দ্রুত বিচার হওয়া উচিত: সনিয়া
চলছে প্রতিবাদ-ধর্না, চলছে নারী-নিগ্রহও
রাজধানীতে গণধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল দেশ। দ্রুত বিচারপর্ব সেরে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস সভানেত্রী। কিন্তু এত নিন্দা, প্রতিবাদ, কড়া শাস্তির ঘোষণাতেও ইতি পড়ছে না ধর্ষণ-শ্লীলতাহানিতে। প্রায় প্রতিদিনই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন মহিলারা। দেশের কোথাও না কোথাও। সে বেঙ্গালুরু হোক বা পাটিয়ালা।
গত শনিবার রাতে দশ জনপথে বাসভবনের বাইরে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সনিয়া গাঁধী। তার পর কংগ্রেসের ১২৭তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে আজই প্রথম দিল্লির ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। বললেন, “এক মুহূর্ত নষ্ট করা যাবে না। এমন ভয়াবহ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।” সরকারের কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারিতেও কিন্তু মোটেই থামছে না ধর্ষণের ঘটনা। গত বুধবার, ফের বাসেই চালক এবং কন্ডাক্টরের হাতে আক্রান্ত হলেন ভুটানের দুই তরুণী। শহরটা শুধু বদলে গেল। বেঙ্গালুরুতে সে দিন সকাল আটটা নাগাদ অফিস যাচ্ছিলেন দুই বোন। জানালেন, টিকিট থাকা সত্ত্বেও তাঁদের জোর করে টেনেহেঁচড়ে নামাতে যায় কন্ডক্টার। এর পর এক জনকে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে বাসের দরজা বন্ধ করে দেয় সে। বাইরে থেকে দরজা খোলার জন্য চেঁচাতে থাকেন ওই তরুণী। ইতিমধ্যে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সামনেই বোনের সঙ্গে অভব্য আচরণ করতে শুরু করে কন্ডাক্টর। বাসও চলতে শুরু করে। তরুণী জানান, উপায় না দেখে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। বাধ্য হয়ে বাস থেকে বোনকে নামিয়ে দেয় তারা।
দুই বোনের আরও অভিযোগ, এ সময় তাঁরা ১০০-য় দু’বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ হুঁ-হাঁ করলেও কোনও রকম সাহায্য করেনি। এমনকী বাসে উপস্থিত যাত্রীরাও এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ তাঁদের। পুলিশের বক্তব্য, মেয়ে দু’টি লিখিত ভাবে অভিযোগ না জানানোয় তারা এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ওই তরুণী অবশ্য বলেন, “ডিসিপি আমাকে তাঁর অফিসে যেতে বলেছিলেন। অভিযোগ জানাতেও বলেন। আশ্বাস দেন, বিচার হবেই। দেখেশুনে মনে হচ্ছে প্রশাসন নিজে থেকে কিছুই করবে না। আমাকে নিয়মমাফিক অভিযোগ নথিভুক্ত করতে হবে।” তবে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর প্রতিটি বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটন পরিবহণ নিগমকে।
আজই জানা গিয়েছে আরও বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা। গত কাল উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে রাজা তাও গ্রামে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে। আবার গত কালই মহারাষ্ট্রের দুই জেলায় দুই প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করার ঘটনা জানাজানি হয়। দিল্লিতেও ৪২ বছরের এক মহিলাকে গাড়িতে লিফট দিয়ে ধর্ষণ করে ব্যক্তি। এর পর রাস্তায় তাঁকে ফেলে দিয়ে চলে যায় অভিযুক্ত। পাটিয়ালার ঘটনা আরও মর্মান্তিক। পঞ্জাবের বাদশাহপুরে দীপাবলির রাতে ১৮ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণ করে দুই যুবক। পরে অভিযুক্তরা ধরাও পড়ে। কিন্তু অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য পুলিশের তরফে মেয়েটির কাছে বার বার চাপ আসতে থাকে বলে অভিযোগ। বলা হয়, টাকাপয়সা নিয়ে ব্যাপারটা থানার বাইরে মিটিয়ে নিতে। এমনকী এক অভিযুক্তের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হয় মেয়েটির পরিবারকে। এক মাসেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন ওই তরুণী।
মৃত্যুর আগে সংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, “দুই যুবক আমায় অপহরণ করেছিল। আমি খুব চিৎকার করি। কিন্তু কেউ শুনতে পায়নি।” এ সময় এক মহিলাকে দেখতে পান তিনি। বলেন, “ওই মহিলার কাছে সাহায্য চাই। সে আমায় সাহায্য না করে ওদেরই সাহায্য করে।” মেয়েটির মৃত্যুর পর ফের প্রকাশ্যে আসছে এই সব কথা। আজ পঞ্জাব এবং হরিয়ানা আদালত এ ঘটনা নিয়ে নিজে থেকে উদ্যোগী হয়েছে। হাইকোর্টের সামনে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে পুলিশের কাছে। ডিজিপি সুমেদ সিংহ সাইনি বলেন, “খুবই অপেশাদার ভাবে ঘটনার তদন্ত চালিয়েছিল স্থানীয় পুলিশ। উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘটনাটা আড়াল করে রাখা হয়েছিল। নতুন করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবেই।” তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে স্টেশন হাউস অফিসার এবং অন্য দুই পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ওই দুই যুবক এবং মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লির বাসে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে দু’সপ্তাহে পথে নেমেছেন গৃহবধূ থেকে ছাত্রী, সমাজসেবী সংগঠন থেকে ছেলেরাও। প্রকাশ্যে এসেছে বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশের বেধড়ক মারধর, লাঠিচার্জের ঘটনা। নিন্দাও হয়েছে বহুমহলে। পাটিয়ালা-বেঙ্গালুরুর পর ফের এক বার কাঠগড়ায় উঠল সেই পুলিশ-প্রশাসনই। দিনের শেষে যা হয়তো সনিয়ার আশ্বাস নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.