন পঞ্জাবের। একজন বাংলার। যুবরাজ সিংহ এবং অশোক দিন্দা। নেপথ্যে এই দুই না থাকলে কিন্তু আজ জীবনের স্রোতে ফেরেন না ভারত অধিনায়ক।
নরেন্দ্র মোদীও নিশ্চয়ই সারারাত আফসোস করবেন। স্টেডিয়ামে যখন ‘হুটার’ বাজিয়ে গুজরাত মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি ঢুকছে, তার একটু আগে শেষ হয়েছে যুবরাজ-শো। যেটাকে আবার যুবি-শো-র বদলে স্বচ্ছ্বন্দে সিংহ-গর্জন বলা যায়। সিংহ, এবং আহত সিংহ।
কী রকম?
টেস্ট দল থেকে তাঁকে ‘ব্রাত্য’ রাখার গল্পটা বেশ পুরনো। বরং যুবরাজকে নতুন ‘জখম’ দিলেন যিনি, তাঁর নাম মহম্মদ ইরফান। সাত ফুটের পাক পেসারের হাত থেকে ‘ইয়র্কার’ নামক ক্ষেপণাস্ত্রের যুবরাজের পায়ে আছড়ে পড়া পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু পরের দৃশ্যটা? সেটাকে কত দূর মেলানো যায় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির সিরিজের সঙ্গে? মাঠে শুয়ে কাতরাচ্ছেন যুবরাজ, আর ইরফানের পিঠ চাপড়ে হাফিজের ‘শাবাশি’! |
|
লক্ষ্যভেদ। |
যার ট্যাক্সও দিতে হল কড়ায়-গণ্ডায়। মাত্র ৩৬ বলে ৭২, সাত-সাতটা বিশাল ছক্কাসুদ্ধ। ‘যুবি’ বলতে যতটুকু সময় লাগে, তার চেয়েও কম সময়ে এক-একটা ছক্কা ছিটকে পড়েছে মোতেরার কোলে। সৃষ্টি হয়েছে ‘যুবি...যুবি’ নামের এক শব্দব্রহ্মের, যা কান ঝালাপালা করে দিয়েছে ধারাভাষ্যকারদের। নইলে আর সঞ্জয় মঞ্জরেকরকে টুইট করতে হয়, ‘উফ, কানে ইয়ারফোন গুঁজেও কাজ হচ্ছে না। এত চিৎকার জন্মে কোথাও শুনিনি!’ শুনবেন কী ভাবে? জুম্মাবারে পাকিস্তানের কোন বোলারকে নিষ্কৃতি দিলেন যুবরাজ? আফ্রিদির এক ওভার থেকে এল ১৭! সঈদ আজমল নিয়ে বিশ্ব জুড়ে এত হইচই, তাঁর ওভারে ছয়ের ‘হ্যাটট্রিক’! দুটো ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়্যার লেগ দিয়ে, শেষটা উড়ে গেল লং অফ বাউন্ডারিকে চাঁদমারি করে। আজমল আর যা-ই হোন, সাকলাইন নন। ভারতের মাটিতে এসে এখনও দুর্ধর্ষ কিছু করে দেখাননি। বরং গিলতে হল পঁয়ত্রিশ হাজারের ক্রুদ্ধ বিদ্রুপ, ‘নেভার মেস উইথ যুবি। পায়ে মেরেছো, এ বার বোঝো!’ পাক বোলারদের উপর যুবি-ধোনির নির্মম শাসনে এক সময় মনে হচ্ছিল, ভারত বুঝি দু’শো পেরিয়ে যাবে।
তবু যা উঠেছে, সেটা নিয়ে মোটেই টি-টোয়েন্টির বাজারে অভিযোগ করা যায় না। কিন্তু যে টিমে ইশান্ত শর্মারা থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে মাপকাঠি বোধহয় অন্য রকম হয়। মোতেরার দুর্ধর্ষ ব্যাটিং ট্র্যাক, রাতের শিশিরের প্রভাব, সব রেখেই কথাটা বলতে হচ্ছে। এত দিন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ১৭৮ তাড়া করে জিতেছে পাকিস্তান। মাস দু’য়েক আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ দিন ‘ডেথ’-এ দিন্দা আসার আগে পর্যন্ত ম্যাচ দুলেছে পেন্ডুলামের মতো। হাতে ১৯২ নিয়েও! ভুবনেশ্বর কুমার রাতারাতি নায়ক থেকে খলনায়কে পর্যবসিত হয়ে যান, স্রেফ দিন্দা না থাকলে। আগের দিন ভুবনেশ্বরের হিসাব ছিল ৯ রানে তিন উইকেট। এ দিন ৪ ওভারে ৪৬ দিয়ে মাত্র একটা! |
|
ওস্তাদের মার। |
বাঙালি পেসারকে ইদানীং তাঁর ক্রমবর্ধমান কেরিয়ারগ্রাফ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে, এক দক্ষিণ আফ্রিকানের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা বেরিয়ে পড়ে বারবার। তিনি— অ্যালান ডোনাল্ড। আর ‘সাদা বিদ্যুতে’র ক্লাস করে দিন্দার উন্নতির নমুনা? ইংল্যান্ড সিরিজ ধরলে এ নিয়ে চারটে টি টোয়েন্টি ম্যাচ হল। আর মর্গ্যানের হাতে শেষ বলে ছক্কা হজম করা ছাড়া কোথাও কোনও বিপর্যয়ের গল্প নেই। উনিশ ওভারে যখন বল করতে আসছেন, তখনও হাফিজ-কামরান আছেন। দরকার ১২ বলে ২৬। পাক অধিনায়ক হাফিজের মিস টাইমড শট প্রথমে জমা হল লং অন বাউন্ডারিতে। সুরেশ রায়নার হাতে। এক বল পরে এ বার কামরান। মাত্র ৬ রান খরচ করে দু’টো। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪-০-৩৬-৩। গতি তাঁর সহজাত, কিন্তু এই দিন্দা স্লোয়ারটাও শিখেছেন। পরের পর ইয়র্কারও পড়ছে ঠিকঠাক।
নইলে আর রাতের মোতেরায় যুবরাজের গলায় বাঙালি পেসারের অকুণ্ঠ প্রশংসা ঝরে পড়ে? আমদাবাদের আকাশপথেও তো হাউইয়ের ঝাঁককে ছুটতে দেখা যায় না! |
ভারত |
গম্ভীর এলবিডব্লিউ গুল ২১
রাহানে ক ও বো গুল ২৮
বিরাট রান আউট ২৭
যুবরাজ ক শোয়েব বো গুল ৭২
ধোনি বো গুল ৩৩
রায়না ন.আ. ১
রোহিত ন.আ. ৪
অতিরিক্ত ৬
মোট ২০ ওভারে ১৯২-৫।
পতন: ৪৪, ৫৩, ৮৮, ১৮৫, ১৮৭।
বোলিং: ইরফান ৪-০-২০-০, সোহেল ৪-০-৪৪-০, গুল ৪-০-৩৭-৪,
আজমল ৪-০-৪২-০, আফ্রিদি ৩-০-৩৩-০, হাফিজ ১-০-১১-০।
|
পাকিস্তান |
জামশেদ ক বিরাট বো অশ্বিন ৪১
শেহজাদ স্টাম্পড ধোনি বো যুবরাজ ৩১
উমর বো দিন্দা ২৪
হাফিজ ক রায়না বো দিন্দা ৫৫
আফ্রিদি ক রোহিত বো ভুবনেশ্বর ১১
কামরান ক বিরাট বো দিন্দা ৫
শোয়েব ন.আ. ৩
গুল ক রাহানে বো ইশান্ত ৫
অতিরিক্ত ৬
মোট ২০ ওভারে ১৮১-৭
পতন: ৭৪, ৮৪, ১৪৬, ১৬৩, ১৬৮, ১৭২, ১৮১।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৪-০-৪৬-১, ইশান্ত ৪-০-৩৪-১, দিন্দা ৪-০-৩৬-৩,
অশ্বিন ৪-০-২৮-১, রায়না ২-০-১২-০, যুবরাজ ২-০-২৩-১। |
|
|
ছবি: উৎপল সরকার |
|
|
|
|
|