দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ জুড়ে শীতের দাপটের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশায় দৃশ্যমানতা ভীষণ ভাবে কমে যাওয়ায় শুক্রবারেও রেল ও বিমান পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। সকাল থেকে দেখা মেলেনি রোদের। কুয়াশা আর মেঘ আড়াল করে রেখেছিল সূর্যকে। ফলে দৃশ্যমানতা কমে যায়। সকাল থেকেই থমকে যায় বিমান, লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন। সেগুলি ছাড়তে অনেক দেরি হয়।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিমান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। সকাল সাড়ে ৭টায় কুয়াশার দাপটে দৃশ্যমানতা কমতে কমতে ৫০ মিটারের কাছাকাছি চলে আসে। ফলে আন্তর্জাতিক ও অন্তর্দেশীয় রুট মিলিয়ে ২০টি বিমান অনেক দেরিতে চলে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিমান কলকাতায় নামতে না-পেরে অন্যত্র চলে যায়। কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমান কলকাতায় নামতে পারেনি। ইন্ডিগোর একটি বিমান কলকাতার কুয়াশায় বাধা পেয়ে নাগপুরে গিয়ে নামে। এয়ার ইন্ডিয়ার পাঁচটি বিমান দেরিতে চলেছে। সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ দৃশ্যমানতা ৪০০ মিটারে পৌঁছলে ফের বিমান চলাচল শুরু হয়। |
রাজ্যের বাইরেও ঘন কুয়াশার জন্য কয়েক দিন ধরে ব্যাহত হচ্ছে বিমান ও ট্রেন চলাচল। এ দিন কুয়াশার ‘অবরোধে’ বদলে যায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের যাত্রাপথ। দুপুরে দিল্লি থেকে পটনাগামী বিমানে চাপলেও সেটি ঘন কুয়াশার জন্য পটনায় নামতে না-পেরে চলে আসে কলকাতায়। কলকাতা বিমানবন্দরে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরে কোনও বিমান না-পেয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রেনে পটনা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নীতীশ। গাড়িতে শালিমার গিয়ে পটনা যাওয়ার ট্রেন ধরেন তিনি।
ভোর থেকে ট্রেনকেও অবশ্য রেহাই দেয়নি কুয়াশা। দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, কুয়াশার জন্য এ দিন দূরপাল্লার ২২টি ট্রেন আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত দেরিতে চলেছে। হাওড়া-খড়গপুর, খড়গপুর-ভদ্রক, খড়গপুর-আদ্রা ডিভিশনে সমস্যা হয়েছে বেশি। হাওড়া-চেন্নাই, আজাদ হিন্দ, মুম্বই, সম্বলপুর, রাঁচি, পুরী, যশোবন্তপুর, জগন্নাথ এক্সপ্রেস প্রভৃতি ট্রেন দেরিতে চলে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট দেরিতে চলেছে ৩১টি ইএমইউ লোকাল।
পূর্ব রেলে সমস্যাটা আরও ঘোরালো। উত্তর ভারত জুড়ে ঘন কুয়াশার দাপট চলায় দৃশ্যমানতা কমে যায় ভীষণ ভাবে। নিরাপত্তার কারণেই কমাতে হয় ট্রেনের গতি। হাওড়ামুখী রাজধানী এক্সপ্রেস চলেছে ন’ঘণ্টা দেরিতে। কালকা মেলের দেরি হয়েছে ১৩ ঘণ্টা। অমৃতসর এক্সপ্রেস পাঁচ, ডাউন দুন এক্সপ্রেস তিন, ডাউন জোধপুর এক্সপ্রেস ১৫ ঘণ্টা দেরিতে চলে। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, তাঁরা সময়মতো ট্রেনের গতিবিধি জানতে পারছেন না। হাওড়া স্টেশনের অনুসন্ধান বিভাগের সামনে ভিড় ছিল সারা দিনই। লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীদেরও সমস্যায় ফেলে দেয় কুয়াশা। ট্রেন থমকে যাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে অনেকেরই। |