পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় পঠনপাঠনে সমস্যা, চিকিৎসার যথাযথ পরিকাঠামো গড়ে না ওঠা এমনই নানা কারণে ধুঁকছে উত্তর ২৪ পরগনার পানপুরের বেলে শঙ্করপুরের বেসরকারি আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি।
কলেজ হাসপাতালটির পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করে নিয়মিত পঠনপাঠনের দাবিতে সরব হয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে কয়েক দিন ওই ছাত্রছাত্রীদের একাংশ কলেজে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ আমল দেননি, এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিন রিলে অনশন শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। সোমবার কলেজে শীতকালীন ছুটি পড়ায় সাময়িক ভাবে সেই রিলে অনশন প্রত্যাহার করা হলেও আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ, সব ক্লাস চালু করা এবং হাসপাতালের পরিকাঠামো ঠিক না হলে পরের দিন সকাল থেকে ফের আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
হাসপাতালে যে সমস্যা রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ জয়দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আচমকা ১৫ জন শিক্ষক ইস্তফা দেওয়ায় সাময়িক সমস্যা হয়েছে। তা মিটে যাবে।’’ হাসপাতালের সহকারী সম্পাদক পরেশ সরকার বলেন, ‘‘হাসপাতালের অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এটাকে দাঁড় করাতে। কিন্তু কখনও রাজনৈতিক কারণে, কখনও আর্থিক অনটনের জন্য পারছি না।’’ |
প্রায় ৩২ বিঘা জায়গা জুড়ে আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজটিতে তিনটি সেমিস্টারে সাড়ে চার বছরের স্নাতক কোর্স পড়ানো হয়। অভিযোগ, ভর্তির সময় কোর্স ফি, প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস বাবদ লক্ষাধিক টাকা নেওয়া হলেও নভেম্বর মাস থেকে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস বন্ধ। ওই মাসেই ১৫ জন শিক্ষক প্রায় পরপর সরকারি চাকরি পাওয়ায় ওই কলেজ হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেন। এতে সমস্যা প্রকট হয়। বর্তমানে আয়ুর্বেদিক কলেজটিতে প্রায় ২০০ ছাত্রছাত্রী থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১২ জন। পড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা করতে হয়। আচমকা শিক্ষক কমে যাওয়ায় মাস খানেক ধরেই ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে না হাসপাতালে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরাও ঠিকমতো পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
অভিযোগকারী ছাত্র অরিন্দম শীল বলেন, ‘‘আমরা এত টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাস করতে পারছি না। এখানে যাতায়াতের খুব অসুবিধা। প্রায়ই কলেজে এসে দেখি শিক্ষক নেই। রোগীরাও এসে বসে থাকেন। আমরা অধ্যক্ষকে বারবার জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। বাধ্য হয়েই অবস্থান বিক্ষোভ ও রিলে অনশনে বসেছিলাম। কর্তৃপক্ষ ৫ জানুয়ারির মধ্যে পরিকাঠামো পরিমার্জনের আশ্বাস দিয়েছেন। |
কথা না রাখলে ৬ জানুয়ারি থেকে আবার অনশনে বসব।’’ পানপুর কেউটিয়া পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য অজিত হাজারির আক্ষেপ, “এখানে পড়ানোর নামে ব্যবসা চলছে। মানুষের অনেক আশা ছিল এই আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালটি নিয়ে। তা পূরণ হয়নি।’’
সোমবার দুপুরে কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যক্ষের ঘরে তালা। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ তালাবন্ধ। ফাঁকা হাসপাতালের গেট অবশ্য খোলা। ভিতরে বহিরাগতদের অবাধ আনাগোনা। আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে চারদিকে। এখন দেখার, শীতকালীন ছুটি শেষের পর এই আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমস্যা মেটে কি না! |