বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: দাবি যৌথ গবেষণার
তিন দশকেও ফারাক
রইল শিল্প ও গবেষণায়

ন্দিরা গাঁধী থেকে মনমোহন সিংহ, বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধনে দেশের সব প্রধানমন্ত্রীই বিজ্ঞানের সঙ্গে শিল্প সংস্থাগুলির মেলবন্ধনের কথা বলেছেন। এমনকী, শতবর্ষের অধিবেশনের মূল বিষয়ও একই ধাঁচের বলে বিজ্ঞান কংগ্রেস সূত্রে খবর। তবে গত তিন দশকে একই বিষয়ে জোর দেওয়া হলেও কতটা সাফল্য মিলেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানীরাই। শিক্ষা-শিল্প জগতের কর্তাদের একাংশ বলছেন, কাউন্সিল ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)-এর গবেষণাগারগুলির সঙ্গে শিল্প জগতের নিবিড় যোগাযোগ থাকলেও দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ততটা এগিয়ে আসতে পারেনি।
বিজ্ঞান কংগ্রেস সূত্রের খবর, তিন দশক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কংগ্রেসের অধিবেশনে বিজ্ঞানের সঙ্গে শিল্প সংস্থার আন্তঃসম্পর্কের কথা বলেন। এই বছর জানুয়ারিতে বিজ্ঞান কংগ্রেসের ৯৯-তম অধিবেশনেও একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বিশেষত, গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে জোর দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
বিজ্ঞান কংগ্রেস সূত্রের খবর, শতবর্ষে বিজ্ঞান কংগ্রেসের মূল বিষয় ‘ভবিষ্যতের ভারত নির্মাণে বিজ্ঞান’, যার মধ্যে অনেকেই পুরনো থিমের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন। বিজ্ঞান কংগ্রেসের এক সদস্য বলেন, “এ বার বিষয়টা ‘টোটাল সায়েন্স’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের মূল বিষয়গুলির উন্নতি এবং তার মাধ্যমে প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটানো।” বিজ্ঞান জগতের লোকেরা বলছেন, প্রযুক্তি মানেই তার সঙ্গে শিল্প সংস্থার যোগসাজশ থাকাটা জরুরি।
শিল্প জগতের সঙ্গে শিক্ষা-গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পর্কের বাস্তব ছবিটা কী? বিভিন্ন বণিকসভার কর্তা বলছেন, “সিএসআইআর-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গবেষণাগারে শিল্প জগতের উপযোগী কাজ হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তেমন গবেষণা মিলছে না। সেখানে বেশিরভাগই তাত্ত্বিক কাজ।” ভারত চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি অশোক আইকত বলেন, “সিএসআইআর -এর গবেষণার সুফল শিল্প জগৎ পাচ্ছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কিছুটা হলেও পিছিয়ে।” শিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গবেষণার বিষয়টিতেও জোর দিতে চাইছেন শিল্প জগতের কর্তারা। অনেকের দাবি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যা তৈরি করা হয়, তার সঙ্গে শিল্প সংস্থাগুলির চাহিদার ফারাক রয়েছে। তা-ও মাথায় রাখা উচিত।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের অবশ্য দাবি, পাঁচ-ছয় বছরে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় শিল্প জগতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়েছে। তিনি বলেন, “রেডিও ফিজিক্স, ন্যানো টেকনোলজি, কেমিক্যাল টেকনোলজির মতো বিষয়ে শিল্প সংস্থাগুলি আগ্রহ দেখাচ্ছে।” তবে এই প্রতিযোগিতায় যে কলকাতা অনেক পরে নেমেছে, তা-ও মেনে নেন উপাচার্য। তাঁর ব্যাখ্যা, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আদতে মূল বিজ্ঞানের (বেসিক সায়েন্স) উপরেই জোর দিত। আমাদের আলাদা করে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগও নেই, সে কথাও মনে রাখতে হবে।”
কিছু গবেষকের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আমলাতান্ত্রিক কাঠামো শিল্প জগতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের বক্তব্য, “সাধারণ গবেষণা প্রকল্পেও লাল ফিতের ফাঁস থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়।” অবশ্য পাল্টা দাবিও রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকদের পড়ানোর চাপ থাকে। গবেষণা করতে হলে আলাদা সময় বের করতে হয়। তাই অনেক সময়ই শিল্প সংস্থাগুলির চাহিদা মতো গবেষণা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রকল্পভিত্তিক গবেষণাও সেখানে করা কঠিন।
পাশাপাশি, বৃহত্তর গবেষণা প্রকল্পে যে শিল্প জগতের ততটা আগ্রহ না থাকার কথাটিও উঠে এসেছে। বরাহনগরের ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা বিমল রায় বলেন, “শিল্প সংস্থাগুলি মূলত প্রকল্পভিত্তিক গবেষণায় টাকা খরচ করে। তবে ইদানীং কেউ কেউ বৃহত্তর গবেষণার স্বার্থেও টাকা দিচ্ছেন।”
তা হলে শিল্প সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর উপায় কী? জোকার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট-এর (আইআইএম) শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অনুপ সিংহের মতে, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থার চাহিদায় মিল থাকা দরকার।” তিনি মনে করেন, এই দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক এক দিনে গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক কাজের মধ্যে দিয়ে তা গড়ে উঠবে।
আর এই দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের কথাতেই উঠে এসেছে যৌথ গবেষণার কথা। অর্থাৎ যে প্রকল্পে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থা, উভয়েই যুক্ত থাকবে। বণিকসভা সিআইআই-এর এক মুখপাত্র জানান, শিল্প সংস্থাগুলি ইদানীং যৌথ গবেষণা প্রকল্পের উপরেই জোর দিতে চাইছে। কেন?
গবেষক ও শিল্প কর্তারা বলছেন, গবেষণাগারে যে পণ্য তৈরি করা হয়, তার সঙ্গে বাস্তব বাজারের ফারাক থাকে। শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথ গবেষণায় সেই ফারাক দূর করা সম্ভব।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.