|
|
|
|
শিল্পের পরিবেশ নিয়ে ফের প্রশ্ন |
সিঙ্গুরে নির্মীয়মাণ কারখানায় ডাকাতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সিঙ্গুর |
সিঙ্গুরে শিল্পের পরিবেশ নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল।
টাটাদের পরিত্যক্ত কারখানার জমি নিয়ে আইনি টানাপোড়েন চলছে। তার মধ্যেই ওই জমির অনতিদূরে ডাকাতি হয়ে গেল কসমিক গোষ্ঠীর একটি নির্মীয়মাণ কারখানায়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই ঘটনার পরে শঙ্কিত কারখানা কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন, এমন ঘটলে কে এখানে বিনিয়োগ করবে?
সিঙ্গুরের আজবনগরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ১৩ বিঘা জমিতে ‘কসমিক ফেরো অ্যালয়েজ লিমিটেড’ (সিআরএফ ডিভিশন) নামে রেলের যন্ত্রাংশ তৈরির ওই কারখানা গড়ে উঠছে। ১০০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের গোড়ায়। আগামী বছরের মার্চে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই ২০০ কোটি টাকা লগ্নি করা হয়ে গিয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে দাবি। |
নির্মীয়মাণ এই কারখানায় ডাকাতি হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মীয়মাণ কারখানাটিতে ৬০-৬৫ জন ঠিকাকর্মী কাজ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের সঙ্গে কারখানার অ্যাকাউন্ট্যান্ট শুভাশিস ঘোষালও ছিলেন। খাওয়া-দাওয়ার পরে চারটি ঘরে সকলে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টা নাগাদ ৩০-৩৫ জন দুষ্কৃতী পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকে। তাদের হাতে রিভলভার, তরোয়াল, ভোজালি-সহ নানা অস্ত্র ছিল। নিরাপত্তা রক্ষী শঙ্করপ্রসাদ দে-কে আগ্নেয়াস্ত্র এবং ভোজালি দেখিয়ে গেট খুলতে বাধ্য করে দুষ্কৃতীরা। তাঁকে বেধে ফেলে অন্যদের ঘুম থেকে ডেকে তোলে। সকলের মুখ সেলোটেপে এবং হাত দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমে তাঁদের পকেট থেকে টাকা বার করে নেয় দুষ্কৃতীরা। তার পরে আংটি ও চেন খুলে নেওয়া হয়। এর পরে সকলকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে শাটার নামিয়ে দিয়ে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে অবাধে লুঠপাট চালায় তারা। শেষে, ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ সঙ্গে আনা বড় ট্রাকে মালপত্র চাপিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়।
বেশ কিছু ক্ষণ পরে এক কর্মীর হাতের বাঁধন কোনও রকমে খুলে দেন অন্যেরা। একে একে সকলের হাত এবং মুখের সেলোটেপ খুলে দেওয়া হয়। এক জনের মোবাইল দুষ্কৃতীরা নিতে পারেনি। সেটির সাহায্যে খবর দেওয়া হয় সংস্থার মুখপাত্র কুলদীপ শর্মাকে। তিনি এসে কর্মীদের উদ্ধার করেন। আসে পুলিশও।
নির্মাণ চলাকালীন এ হেন ঘটনায় স্তম্ভিত সংস্থার ডিরেক্টর আদিত্য বিক্রম বিড়লা। তিনি বলেন, “বন্দুক, তরোয়াল নিয়ে ৩০-৩৫ জন ঢুকে নির্মাণ-কর্মীদের বেঁধে রেখে গায়ের জোরে অত জিনিসপত্র নিয়ে গেল। এ ঘটনা ভাবতে পারছি না।” তাঁর সংযোজন, “একটা কারখানা গড়তে হলে সকলের সহযোগিতা দরকার। আমি রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দেখা করব।” কুলদীপ অবশ্য বলেন, “এমন হলে তো এখানে কারখানা করা মুশকিল। যদি এমন ঘটে, কে এখানে বিনিয়োগ করবে?” তাঁর দাবি, প্রায় ১৩ লক্ষ টাকার লোহার সামগ্রী ও ক্যাশবাক্সে থাকা বেশ কয়েক হাজার টাকাও দুষ্কৃতীরা নিয়ে গিয়েছে।
শুভাশিসবাবু বলেন, “দুষ্কৃতীরা বন্দুক উঁচিয়ে খুনের হুমকি দেয়। মোবাইলের ব্যাটারি খুলে দিতে বলে। কয়েকটা মোবাইল ছিনিয়ে আছড়ে ভেঙে দেয়। বাকি মোবাইলগুলো নিয়ে নেয়। একটি থেকে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি মুক্ত হতে পেরেছি। না-হলে আরও দুর্গতি ছিল।” নির্মাণকর্মীরা পুলিশকে জানান, দুষ্কৃতীদের বয়স ৩০-এর নীচে। তাদের মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল। তারা বাংলা এবং হিন্দিতে কথা বলছিল।
হুগলির এসপি তন্ময় রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, পদস্থ পুলিশ কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছেন। তবে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। |
|
|
|
|
|