সম্পাদকীয় ২...
উত্তরণের পথ
মাস্টারমহাশয় বা দিদিমণিদের ঘেরাও করিয়া ফেলকে পাশে রূপান্তরিত করিবার যে অভিযান অধুনা পশ্চিমবঙ্গে দেখা গেল, তাহা যে অন্যায়, ইহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেই অন্যায়ের নিন্দা-প্রতিবাদে একটি গোড়ার কথা যথেষ্ট স্পষ্ট করিয়া উচ্চারিত হয় নাই। এই অন্যায়ের উৎস কোথায়? সহজ উত্তর: প্রচলিত রাজনীতিতে। অন্যায় দাবি আদায় করিবার এই সহজ পথটি নেতারাই দেখাইয়াছিলেন। নাগরিক সমাজের সহিত রাজনীতির বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন সম্পর্ক এই রাজ্যে তৈরি হইয়াছে। কী ভাবে অরাজনৈতিক নাগরিক সমাজকে দলের শাখায় পরিণত করিতে হয়, সেই খেলায় বামপন্থীরা অতি দক্ষ ছিলেন। তাঁহাদের সর্বগ্রাসের প্রকল্প ছিল নাগরিক সমাজকে তাঁহারা কোন যুক্তিতে বাদ রাখিতেন? ফলে স্কুল কমিটিই হউক বা পাড়ার নাগরিক কমিটি, রক্ষী বাহিনী— নাম যাহাই হউক, নাগরিক সমাজের প্রতিটি প্রকাশের উপর পার্টির ছাপ অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছিল। ফলে নাগরিক সমাজকে রাজনৈতিক দলের শাখায় পরিণত করায় এই রাজ্যে আর নাগরিক সমাজ অবশিষ্ট থাকে নাই। বামপন্থীরা গিয়াছেন, তাঁহাদের ধর্ম যায় নাই। এই রাজ্যে যে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক ঘেরাও করিয়া পরীক্ষায় পাশ করিতে চাহিবে, তাহাতে আর আশ্চর্য কী?
এই অবক্ষয় অনিবার্য ছিল না। বস্তুত, এখনও যে ঘুরিয়া দাঁড়াইবার সুযোগ আছে, তাহা নাগরিক সমাজই স্পষ্ট করিয়া দিল। বেহালার একটি বিদ্যালয়ের অনুত্তীর্ণ ছাত্রীরাসহজ রাস্তায় হাঁটিতে মনস্থ করিয়া দরজায় তালা ঝুলাইয়া শিক্ষকদের আটক করিয়াছিল। স্থানীয় মানুষের আর সহ্য হয় নাই। তাঁহারা তালা ভাঙিয়া শিক্ষকদের উদ্ধার করিয়াছেন। বেগতিক দেখিয়া বিক্ষোভরত ছাত্রীরা এবং তাহাদের বহিরাগত সমর্থকরা চম্পট দেয়। স্থানীয় মানুষদের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ কেবল এই ছাত্রীদের বিরুদ্ধেই, ভাবিলে ভুল হইবে। যে ভাবে সমগ্র সমাজ রাজনীতির পূর্ণগ্রাসে চলিয়া যাইতেছে, তজ্জনিত হতাশা হইতেই এই প্রতিবাদের জন্ম। নাগরিক সমাজ এই ভাবেই কাজ করে। তাহা রাজনৈতিক সংগঠনের বিষয় নহে, স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতিই তাহার চালিকাশক্তি। সমাজের পক্ষে যাহা দোষণীয়, দূষণীয়, এই নাগরিক সমাজ তাহাকে চিনিতে ভুল করে না। কী ভাবে সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সম্ভব, তাহাও নাগরিক সমাজের অভ্যন্তরীণ জৈব প্রক্রিয়াতেই নির্দিষ্ট হয়। কোনওটির জন্যই রাজনৈতিক সাহায্যের প্রয়োজন নাই। বেহালায় যেমন দরকার পড়ে নাই। বস্তুত, নাগরিক সমাজের রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন নাই, প্রয়োজনটি বিপরীতমুখী। নাগরিক সমাজের অস্তিত্বকে গ্রাস করিয়া লওয়ার কাজটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি অতি দক্ষতার সহিত করিয়াছে। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলিতেছে। নাগরিক সমাজকে সতর্ক থাকিতে হইবে। কোনও দলীয় স্বার্থে যাহাতে ব্যবহৃত না হইতে হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। সচেতন, সতর্ক নাগরিক সমাজ পশ্চিমবঙ্গের অতি প্রয়োজন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.