কেন্দ্র থেকে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার থেকে কংগ্রেস বেরিয়ে আসার পরেও, এখনও রাজ্যের শ’দেড়েক গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি জোটের পরিচালনাধীন। নতুন বছরের শুরুতেই সেই জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বুধবার জানিয়েছেন, জানুয়ারিতেই তাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর কথায়, “কোন জেলায় আমরা ক’টা গ্রাম পঞ্চায়েতে ও পঞ্চায়েত সমিতিতে এখনও জোট করে চালাচ্ছি তা নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর জন্য সমস্ত জেলা কংগ্রেস সভাপতিদের নির্দেশ পাঠিয়েছি। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিতে বলেছি। জানুয়ারির শেষ দিকেই আমরা জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেব।”
পঞ্চায়েতে তৃণমূল একলা লড়বে বলে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়রা ঘোষণা করে দিয়েছেন। কংগ্রেস নেতারাও কর্মীদের একলা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলছেন। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার শিয়ালদহে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদিকা দীপা দাশমুন্সি নেতৃত্বের কাছে প্রশ্ন তোলেন, কী ভাবে এখনও অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে রয়েছে কংগ্রেস? পরে দীপা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, “আমাদের যখন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করতেই হবে, তা হলে কেন আমরা পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে জোট করে থাকব!”
পঞ্চায়েতে এখনও কেন জোট চলছে তা নিয়ে ওই বৈঠকে একাধিক নেতা প্রশ্ন তোলেন। এই প্রসঙ্গে এদিন দলের শীর্ষ নেতা ও বিধায়ক মানস ভুঁইয়া স্পষ্ট বলেন, “গত বার মালদহ, মুর্শিদাবাদ আর উত্তর দিনাজপুরে আমাদের তো ত্রিমুখী লড়াই করতে হয়েছিল। আর পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ বাকি সব জেলায় বলা হল, যেখানে আমাদের প্রার্থী নেই, সেখানে তৃণমূলকে ভোট দিতে। ফল হল, তৃণমূল ফলেফুলে ভরে গেল! তৃণমূল কিন্তু সর্বত্র আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল!” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীও বলেন, “পঞ্চায়েতে নিজস্ব প্রার্থী দাঁড় করাতে না পারলে, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে সমস্যা হবে।” প্রদীপবাবু বলেন, “ঠিকই তো। একই সঙ্গে পঞ্চায়েত চালাচ্ছি, আবার ভোটে আলাদা লড়ছি, এটা হয় না! সেই কারণেই আমরা বেরিয়ে আসছি।”
মানসবাবু জানিয়েছেন, গত বার গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪১,১৪৪ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ২০,৬০০টিতে এবং তৃণমূল ২৬,৭০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কংগ্রেস জিতেছিল ৬,৭০০ আসনে। তৃণমূল সাড়ে নয় হাজার আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ১,৪৪৭টি আসনে কংগ্রেস এবং তৃণমূল জিতেছিল ২,০১৯ আসনে। আর জেলা পরিষদে তৃণমূল ১২০টি আসনে, কংগ্রেস ৯৯টিতে জিতেছিল। কংগ্রেস মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর এবং তৃণমূল দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদে ক্ষমতা পেয়েছিল। বাকি ১৪টি জেলা পরিষদ বাম তথা সিপিএমের হাতে। প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি দেবব্রত বসু বলেন, “আমাদের প্রাথমিক হিসাবে ১৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতিতে জোট রয়েছে।”
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গ-ত্যাগকে আদৌ কোনও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের তির্যক মন্তব্য, “কংগ্রেস নেতারা ফতোয়া দিলেও ওঁদের পঞ্চায়েতে যাঁরা আছেন তাঁরা মানবেন তো? নিজেদের স্বার্থেই কংগ্রেস এখনও আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ওরা ছাড়লে আমাদের যদি চার আনা ক্ষতি হয়, ওদের ১২ আনাই চলে যাবে। মুণ্ডুই চলে যাবে! তখন খাবে টা কী!” |