আর টালবাহানা নয়। আগামী এক মাসের মধ্যেই পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার অঙ্গীকার করল মনমোহন সিংহ সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে আজ তেলেঙ্গানা প্রশ্নে সর্বদল বৈঠক হয় দিল্লিতে। প্রত্যাশিত ভাবেই অমীমাংসিত থাকে সেই বৈঠক। কিন্তু বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দে জানিয়ে দেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার জন্য সরকার মাত্র এক মাস সময় নেবে। আশা করা যায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে সকলেরই ভাল হবে। তাই সব পক্ষ যেন শান্তি বজায় রাখেন।”
শেষমেশ কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্র? কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, পৃথক রাজ্যের দাবি মেনে নেওয়ার সম্ভাবনাই এখন বেশি। অর্ধেক ছেড়ে দিয়েও যদি বিপদ এড়ানো যায়তেলেঙ্গানা প্রশ্নে কার্যত সেই কৌশলই নিতে পারে কংগ্রেস। এত দিন পৃথক রাজ্যের দাবিদার ও তার বিরোধী, উভয় পক্ষকে অপেক্ষায় রেখে গোটা অন্ধ্রপ্রদেশে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক সামলে রাখার নীতি নিয়ে চলছিল কংগ্রেস। পর পর দু’টি লোকসভা ভোটে যে রাজ্য কংগ্রেসকে কেন্দ্রে শক্তি জুগিয়েছে, সেখানে ঝুঁকি নিতে চাননি সনিয়া গাঁধী। |
কিন্তু অন্ধ্রে এখন কংগ্রেসের নতুন করে আর হারানোর কিছু নেই। দুর্নীতির অভিযোগে জেলে থাকলেও তেলেঙ্গানা বাদ দিয়ে বাকি অন্ধ্রে এখন ওয়াইএসআর কংগ্রেস তথা জগন্মোহন রেড্ডির ঝড় চলছে। ফলে আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয় সেখানে অবধারিত। এ অবস্থায় তেলেঙ্গানাকে অন্তত নিজেদের হাতে রাখতে চায় দল। ওই অঞ্চলের ১৭টি লোকসভা আসনের ১২টি এখন কংগ্রেসের দখলে। কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, পৃথক রাজ্যের দাবি মানলে তেলেঙ্গানায় তাঁরা স্যুইপ করতে পারেন।
তেলেঙ্গানা নিয়ে কংগ্রেসের নড়ে বসার আরও কারণ রয়েছে। দশ নম্বর জনপথ ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, এর পর কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এলে পৃথক রাজ্য গঠনে তাঁরা বিন্দুমাত্র সময় নেবে না। সে ক্ষেত্রে চিরতরে গোটা অন্ধ্রপ্রদেশ হারাবে কংগ্রেস। তার থেকে বরং তেলেঙ্গানার ভোট ধরে রাখার চেষ্টা করাই ভাল। আর সেই জন্যই ধাপে ধাপে পৃথক রাজ্য গঠনের পথে এগোতে চাইছে কংগ্রেস। যাতে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের সঙ্গে তেলেঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে এবং তার পুরো ফায়দা তুলতে পারে কংগ্রেস।
এই হিসেব মাথায় রেখেই কেন্দ্র জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে। পৃথক রাজ্য গঠনের জন্য বিল পেশ হতে পারে সংসদের বাজেট অধিবেশনে। আলাদা রাজ্য গঠনের জন্য তার পরেও অন্তত ৫-৬ মাস সময় লাগবে। কংগ্রেসের এই কৌশল আঁচ করেই অসহিষ্ণু এখন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির নেতা চন্দ্রশেখর রাও এবং বিজেপি নেতৃত্ব।
চন্দ্রশেখরের আমরণ অনশনেই সংশ্লিষ্ট এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল এক সময়। এবং সেই দাবির কাছে নতি স্বীকার করেই কেন্দ্র ২০০৯-এর ৯ ডিসেম্বর পৃথক রাজ্যের দাবি মানা নিয়ে এক দফা ঘোষণা করেছিল। যদিও রাজ্যের বাকি অংশে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় পিছু হটে কেন্দ্র।
চন্দ্রশেখরের এখন আশঙ্কা, পৃথক রাজ্য গঠনের কৃতিত্ব কংগ্রেস নিয়ে গেলে তাঁর লাভের লাভ কিছু হবে না। অসহিষ্ণু টিআরএস নেতা তাই আজ সর্বদল বৈঠক থেকে বেরিয়েই বলেন, “কংগ্রেস খামোখা সময় নষ্ট করছে।” তা ছাড়া কাল তেলেঙ্গানায় বন্ধও ডেকেছেন তিনি। এ-হেন চন্দ্রশেখরকে সদলে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে সনিয়ার দল। এখনও তাঁর জবাব দেননি তিনি।
কংগ্রেসের কৌশল আঁচ করে রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেওয়ার ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিজেপি-ও। দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, কংগ্রেস সময় কেনার বুজরুকি ছাড়ুক। বরং পৃথক রাজ্য গঠনে বিল আনুক বাজেট অধিবেশনে। বিজেপি সমর্থন জানাবে। |