নিজস্ব সংবাদদাতা • নলহাটি |
সরকারি অনুষ্ঠানকে ঘিরে ফের ‘আমরা-ওরা’র অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবারই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ ব্লকে ছাত্র-যুব উৎসবকে ঘিরে রাজনীতির অভিযোগ করেছিলেন জেলার কংগ্রেস নেতৃত্ব। ঠিক তার পরের দিন বীরভূমের নলহাটি ২ ব্লকে ওই একই উৎসবকে কেন্দ্র করেই শাসকদলের বিরুদ্ধে দলতন্ত্রের অভিযোগ তুলল সিপিএম। শুক্রবারই দলের যুব সংগঠনের লোহাপুর জোনাল কমিটির পক্ষ থেকে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিডিওকে প্রতিবাদপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে। আজ, শনিবার সমগ্র অনুষ্ঠানটিই বয়কট করছে এলাকার সিপিএম নেতৃত্ব।
ডিওয়াইএফ-এর লোহাপুর জোনাল সম্পাদক আব্দুস সালামের অভিযোগ, “একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের লোকজন ছাড়া কাউকে ডাকা হয়নি। পরিচালন কমিটির পৃষ্ঠপোষকও ওই দলেরই এক নেতা। এ ভাবে একটি সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” তাঁদের দাবি, দলতন্ত্রের অভিযোগ এড়ানোর জন্য মাত্র এক জন করে সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এলাকার কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে রাখা হয়েছে কেবল ‘অতিথি’ হিসেবেই। তাঁর বক্তব্য, “যুবদের অনুষ্ঠানে যুবদের গুরুত্ব না দিয়ে এক জন ষাটোর্ধ্ব নেতাকে রাখা কি ঠিক? এটা আসলে তৃণমূলের রাজনৈতিক চাল।” সিপিএমের লোহাপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, “আমাদের প্রবীণ নেতা গোরাচাঁদ দত্তকে ওই উৎসবের কমিটিতে রাখা হয়েছে। অথচ উপেক্ষিত যুব সংগঠন। সরকারি অনুষ্ঠানে দলতন্ত্রের প্রতিবাদে আমরা দলীয় ভাবে ওই উৎসব বয়কট করছি।” প্রতিবাদে অনুষ্ঠানে যাবেন না বলে জানালেন গোরাচাঁদবাবুও।
ব্লকের ছাত্র-যুব উৎসবকে ঘিরে তৃণমূল দলতন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বও। উৎসবের ‘অতিথি’ নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের বেলাল হোসেনও কার্যত ‘বয়কট’ করছেন অনুষ্ঠান। তিনি এবং সমিতির কোনও সদস্যই ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না বলে ঠিক করেছেন। বেলালবাবুর ক্ষোভ, “সরকারি অনুষ্ঠানে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতিকেই। যাঁদের অনুষ্ঠান, সেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষকেই কমিটির মধ্যে রাখা হয়নি!” উৎসবে তাঁদের অনুপস্থিত থাকার কথা বিডিওকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন বলে দাবি করলেন বেলালবাবু। অনুষ্ঠানে না থাকার কথা জানিয়েছেন, উৎসব কমিটিতে থাকা স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মালের প্রতিনিধি এমদাদুল হকও।
নলহাটি ২ ব্লক সূত্রে খবর, উৎসবের সরকারি নিদের্শ অনুযায়ী কমিটিতে বিডিও, যুগ্ম বিডিও এবং ব্লক যুব আধিকারিক ছাড়াও যুবকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী ও বিডিও-র তিন জন করে মনোনীত প্রতিনিধি রাখা হয়। যুগ্ম বিডিও-র পদে কোনও লোক নেই, ব্লক যুব আধিকারিক পদে অন্য ব্লকের এক আধিকারিক ওই দায়িত্বে আছেন। বিডিও গঙ্গাধর দাসের দাবি, “উৎসবকে সর্বাঙ্গীণ ভাবে সুন্দর করার জন্য এলাকার সমাজসেবী ও সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত গোরাচাঁদ দত্ত এবং আর এক সমাজসেবী মহম্মদ গিয়াসউদ্দিনের নাম কমিটিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় বিধায়ক উৎসবের দিন এলাকায় থাকতে পারবেন না জানানোয় তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে থাকবেন এমদাদুল হক।” তিনি আরও জানিয়েছেন, উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য এলাকার সমস্ত ক্লাবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া অনুষ্ঠানে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে মাইকে করে প্রচারপত্র বিলি করেছেন খোদ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য মসিউর রহমান ববি। এই দাবি করে গঙ্গাধরবাবু বলেন, “সুতরাং সব দিক থেকেই সকল মানুষের সাহায্যে অনুষ্ঠান আয়োজন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে কোনও রাজনীতি করা হয়নি।”
বিডিও-র কথাতেই সুর মিলিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা দলের জেলা সহ-সভাপতি মহম্মদ গিয়াসউদ্দিনও। সিপিএমের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রথমেই তিনি বলেন, “ছাত্র-যুব উৎসব একটি সরকারি অনুষ্ঠান। কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার মাধ্যম নয়।” তাঁর যুক্তি, “উৎসব কমিটিতে যেমন সিপিএমের গোরাচাঁদ দত্তকে রাখা হয়েছে, তেমনই রাখা হয়েছে কংগ্রেস নেতা বেলাল হোসেনকেও। আর এক সিপিএম নেতা মসিউরবাবুও আছেন সেই কমিটিতে। এখানে দলতন্ত্র করার কোনও প্রশ্নই নেই।” অনুষ্ঠান বয়কট করে সিপিএম নিজেদের সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক মনোভাবকেই প্রকাশ করছে বলে তাঁর মত।
বিডিও ও গিয়াসবাবুর দাবিকে নস্যাৎ করে সিপিএমের লোহাপুর জোনাল সম্পাদক বলেন, “মসিউরবাবুকে আমাদের দল বহু দিন আগেই বহিষ্কার করেছে। পুরো অনুষ্ঠানে তৃণমূল দলের লোক ছাড়া কাউকেই গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তৃণমূল যত চেষ্টাই করুক, সাধারণ মানুষ কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারছেন কোথায় কতটুকু রাজনীতি হচ্ছে!”
|