একটি পরিত্যক্ত কুয়ো সংস্কারের সময় সার, কীটনাশক ও শস্যবীজের বেশ কয়েকটি প্যাকেট পাওয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার চাপান-উতোর তৈরি হল দুর্গাপুরের জেমুয়া গ্রামে। পঞ্চায়েত অফিসের ঠিক পাশেই রয়েছে ওই কুয়ো। পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, চাষিদের জন্য পাঠানো এই সব সামগ্রী প্রাপকদের কাছে পৌঁছে না দিয়ে পাচারের ছক কষেছেন সিপিএমের লোকজন। তৃণমূলের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত অফিসে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিপিএম অবশ্য এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর শহরের অদূরে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া পঞ্চায়েত অফিস। ৯টি আসনের সব ক’টিই সিপিএমের দখলে। পঞ্চায়েতের সীমানা পাঁচিলের পরেই রয়েছে আগাছায় ঢাকা পড়ে যাওয়া একটি পরিত্যক্ত কুয়ো। শুক্রবার পঞ্চায়েতের উদ্যোগে হরিয়ালি প্রকল্পে আগাছা পরিষ্কার করে বনসৃজনের কাজ চলছিল। তখন জানা যায়, কুয়োর মধ্যে কয়েকটি শস্যবীজ, সার এবং কীটনাশকের প্যাকেট পড়ে রয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের বাসিন্দারা ভিড় জমান। প্যাকেটগুলি কুয়ো থেকে তোলা হয়। তৃণমূল কর্মীরা অভিযোগ তোলেন, চাষিদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকার এই সমস্ত জিনিস পাঠিয়েছিল। কিন্তু তা চাষিদের হাতে না দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যেগুলি সরানো যায়নি, কুয়োয় ফেলে দেওয়া হয়েছে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “সিপিএম নেতৃত্ব মুখে চাষিদের প্রতি দরদের কথা বলে। অথচ তাদের পঞ্চায়েত চাষিদের জন্য আসা বীজ, সার, কীটনাশক হজম করে ফেলেছে।” তাঁর দাবি, প্যাকেটের উপরের লেখা থেকে জানা গিয়েছে, সেগুলি বেশ কয়েক বছরের পুরনো। স্থানীয় সিপিএম পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সৌমেন মুখোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতের তদানীন্তন সচিব জগবন্ধু পাল এবং অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শেখ আকবরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের সিপিএম দলনেতা উত্তম ঘোষ জানান, ভুল করে এক বার মেয়াদ ফুরনো কিছু সার, বীজ ও কীটনাশকের প্যাকেট এসে গিয়েছিল। তা প্রশাসনকে জানানোর পরে নতুন করে আবার সম সংখ্যক প্যাকেট পাঠানো হয়। কোনও ভাবেই যাতে মেয়াদ ফুরনো প্যাকেটগুলি কারও ক্ষতির কারণ না হয়, সে জন্যই পুরনো প্যাকেটগুলি ফেলে দেওয়া হয় পরিত্যক্ত কুয়োয়। উত্তমবাবুর দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। প্যাকেটগুলি সরিয়ে ফেলার ইচ্ছে থাকলে তা কুয়োয় ফেলে রাখা হবে কেন?” পঞ্চায়েত প্রধান দেবী রুইদাসের বক্তব্য, “উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অভিযোগ এনে আমাদের হেয় করা হচ্ছে।” সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের পাল্টা অভিযোগ, “জেমুয়া স্কুল ভোটে বাম সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও স্কুলের পরিচালন সমিতি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়। এর বদলা নিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলছে তৃণমূল।” |