৩৬ বলে ৭২ যুবির মারকাটারি ইনিংসটার পরে একটাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে আমাদের কাছে। আজকের দিনটা টিম যুবরাজের কাছে কতটা স্পেশ্যাল? সত্যি বলব? আজকের দিনটা আমাদের জন্য স্পেশ্যাল নয়। শুনতে অদ্ভূত লাগলেও সত্যি। কারণ আমরা তো জানতামই এই দিনটা তাড়াতাড়ি আসবে। প্রথম দিন থেকেই তাই আত্মবিশ্বাসটা ছিল যে, যুবরাজ পারবে। ওর খিদে, মানসিক কাঠিন্য, অদম্য জীবনীশক্তিএগুলো টিম যুবরাজ খুব কাছ থেকে দেখেছে।
আমি নিজে সাংবাদিক ছিলাম। আমার অতীত দুনিয়া থেকে তুলনা টেনে ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করি। একজন সাংবাদিকের একটা সাধারণ দিন কী ভাবে কাটে? একটা ভাল কপি লিখে, তাই তো? যুবরাজেরও তেমন একটা সাধারণ দিন কাটে বোলারকে ছক্কা মেরে। আজও যেটা করল। এর মধ্যে অসাধারণত্ব কিছু নেই। আর পাঁচটা দিনের সঙ্গে তাই আমদাবাদের শুক্রবারের কোনও তফাত পাচ্ছি না। |
গত বছর এই সময় যুবরাজ চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার তোড়জোড় করছিল। এ বছর মার্চেও হুইলচেয়ার ছিল ওর সঙ্গী। সেখান থেকে আজকের এই দিন উফ! কী অসাধারণ জার্নি! ওই সময়ে যুবরাজ একটা কথা বারবার বলত। বলত, এক বারের জন্য হলেও আমি আবার ভারতের জার্সিটা পরে মাঠে নামতে চাই। তার জন্য কি ও কম খেটেছে? এখন যুবরাজকে দেখলেই বুঝতে পারবেন, ফিটনেসটাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে সেরা বোলিং হিসেব, তার পর এখানে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, ভারতকে তিনটে ম্যাচ জেতানো সব মিলিয়ে বছরটা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। এই পারফরম্যান্সগুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছে যুবরাজের মানসিক শক্তি। নিজের উপর ওর কতটা বিশ্বাস রয়েছে।
মাঝে অবশ্য নাগপুর এপিসোডটা ছিল। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিল যুবরাজ। কিন্তু যুবি মানুষটা কেমন জানেন? হতাশা নিয়ে ডুবে থাকতে ও কোনও দিনই পছন্দ করেনি। বর্তমানে থাকতে ভালবাসে যুবি। ফোকাসটা খুব তাড়াতাড়ি একটা জিনিস থেকে অন্য জিনিসে সরিয়ে নিতে পারে। টেস্ট দলে নিজের নাম নেই এই প্রাথমিক হতাশাটা কাটিয়ে উঠেই তাই নিজের কাছে ওর পরের প্রশ্ন ছিল, ফিরে আসার জন্য আমি কী করতে পারি? জবাবটা আপনাদের সামনে। গ্বালিয়রে রঞ্জি ম্যাচে সেঞ্চুরি। তার পর এখন টি-টোয়েন্টিতে যুবি-রাজ।
আমদাবাদের যুবি আমাদের কাছে স্পেশ্যাল না হলেও বাকি বিশ্বের কাছে নিঃসন্দেহে স্পেশ্যাল। বিশেষ করে সে সব মানুষের কাছে, যাঁরা ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই আমাকে আজ ফোন করে বলেছেন, যুবরাজের সাফল্যকে তাঁরা নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখেন। দিনের শেষে যুবরাজ শুধুমাত্র একজন ক্রিকেটার নয়। গোটা বিশ্বের কাছে আশা আর সাহসের জীবন্ত প্রতীক। ওর রানগুলো ওর একার নয়। স্রেফ সংখ্যাও নয়। ক্যানসার আক্রান্তদের মুখের হাসির উৎসও।
|
৩৬ বল ৭২ রান (বাউন্ডারি-৪, ছক্কা-৭) |
বনাম |
ইরফান ৪ বল ১ রান
তনবীর ৬ বল ১৪ রান
গুল ২ বল ০ রান
আজমল ১১ বল ২৮ রান
আফ্রিদি ৯ বল ২০ রান
হাফিজ ৪ বল ৯ রান |
|