|
|
|
|
দায় বেড়েছে পরিবারে, ক্ষমতা নয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সংসার চালাচ্ছেন মহিলারাই দেশে এমন পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। সাম্প্রতিক জনগণায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১১% পরিবারে মহিলারাই বাড়ির মাথায় রয়েছেন। দেশে এই ধরনের পরিবার প্রায় ২ কোটি ৬৯ লক্ষ। এর মধ্যে ৪৩ লক্ষ বাড়িতে মহিলা একাই থাকেন। এই হিসেব থেকেই স্পষ্ট গত দশকে পুরুষ পরিচালিত পরিবারের সংখ্যা কমেছে।
আপাত ভাবে একে মহিলাদের ক্ষমতায়ন বলেই মনে করা যেতে পারত, কিন্তু তথ্যের একটু গভীরে ঢুকলেই দেখা যাচ্ছে ছবিটা আসলে উল্টো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নেহাত বাধ্য হয়েই সংসারের দায় কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে মহিলাদের। বাড়িতে বাড়িতে সমীক্ষা চালিয়ে মূলত পাঁচটি কারণ উঠে এসেছে। এক, বাড়ির পুরুষরা দীর্ঘদিনের জন্য বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন। দুই, ওই মহিলা বিধবা, বিবাহবিচ্ছিন্না অথবা স্বামী পরিত্যক্তা। তিন, বাড়ির পুরুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়েছে বা সে রোজগারের চেষ্টাকে অসম্মানজনক বলে মনে করে। চার, পুত্রসন্তান এখনও পূর্ণবয়স্ক হয়নি। পাঁচ, ছেলে বিয়ের পর আলাদা থাকছে।
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে সঙ্গে শহরের অনেক মহিলাই একা নিজের মতো থাকছেন। কারও উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না। কিন্তু গোটা দেশের ছবিটা তা নয়। রেজিস্ট্রার জেনারেল ও জনগণনা কমিশনার সি চন্দ্রমৌলির বক্তব্য, যে ৪৩ লক্ষ বাড়িতে মহিলা একাই থাকেন, তার তিন-চতুর্থাংশই গ্রামে বাস করেন। পারিবারিক আয়, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও নারী-প্রধান পরিবারগুলি যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের বাড়িগুলি ছোট। শতকরা ৪৫ ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে মাত্র একটিই ঘর। এই ধরনের ১৮ শতাংশ পরিবারে পানীয় জল আনতে আধ থেকে এক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। এই ধরনের ২৯ শতাংশ পরিবারেই স্কুটার বা গাড়ি থাকা তো দূরের কথা, রেডিও, টিভি, টেলিফোন, সাইকেলও নেই।
নারী-প্রধান পরিবারগুলির সংখ্যা বেশি লাক্ষাদ্বীপ, কেরল ও মেঘালয়ে। সেখানকার সমাজের একটা বড় অংশ অবশ্য মাতৃকূলভিত্তিক। পরিবারের মেয়ের বিয়ে হলে তাঁর স্বামী শ্বশুরবাড়িতে এসে থাকে। কিন্তু ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গুজরাতের মতো বড় রাজ্যগুলিতে নারী-প্রধান পরিবারের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি। জাতীয় হার ১১ শতাংশের থেকেও বেশি।
নারী আন্দোলনকর্মী ও গবেষক শাশ্বতী ঘোষের বক্তব্য, মহিলাদের সংসার চালানোর প্রকৃত সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি। হয় তাঁদের স্বামী রোজগারের জন্য শহরে গিয়ে নতুন সংসার পেতেছে। অথবা সে নিষ্কর্মা, রোজগারের চেষ্টা করে না। মহিলারাই রোজগার করে সংসার চালাচ্ছেন, ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন। পুরুষ থাকলেও সে নৈবেদ্যর চূড়োর মতো বসে রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের হিসেবে তৃতীয় বিশ্বে প্রতি ৩টি পরিবারের ১টিতে মহিলাদেরই সংসারের জোয়াল টানতে হয়।
জনগণনায় তাঁদের সংখ্যাটা এত কম কেন? শাশ্বতীর ব্যাখ্যা, “শহরের বস্তি এলাকায় বা গ্রামে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, আসলে মহিলারা সামাজিক লজ্জায় স্বীকার করতে চান না যে তাদের স্বামী কাজকর্ম করেন না বা সে শহরে গিয়ে আর ফেরেনি। আমি তাই ১১ শতাংশ সংখ্যাটা শুনেই বিস্মিত হচ্ছি। বাস্তবে এই সংখ্যাটা আরও বেশি।” শাশ্বতীর দাবি, মাতৃকূলভিত্তিক সমাজেও দেখা গিয়েছে পুরুষরাই পরিবারের প্রধান।
|
ভারতে নারী |
|
মোট |
গ্রাম |
শহর |
পরিবার |
২৪.৬৭ কোটি |
১৬.৭৮ কোটি |
৭.৮৯ কোটি |
শীর্ষে মহিলা |
২.৬৯ কোটি |
১.৭৪ কোটি |
৯৪ লক্ষ |
শতকরা |
১০.৯% |
১০.৪% |
১২% |
|
|
|
|
|
|