পায়ে পায়ে ২৫ বছর। ইলাহাবাদে বাংলা নাটকের উৎসবের ২৫ বছর। ডিসেম্বরের শীতে উত্তর ভারতের এই শহরের প্রবাসী বাঙালিদের কাছে এই উৎসব এখন বাঁধা পার্বণের মতোই। এই উৎসবের হাত ধরেই দায়বদ্ধ থেকে নাথবতী অনাথবৎ বা জগন্নাথ থেকে মাধব মালঞ্চী কইন্যা-র কথা তাঁদের মুখে মুখে ফেরে। এ বারও ২০ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে উৎসব। শনিবার তার শেষ দিন।
ব্রিটিশ আমল থেকেই ইলাহাবাদের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ বাঙালি। সংখ্যাটা আগের চেয়ে কমলেও স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, এখনও নয় নয় করে লাখ তিনেক বাঙালির বাস ওখানে। সেই বাঙালির দুর্গাপুজো, সেই বাঙালির কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন আর সেই বাঙালির নাটকের দল। অনুকূল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ইলাহাবাদে বাঙালির নাট্যচর্চার পুরোধা। অনুকূলের আরও একটা পরিচয় আছে। ওঁর বাবা টি কে বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এমিল মরো নামে এক ফরাসি সাহেব মিলেই ১৮৮৭ সালে রেলের হুইলার বুকস্টল চেন গড়ে তোলেন। পঞ্চাশের দশকে হুইলারের মালিকানা চলে আসে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের হাতেই। অনুকূল ছিলেন তারও কাণ্ডারী। পাশাপাশি পুরোদমে চলছিল তাঁর নাটকের কাজকর্ম। শেক্সপিয়রের রূপান্তর, বাংলা ক্লাসিক, আধুনিক বাংলা নাটক সবই। অনুকূলের মঞ্চসফল প্রযোজনার মধ্যে ওথেলো বা মার্চেন্ট অফ ভেনিস যেমন
আছে। তেমনই আছে আলমগির, ঝাঁসির রানি, অঙ্গার, কাবুলিওয়ালা বা অজেয় ভিয়েতনাম।
মীনাক্ষি গোস্বামী, স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের মতো অভিনেত্রীরা প্রথম জীবনে অনুকূলবাবুর নাটকেই অভিনয় করতেন। অনুকূলের হিন্দি নাটকে এক সময় অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চনের মা তেজি বচ্চনও।
স্বাতীলেখা আজও বলেন, “আমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটা অনুকূলবাবুর জন্যই। ওঁর কাছেই প্রথম কাজ শিখেছি। উনি ছিলেন আমার বাবার মতো।”
১৯৮০ সালে প্রয়াত হন অনুকূল। তার ঠিক এক বছর আগে কিছু উৎসাহী যুবক মিলে গড়ে তোলেন ইলাহাবাদের প্রথম স্বাধীন বাঙালি নাট্যদল, রূপকথা। আর কোনও ক্লাব বা কালচারাল আসোসিয়েশন-এর ব্যানার নয়, পুরোপুরি নাট্যদল। অনুকূল তার প্রথম প্রেসিডেন্ট। বছরখানেকের মধ্যে তিনি মারা গেলেও তার প্রেরণাকে সঙ্গে নিয়ে আজও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রূপকথা। বাংলা, হিন্দি দুই ভাষাতেই নাটক করেন ওঁরা। কলকাতাতেও অভিনয় করে গিয়েছেন। কলকাতায় মেঘনাদ ভট্টাচার্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অনুকূলের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নাট্যোৎসবও করেছেন। পাশাপাশি গত ২৫ বছর ধরে কলকাতার প্রথম সারির নাট্যদলগুলোর নিয়মিত গন্তব্য হয়ে থেকেছে ইলাহাবাদের নাট্যোৎসব। এ বার ২৫ বছর পার হল। দলের তরফে, ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অসীম মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “আগের চেয়ে সময় অনেক বদলে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা আর অনুকূলবাবুর আদর্শকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে চাই।” |