|
|
|
|
মাঝরাতে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হল তরুণীকে |
উদ্যোগী কেন্দ্র, সঙ্গী বাবা-মা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গত দশ দিন ধরে যে মেয়েটি দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন, যাঁকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ, তাঁকে আজ রাতে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হল চিকিৎসার জন্য। উদ্দেশ্য একটাই, তাঁর অন্ত্র প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করে দেখা। ঠিক এই ভাবেই কিশোরী মালালা গুলি খাওয়ার পরে তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল পাকিস্তান সরকার। এই তরুণীর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজে উদ্যোগী হয়েছেন।
যে তরুণীকে গত কয়েক দিন ধরে কেউ ডাকছিল আমানত, কেউ নির্ভয়, কেউ দামিনী, তিনি যে-ই হোন, তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা সকাল থেকেই শুরু হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউই কিছু বলতে চাইছিলেন না। আজই প্রথম সফদরজঙ্গ হাসপাতাল থেকে মেয়েটির শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিক্যাল বুলেটিন প্রচার করা হয়নি। বরং দু’বার সময় দিয়েও সেই বুলেটিন বাতিল করা হয়। যে ডাক্তারের দল মেয়েটির চিকিৎসা করছিলেন, এ দিন দুপুরের পরে তাঁদের কাছ থেকে কোনও খবর বাইরে আসছিল না। সাধারণত, সব সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রেই মূল ডাক্তারদের দল বাদেও সাহায্যকারী একটি দল থাকে। প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করেন মূল দলের চিকিৎসকেরা। এমন একটি দল ছিল তরুণীর চিকিৎসার ক্ষেত্রেও। কিন্তু দুপুরের পর থেকে সাহায্যকারী দলের চিকিৎসকেরাও আর খবর পাচ্ছিলেন না। সন্ধ্যার পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় হাসপাতালের সামনে। তখনই জল্পনা শুরু হয়, তা হলে কি মেয়েটির গুরুতর কিছু ঘটে গিয়েছে? |
|
আরোগ্য চেয়ে। বুধবার নয়াদিল্লির রাজপথে। ছবি: এপি |
তত ক্ষণে অবশ্য অন্তরালে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। সকালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি ওঠে। অনেকেই তরুণীর স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে চান। জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ জানান, সঙ্কট এখনও কাটেনি। এর পরেই ওঠে তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ। সেই বৈঠকেই পরে সিদ্ধান্ত হয়, যদি সফদরজঙ্গের চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দেন তা হলে মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।
একটি সূত্রের দাবি, গত কালই মেয়েটির অবস্থার অবনতি হয়। রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। আজ সকাল থেকে তাঁর শরীরে সেপসিসের সংক্রমণ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ডাক্তাররা। সরকারের একটি অংশ জানাচ্ছে, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সকাল থেকেই প্রশাসনের তরফে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। মেয়েটি বা তাঁর বাবা-মা, কারও পাসপোর্ট ছিল না। দ্রুত সে সবের ব্যবস্থা করা হয়।
একটি সূত্রের দাবি, গুলাম নবি আজাদ তত ক্ষণে যোগাযোগ করেছেন সিঙ্গাপুর সরকারের সঙ্গে। কারণ, ভারতের কাছাকাছি অন্ত্র প্রতিস্থাপনের সেরা জায়গা সিঙ্গাপুরই। সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে রজনীকান্ত, অমর সিংহের প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে। রাতে সফদরজঙ্গ হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার বি ডি আথানি জানান, তরুণীকেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাউন্ট এলিজাবেথেই। একই সঙ্গে তিনি জানান, মেয়েটির এখন যা শারীরিক অবস্থা, তাতে এই ধকল তিনি নিতে পারবেন। তবে খুব বেশি দূরত্ব নিয়ে যাওয়া যাবে না তাঁকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এর মধ্যে যোগাযোগ করে গুড়গাঁওয়ে চিকিৎসক নরেশ ত্রেহানের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সঙ্গে। দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় এই হাসপাতালটিরই সব থেকে ভাল এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। |
|
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল। এখানেই পাঠানো হয়েছে নির্যাতিতাকে। |
রাত সাড়ে দশটার পরে মেয়েটিকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে সফদরজঙ্গ হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে জল্পনা ছিল, তাঁকে গুড়গাঁওয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাতে আথানি জানান সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার কথা। যাত্রাপথে চিকিৎসায় যাতে ফাঁক না থাকে, কড়া নজর রেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। যে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাতে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা ও এক জন ভেন্টিলেশন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে রাত সাড়ে এগারোটায় সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয় এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি। সেখানে নরেশ ত্রেহান ছাড়াও ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যতীন মেহতা। ছিল সফদরজঙ্গের পি কে বর্মার অধীনে একটি চিকিৎসক দলও। ছিলেন মেয়েটির বাবা-মাও।
ধর্ষণের পর রাজধানীতে যে ভাবে বিক্ষোভ বাড়তে থাকে ও শেষে হিংসার আকার নেয়, তা সরকার ঠিক মতো সামলাতে পারেনি বলে একটি বড় অংশের বক্তব্য। এ দিন তাঁরাও বলেছেন, মেয়েটি যাত্রার ধকল নিতে পারলে এটা অবশ্যই সঠিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
এই সবের মধ্যেই গোটা দেশ তাকিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথের দিকে। |
|
|
|
|
|