বিদ্যুতের বিল বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে বিশেষজ্ঞদের ডেকে আর এক ফ্যাসাদে পড়ল কলকাতা পুর-প্রশাসন। ত্রিফলা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এ বার ওই বাতিস্তম্ভে সিএফএল ব্যবহারে আপত্তি জানালেন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা। ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি’র (বেসু) এক অধ্যাপকের মতে, “সিএফএল পরিবেশে দূষণ ছড়ায়। তাই সমাজের সুরক্ষার কথাও ভাবা উচিত পুরসভার।” অথচ, শহর জুড়ে সব ত্রিফলা আলোই জ্বালানো হয় সিএফএল ব্যবহার করে। অন্য দিকে, সিইএসসি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলোর জন্যই বিদ্যুতের বিল বাড়ছে। আপাতত বিশেষজ্ঞদের এই দু’টি মতামতে এখন আরও বেকায়দায় পুর-প্রশাসন।
পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে দৈনিক এক কোটি টাকা বিদ্যুতের বিল ওঠায় চিন্তিত পুর-প্রশাসন। কারণ অনুসন্ধানের জন্য এনার্জি অডিট করার সিদ্ধান্ত নেন পুর-কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার যাদবপুর ও শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠকে বসেন পুর-প্রশাসন। সেখানে হাজির ছিলেন সিইএসসি-র এক পদস্থ কর্তাও। পুর-সচিবালয়ের এক পদস্থ অফিসার জানান, সেখানে বেসু-র অধ্যাপক অশোককুমার মৈত্র শহর জুড়ে সিএফএল ব্যবহারে তীব্র আপত্তি তোলেন। বৈঠকে আচমকা ওই ধরনের অভিমত উঠে আসায় অস্বস্তিতে পড়েন পুর-আধিকারিকেরা। শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিএফএল ব্যবহারের আগে কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল কি না, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও।
ত্রিফলা নিয়ে এমনিতেই ঘরে-বাইরে জেরবার পুরসভা। তার উপরে বিদ্যুতের বিল এক বছরের আগের তুলনায় মাসে ১১-১২ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছে। শুধু বিদ্যুৎ বিল বাবদ তিনশো কোটিরও বেশি টাকা পাওনা হয়েছে সিইএসসি-র। বিপুল এই বিদ্যুৎ বিল কমাতে শহরের রাস্তায় আলো জ্বালানোর সময় কমানোর কথাও ভাবছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। ত্রিফলার পাশাপাশি রাস্তায় সোডিয়াম ও মার্কারি আলো কত রাত পর্যন্ত জ্বালিয়ে বন্ধ করা যেতে পারে, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছেন পুরকর্তারা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিদ্যুতের বিল কমাতে একটি সময়ের পরে বিভিন্ন রাস্তায় আলো বন্ধ করে দেওয়া যেতেই পারে। তবে পুলিশের সঙ্গে আর এক প্রস্ত আলোচনার পরেই তা ঠিক করা যাবে।” বৃহস্পতিবারই কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পুরসভার কর্তারা। সেখানে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখে এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পেশ করা হবে।
কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে সিএফএলে? বেসুর ওই অধ্যাপক বলেন, “প্রথমত দূষণ বাড়ে। দ্বিতীয়ত, ওর মধ্যে পারদ থাকে, যা ভেঙে মাটিতে পড়ে বিষক্রিয়া হতে পারে।” তাঁর মতে, ওই ল্যাম্পের ডিসপোজাল কী ভাবে হবে, তা নিয়ে ভাবা হয় না। বিজ্ঞান মেনে ওই ধরনের ল্যাম্প ব্যবহার হয় না। তিনি বলেন, “আমাদের অভিমত ওঁরা কতটুকু মানবেন, তা জানি না। তবু যা বলার, বলে দিয়েছি।”
পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, “বিশেষজ্ঞদের অভিমত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখন এনার্জি অডিটের সঙ্গে সিএফএল ব্যবহার নিয়েও ভাবা হবে।” অন্য দিকে, এ দিনের বৈঠকে সিইএসসি-র তরফে জানানো হয়, শহরে চুরি করে বিদ্যুৎ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আটকাতে গেলেই আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুরসভাকেই উদ্যোগী হতে হবে। |